রাত নামলে স্টেশন জুড়ে মাদক রাজ

রাত হলে হুগলির নানা স্টেশন হয়ে ওঠে নেশার ঠেক! মদ, গাঁজা থেকে নেশার সামগ্রীর বিকিকিনি চলে দেদার। কী ভাবে? খোঁজ নিল আনন্দবাজার। আজ ত্রিবেণী।রাত হলে হুগলির নানা স্টেশন হয়ে ওঠে নেশার ঠেক! মদ, গাঁজা থেকে নেশার সামগ্রীর বিকিকিনি চলে দেদার। কী ভাবে? খোঁজ নিল আনন্দবাজার। আজ ত্রিবেণী।

Advertisement

সুশান্ত সরকার

ত্রিবেণী শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৭ ০৩:৫০
Share:

আলো-আঁধারি: ত্রিবেণী স্টেশনে তোলা নিজস্ব চিত্র

গরম হোক কিংবা সন্ধ্যা—হুগলির ত্রিবেণী স্টেশনে এক ফোনেই হাজির হয়ে যাবে ‘ভাইপো’ এবং ‘কাকা’।

Advertisement

মধ্যবয়সী ‘ভাইপো’র ভাল নাম কেউ জানে না বললেই চলে। তবে ত্রিবেণী স্টেশন চত্বরে খোঁজ করলে তাঁর ফোন নম্বর মিলবেই। তার পর ফোন করলেই হল। বিদেশি মদের ক্ষেত্রে নির্ধারিত দামের থেকে ৪০ টাকা এবং দেশি মদের ক্ষেত্রে ১০ টাকা বেশি দিলেই হাতে চলে আসবে যে কোনও ব্র্যান্ড। চাইলে চোলাইয়ের প্যাকেটও মিলবে। দাম ১০ টাকা।

শুধু মদ নয়, এই স্টেশন চত্বরে খোঁজ করলেই মেলে গাঁজা। তবে এক্ষেত্রে অবশ্য ‘ভাইপো’ নয়, ডাকতে হবে ‘কাকা’কে। এই ব্যক্তিটিরও ভাল নাম কেউ জানে না। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলেই মিলবে গাঁজার পুরিয়া।

Advertisement

ত্রিবেণী স্টেশন চত্বরে বিদ্যুতের খুঁটি থাকলেও সেগুলি জ্বলে না বললেই চলে। মদ ও গাঁজার কটূ গন্ধে ভরে ওঠে স্টেশন। আঁধার নামলেই স্টেশন চত্বরে অপরিচিত মুখের আনাগোনা বাড়ে। তাঁদের বিরুদ্ধে মহিলাদের কটূক্তির অভিযোগ উঠেছে বার বার। স্টেশনের নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, রাত যত বাড়ে, প্ল্যাটফর্ম এবং স্টেশন চত্বরে ততই জমে ওঠে মদ-গাঁজার গোপন ব্যবসা। স্টেশনের পাশে চায়ের দোকানে গভীর রাত পর্যন্ত মদের সঙ্গে খাবার জন্য ছোলা সেদ্ধ, ডিম ভুজিয়া পাওয়া যায়। স্টেশন থেকে কয়েক মিনিট হাঁটাপথে রয়েছে সরকার অনুমোদিত দেশি ও বিদেশি মদের দোকান। অনেকে আবার সেখান থেকে মদ কিনে স্টেশন চত্বরে এসে জলের বোতলে মিশিয়ে খান।

স্থানীয় বাসিন্দা ও নিত্যযাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, বছর কয়েক আগেও নিয়মিত সমাজ বিরোধীদের আড্ডা বসত ত্রিবেণী স্টেশন চত্বরে। মালগাড়ি দাঁড়ালে সেখান থেকে কয়লা চুরি ছিল রোজকার ঘটনা। আগের থেকে সমাজবিরোধীদের আনাগোনা ও কয়লা চুরি কমলেও বন্ধ হয়নি। স্টেশনের নিত্যযাত্রী রাজেশ মণ্ডলের ক্ষোভ, ‘‘সন্ধ্যা নামলেই প্ল্যাটফর্মে কিছু অপরিচিত লোক ঘোরাফেরা করে। স্টেশনের কাছেই বিক্রি হচ্ছে মদ, গাঁজা। স্টেশনের মধ্যে বিড়ি, সিগারেট পাওয়া যায়। প্রশাসন সব জেনেও কিছু ব্যবস্থা নেয় না।’’

স্টেশনে বেআইনি কাজ যাতে না হয়, তার জন্য রেল পুলিশ রয়েছে। তা সত্ত্বেও কী ভাবে নেশার আসর বসে এবং কয়লা চুরি চলে? নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, পুলিশের একাংশের সঙ্গে সমাজ বিরোধীদের একাংশের গোপন বোঝাপড়া রয়েছে। তাই অবাধে তারা ব্যবসা করছে। যদিও পুলিশ ও এবং রেল কর্তারা সেই অভিযোগ মানেনি।

পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘ত্রিবেণী স্টেশনে পর্যাপ্ত আলো এবং যাত্রী নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে আলো কেন তা জ্বলছে না সেই বিষয়ে খোঁজ নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন