রাজ্যে চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রথম টার্মের পরীক্ষা হওয়ার কথা এপ্রিলে। ইতিমধ্যেই বহু স্কুলে পরীক্ষার সূচি তৈরি হয়ে গেলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ পড়েছেন ফাঁপরে। কারণ ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির সরকারি পাঠ্যপুস্তকই এখনও পৌঁছয়নি অনেক স্কুলে। ফলে ছাত্রছাত্রীরা কী ভাবে পরীক্ষা দেবে তা নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবকেরাও।
যে দু’একটি স্কুলে পরীক্ষা হচ্ছে সেখানে আবার অন্য সমস্যা। একটি স্কুলে পরীক্ষার মাত্র দু’দিন আগে এসে পোঁছেছে ষষ্ঠ শ্রেণির ভূগোল বই। এত অল্প সময়ে কী ভাবে পরীক্ষার জন্য ছেলেমেয়েরা প্রস্তুত হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকেরা। এই অবস্থায় হাওড়ার বিভিন্ন চক্রের বহু স্কুল কর্তৃপক্ষ কার্যত দিশাহারা। বাধ্য হয়ে ভোটকে সামনে রেখে অনেক স্কুল পরীক্ষা পিছিয়ে দিলেও শেষ পর্যন্ত কী হবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই গিয়েছে।
বছর কয়েক ধরে রাজ্য শিক্ষা দফতর স্কুল পড়ুয়াদের (পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি) জন্য সরকারিভাবে বই সরবরাহ করছে। ২০১৬ শিক্ষাবর্ষে গত জানুয়ারি মাস থেকে স্কুলে স্কুলে পঠন পাঠন শুরু হয়ে গিয়েছে। তার জন্য শিক্ষা দফতর গত বছর ডিসেম্বর থেকেই স্কুলগুলিতে পাঠ্য পুস্তক পাঠাতে শুরু করে। ডিসেম্বরের মধ্যেই সব স্কুল পাঠ্য পুস্তক পেয়ে গিয়েছে বলে স্কুল ও শিক্ষা দফতর সূত্রে জানিয়ে দেওয়া হয়। অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে কোনও স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণির ভূগোল বই পৌঁছয়নি কোথাও নবম শ্রেণির পড়ুয়ারা এখনও বাংলা বই হাতে পায়নি।
জগৎবল্লভপুর দক্ষিণ চক্রের ১৬টি স্কুলের বেশিরভাগ স্কুলই নবম শ্রেণির বাংলা পাঠ্য পুস্তক পায়নি। ফলে স্কুল কর্তৃপক্ষ পরীক্ষাসূচী অনুযায়ী এপ্রিলের প্রথমে দিকে পরীক্ষা নিতে পারেননি। এই অবস্থায় পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। কী বলছে ছাত্রছাত্রীরা? বাগনান উত্তর চক্রের একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীর কথায়, ‘‘বই না পেলে কী ভাবে পড়ব। অনেক পড়া বাদ থেকে যাচ্ছে। পরীক্ষা কী ভাবে দেব জানি না।’’
স্কুলগুলির দাবি, বই চেয়ে বার বার ব্লক স্কুল পরিদর্শকের কাছে দরবার করলেও কোনও কাজ হয়নি। শিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে তাঁদের বলা হয় বই আসেনি। তাই দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বই এলে দেওয়া হবে। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বই সরবরাহের দায়িত্বে থাকা হাওড়া জেলা সর্বশিক্ষা মিশন প্রকল্পের প্রকল্প অধিকতা বোলান ভট্টাচায বলেন, ষষ্ঠ শ্রেণি ভূগোল বই ওই চক্রের সব স্কুলে পৌঁছে গিয়েছে। এখন আর কোনও সমস্যা নেই। শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নবম শ্রেণির বাংলা বই ছাপানোর কাজ চলছে। দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে।
নবম ও দশম শ্রেণির বই সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে মধ্য শিক্ষা পর্যদ। নবম শ্রেণির বাংলা বই না পাওয়ার বিষয়ে জেলা স্কুল পরিদর্শক তাপস বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি জানা ছিল না। জানার পরেই সমস্যা মেটাতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ কিন্তু এপ্রিলে পরীক্ষা হলে ছাত্রছাত্রীরা আর কবে বই পেয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবে? এই প্রশ্নের উত্তরে মুখ খুলতে রাজি হননি শিক্ষা দফতরের কর্তারা।