ফের আলুচাষি আত্মঘাতী, হিমঘরে হানা মন্ত্রীর

খানাকুল, ভাতারের পরে এ বার কালনা। ফের আত্মঘাতী হলেন রাজ্যের এক আলুচাষি। রাজ্য সরকার সহায়ক-মূল্যে আলু কেনার কথা ঘোষণা করার পরেও পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। এখনও উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ সর্বত্রই জায়গা না মেলায় হিমঘরে আলু রাখা নিয়ে চাষিরা রীতিমতো আতান্তরে। এর মধ্যেই শনিবার কালনা-১ ব্লকের সিমলন গ্রামের কোড়াপাড়ার আলুচাষি কৃষ্ণ সর্দারের (৪৫) ঝুলন্ত দেহ মিলল তাঁর বাড়িতে। তাঁর পরিবারের দাবি, এ বার আলু বিক্রি করে লাভ না হওয়ায় তিনি মনমরা ছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কালনা শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৫ ০৩:২২
Share:

শোকার্ত আত্মীয়েরা। শনিবার। ছবি: মধুমিতা মজুমদার।

খানাকুল, ভাতারের পরে এ বার কালনা।

Advertisement

ফের আত্মঘাতী হলেন রাজ্যের এক আলুচাষি। রাজ্য সরকার সহায়ক-মূল্যে আলু কেনার কথা ঘোষণা করার পরেও পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। এখনও উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ সর্বত্রই জায়গা না মেলায় হিমঘরে আলু রাখা নিয়ে চাষিরা রীতিমতো আতান্তরে।

এর মধ্যেই শনিবার কালনা-১ ব্লকের সিমলন গ্রামের কোড়াপাড়ার আলুচাষি কৃষ্ণ সর্দারের (৪৫) ঝুলন্ত দেহ মিলল তাঁর বাড়িতে। তাঁর পরিবারের দাবি, এ বার আলু বিক্রি করে লাভ না হওয়ায় তিনি মনমরা ছিলেন। সম্প্রতি মেয়ের বিয়ে দেন। তাঁর আশা ছিল, আলু বিক্রির লাভের টাকা থেকে মেয়ের বিয়ের ধার কিছুটা শোধ করবেন। তা না হওয়াতেই তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।

Advertisement

এ দিনই রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায় সিঙ্গুরের রতনপুরে আলুর মোড়ে একটি হিমঘরে হানা দেন। হিমঘরের খাতাপত্র পরীক্ষা করেন। মন্ত্রীর সঙ্গে বিভাগীয় আধিকারিকরাও ছিলেন। মন্ত্রী বলেন, “চাষিরাহিমঘরে ঠিকমতো আলু রাখতে পারছেন কি না, বন্ড পেতে কোনও রকম সমস্যা হচ্ছে কি না, তা দেখতেই এসেছি। পর্যায়ক্রমে রাজ্যের অন্য জায়গাতেও যাব।”

রাজ্য সরকার সহায়ক মূল্যে আলু কেনার কথা ঘোষণা করেছে বুধবার। তার পরে দু’দিন পেরিয়ে গিয়েছে। বিচ্ছিন্ন ভাবে কোন কোনও জায়গায় আলু কেনা শুরু হলেও সার্বিক ভাবে সেই কাজে এখনও গতি আসেনি। এ দিকে, রাজ্যে যে পরিমাণ আলু এ বার উৎপাদিত হয়েছে, তাতে হিমঘরে স্থান সঙ্কুলান বাস্তবে কার্যত অসম্ভব। রাজ্যের হিমঘরগুলিতে মোট ৭৩ লক্ষ টন আলু রাখার জায়গা রয়েছে। কিন্তু রাজ্যে এ বার আলু উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ২০ লক্ষ টন। শুক্রবারই কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর রাজ্যের আলুচাষিদের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। দিন কয়েক আগে আলুর দাম না মেলায় খানাকুল এবং ভাতারের দুই আলুচাষি আত্মঘাতী হয়েছিলেন। শুক্রবার পশ্চিম মেদিনীপুরের আনন্দপুরে এক আলুচাষির স্ত্রীর অপমৃত্যু ঘিরে শোরগোল পড়ে। পরিবারের তরফে জানানো হয়, মাঠ থেকে আলু তুলে এখনই বিক্রি করা হবে, না হিমঘরে রাখা হবে, তা নিয়ে ওই দম্পতির মধ্যে অশান্তি চলছিল।

সে ভাবে আলুর দাম না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন কালনার মৃত আলুচাষি কৃষ্ণবাবুর পরিবারের লোকজনও। তাঁরা জানান, এ বার প্রথমে বস্তাপিছু ১৬০ টাকা করে ২০ বস্তা আলু বিক্রি করেছিলেন কৃষ্ণবাবু। শুক্রবার সন্ধ্যায় আরও ২২ বস্তা আলু এলাকার একটি আড়তে বেচতে গিয়ে দেখেন, বস্তাপিছু মাত্র ১০০ টাকা দর। বাড়ি ফিরে তিনি স্ত্রীকে জানান, আলু বিক্রির টাকা পরে পাওয়া যাবে। তারপরে রাতের খাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে তাঁর দেহ মেলে।

কৃষ্ণবাবুর স্ত্রী পূর্ণিমাদেবী বলেন, “স্বামী ৭ কাঠা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। তার মধ্যে ৩ কাঠা নিজেদের। বড় মেয়ের সময় কিছু দেনা হয়েছিল। স্বামী ভেবেছিলেন, আলু বিক্রির টাকায় সেই দেনা শুধবেন। কিন্তু আলুতে দাম মেলেনি। তাতেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে স্বামী আত্মহত্যা করেন।” তৃণমূল পরিচালিত সংশ্লিষ্ট আটঘরিয়া-সিমলন পঞ্চায়েতের প্রধান মহিবুল্লা শেখ অবশ্য দাবি করেছেন, ঘটনার সঙ্গে আলু চাষের কোনও সম্পর্ক নেই। কৃষ্ণবাবু আলুচাষিই ছিলেন না। খেতমজুরি করতেন। মাস পাঁচেক ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন