রাজ্যের অন্যতম বড় সব্জি-হাটে সুবিধা দূরঅস্ত

এ তল্লাটের প্রধান পরিচিতি তাঁতের শাড়িতে। কিন্তু এখানকার বেশির ভাগ মানুষই কৃষিজীবী। কৃষিই এই জনপদের বাসিন্দাদের প্রধান জীবিকা। এখানেই রয়েছে রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সব্জির হাট— শিবাইচণ্ডী হাট। প্রতিদিন হাজার হাজার টাকার বেচাকেনা হয়। দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন।

Advertisement

প্রকাশ পাল

ধনেখালি শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৫ ০১:৫৫
Share:

এখনও এ ভাবেই চলছে বেচাকোনা। পরিকাঠামোর অভাবে চালু করা যায়নি কিসান মান্ডি (ডানদিকে)। ছবি: দীপঙ্কর দে।

এ তল্লাটের প্রধান পরিচিতি তাঁতের শাড়িতে।

Advertisement

কিন্তু এখানকার বেশির ভাগ মানুষই কৃষিজীবী। কৃষিই এই জনপদের বাসিন্দাদের প্রধান জীবিকা। এখানেই রয়েছে রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সব্জির হাট— শিবাইচণ্ডী হাট। প্রতিদিন হাজার হাজার টাকার বেচাকেনা হয়। দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন। কিন্তু রোদ-বৃষ্টিতে মাথা বাঁচানোর জায়গা মেলে না চাষি-ব্যবসায়ী বা ক্রেতা— কারও। বর্ষায় কাদার উপরেই চলে বিকিকিনি। হাটে শৌচাগার নেই। প্রকৃতির ডাক এলে মহিলাদের আড়াল খুঁজতে হয় অথবা প্ল্যাটফর্মে যেতে হয়। নেই নলকূপও। আশপাশের এলাকার নলকূপ থেকেই জল নিতে হয় সকলকে। অভাব রয়েছে পর্যাপ্ত আলোরও।

এমনই পরিকাঠামোহীন ভাবে বছরের পর বছর চলছে শিবাইচণ্ডী হাট। প্রশাসনের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই হাটের উপর। কয়েকটি জেলায় বড় বাজার বা হাটের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে রাজ্যের কৃষি বিপণন দফতরের হাতে। শিবাইচণ্ডীর ভাগ্যে সেই শিঁকে ছেড়েনি। বাম-ডান কোনও সরকারই এই হাটের পরিকাঠামো ঢেলে সাজার দিকে নজর দেননি বলে চাষিদের অভিযোগ। তাঁদের বক্তব্য, হাটে একটা শেড আছে বটে, কিন্তু সেখানে কিছু ব্যবসায়ী বসার সুযোগ পান পঞ্চায়েতকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে। চাষিদের খোলা আকাশের নীচেই দাঁড়াতে হয়।

Advertisement

অন্তত দু’দশক ধরে হাওড়া-বর্ধমান কর্ড লাইনে শিবাইচণ্ডী রেল স্টেশনের পাশে এই কাঁচা আনাজের হাট বসছে। কাকভোর থেকে পটল, কুমড়ো, ঝিঙে, পেঁয়াজের দর হাঁকা শুরু করে দেন ব্যবসায়ীরা। পাইকারির পাশাপাশি খুচরো বিক্রিও হয়। কিন্তু এত দিনেও বিপণন ব্যবস্থা তেমন আধুনিক ভাবে গড়ে উঠল কোথায়?

চাষি এবং ব্যবসায়ীদের একাংশের বক্তব্য, সরকার হস্তক্ষেপ করলে ধনেখালিতে এমন সমস্যা থাকত না। অথচ, হাটে যাতায়াতের সুবিধা রয়েছে। হাট লাগোয়া রেল স্টেশন ছাড়াও কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে এবং ১৭ নম্বর রুট। হুগলির বিভিন্ন জায়গা ছাড়াও দুর্গাপুর, আসানসোল, রানিগঞ্জ, কলকাতা, হাওড়া-সহ নানা জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা এই হাটে আনাজ কিনতে আসেন। ভোর থেকে সকালে প্রায় সাড়ে ৯টা পর্যন্ত হাট চলে। এই কয়েক ঘণ্টায় ভ্যান, মোটরভ্যান, ম্যাটাডরের আনাগোনা লেগেই থাকে। ভ্যানরিকশা থেকে শুরু করে ঠেলাগাড়ি, ট্রাকে অথবা ট্রেনে সব্জি আনা-নেওয়া চলে। ম্যাটাডর, ভ্যান, মোটরবাইক বা সাইকেলপিছু টাকা নেয় বাজার কমিটি। কিন্তু হাট পরিষ্কার করা ছাড়া পরিকাঠামো তৈরির তেমন কিছু কাজ হয় না। উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি করা গেলে এই হাট আরও জমজমাট হয়ে উঠবে বলেই ব্যবসায়ীদের অনেকে মনে করেন।

প্রায় একই কথা বলছেন চাষিরা। বেলমুড়ির চাষি গোপাল মালিক প্রতিদিন ভোরে হাটে আনাজ বিক্রি করেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের কথা ভাববে কে! জল-কাদার মধ্যেই সব্জি বেচি। বিভিন্ন বাজারের বিক্রেতারা আমাদের থেকে সব্জি কিনে নিয়ে যান। তাঁরাও এ ভাবেই কিনতে অভ্যস্ত। সরকার হস্তক্ষেপ করে হাটের পরিকাঠামো ভাল করলে আর দাম নিয়ন্ত্রণ করলে তো ভালই হয়।’’ সুশান্ত দাস নামে অন্য এক চাষির কথায়, ‘‘আমাদের দুরাবস্থার শেষ নেই। কিন্তু কী আর করা যাবে!’’

অথচ, এই হাটের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই কয়েক কোটি টাকা খরচ করে গড়ে তোলা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাধের কিসান মান্ডি। সেখানে পেল্লায় শেড থেকে শুরু করে গুদামঘর, শৌচাগার, স্নানঘর— কী নেই! তবে ঘটা করে উদ্বোধনের পরে কয়েক মাস কেটে গেলেও নীল-সাদা রঙের সেই বাজার আজও চালু হয়নি।

বাজার ব্যবস্থা নিয়ে তাই হা-হুতাশ ঘুরে ফেরে কৃষকের মুখে। চালু হাটের উন্নতির কথা না ভেবে রাজ্য সরকার যে ভাবে কিসান মান্ডিতে জোর দিয়েছে, তা নিয়ে ক্ষোভ চেপে রাখেননি অনেক চাষিই। কিসান মান্ডি কবে চালু হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তার সঙ্গে রয়েছে সেই মান্ডিতে চাষিরা আদৌ সব্জি বিক্রি করতে পারবেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্নও।

হাটের পরিকাঠামোর অভাবের কথা মেনে নিয়েছেন ধনেখালি পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সৌমেন ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘ওই হাটের জন্য আগের সরকার কিছুই করেনি। আমরা অনেক পরিকল্পনা নিয়েছি। পঞ্চায়েতের তরফে ইতিমধ্যেই কিছুটা শেড করে ভা়ড়া চুক্তিতে ব্যবসায়ীদের দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতি ওখানে আরও শেড করবে। চাষিরা কিসান মান্ডিতে গিয়েই বিক্রিবাটা করতে পারবেন। মান্ডিতে চাষিদের বসার প্রক্রিয়া চলছে।’’

একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘ট্যাপকল বসিয়ে হাটে জলের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। জেলা পরিষদের কাছে শৌচাগার তৈরির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। উঁচু টাওয়ার বসিয়ে আলো লাগানোর প্রক্রিয়া চলছে।’’ (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন