চন্দননগরে পুলিশি নজরদারি প্রশ্নে

উড়ালপুলে বাড়ছে আতঙ্ক

চালু হওয়ার পরে পেরিয়ে গিয়েছে দেড় বছরেরও বেশি সময়। কিন্তু চন্দননগর উড়ালপুলে এখনও সে ভাবে লরি-ট্রাকের দেখা নেই। যে সব গাড়ি চলে, তার চালকদের কাছেও উড়ালপুলটি দিন দিন আতঙ্কের হয়ে উঠছে।

Advertisement

তাপস ঘোষ

চন্দননগর শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৮ ০৩:২০
Share:

সুনসান: উড়ালপুলে ওঠার আগে এই অংশেই মদের আসর বসে বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র

চালু হওয়ার পরে পেরিয়ে গিয়েছে দেড় বছরেরও বেশি সময়। কিন্তু চন্দননগর উড়ালপুলে এখনও সে ভাবে লরি-ট্রাকের দেখা নেই। যে সব গাড়ি চলে, তার চালকদের কাছেও উড়ালপুলটি দিন দিন আতঙ্কের হয়ে উঠছে।

Advertisement

কয়েকদিন আগের ঘটনা। চুঁচুড়ার খাদিনা মোড় এলাকার তপন বাগ নামে এক ট্রাক-চালক কলকাতা যাওয়ার জন্য ওই উড়ালপুল ধরেন। তাঁর অভিজ্ঞতা, মাঝামঝি পৌঁছতেই দু’টি মোটরবাইকে ছয় যুবক ট্রাকের পিছু নেয়। এক জায়গায় পাশাপাশি এসে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে গাড়ি থামাতে বলে। তপন গাড়ির গতি বাড়ান। কিন্তু যুবকেরা পিছু না-ছাড়ায় আরও গতি বাড়াতে গিয়ে উড়ালপুলের শেষ প্রান্তে এসে ট্রাকের নিয়ন্ত্রণ হারান। ট্রাকটি উল্টে যায়। যুবকেরা চম্পট দেয়। তপন পুলিশে খবর দেন। কিন্তু পুলিশ এসে কাউকে ধরতে পারেনি।

চলতি মাসের গোড়ায় হরিদ্রাডাঙার একটি বরযাত্রীর গাড়ি আটকেও ছিনতাইয়ের চেষ্টা হয় ওই উড়ালপুলে। তার আগে গত ১৮ জুন রাতে কলকাতার রাসবিহারী এলাকার এক বাসিন্দা মগরায় আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ওই উড়ালপুল হয়েই ফিরছিলেন। কয়েকজন যুবক তাঁর গাড়ি আটকে টাকা দাবি করে। ঝামেলা এড়াতে কিছু টাকা দিয়ে তিনি এলাকা ছাড়েন।

Advertisement

প্রায় ৭২ কোটি টাকার ওই উড়ালপুলে পর পর এমন ঘটনায় গাড়ি-চালকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। চিন্তায় স্থানীয় বাসিন্দারাও। তাঁদের অভিযোগ, সন্ধ্যা হলেই বাইরে থেকে যুবকেরা মোটরবাইক নিয়ে উড়ালপুলে হাজির হয়ে মদের আসর বসায়। কোনও গাড়ি দেখলেই থামিয়ে তারা টাকা দাবি করে। না-পেলে মারধরও করে।

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে উড়ালপুলটি চালু হওয়ার কয়েক মাস পরেও এমন অভিযোগ উঠেছিল। পুলিশ নজরদারি বাড়ানোয় লাগাম পরেছিল তোলাবাজিতে। কিন্তু ফের সেই উপদ্রব বাড়ায় পুলিশের সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ট্রাক চালক তপন বলেন, ‘‘উড়ালপুলটি ধরলে দিল্লি রোড পৌঁছনো সহজ হয়। কিন্তু এমন ঘটনা বারবার করলে কে আর ঝুঁকি নেবে?’’ সুপ্রকাশ মণ্ডল নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘সেতুতে বাইরের যুবকদের আড্ডা বেড়ে চলেছে। সন্ধ্যার পর গাড়িও কমে যায়। ফলে, অবাধে মদের আসর বসে। ওরা ছিনতাইও করে। সেতুটা আশপাশের বাড়ির থেকে অনেকটা উঁচু হওয়ায় কারও নজরও পড়ে না। পুলিশকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।’’

কী বলছে পুলিশ?

চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘রাতে উড়ালপুলে বিশেষ টহলদারির ব্যবস্থা রয়েছে। তবে নির্জন বাগান এলাকাগুলিতে লুকিয়ে থাকা দুষ্কৃতীরা সুযোগ পেলেই ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালায়। কয়েকটি অভিযোগ পাওয়ার পরে ওই এলাকায় নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে।’’ চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, ‘‘উড়ালপুলে নজরদারির জন্য পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। পুরসভার পক্ষ থেকেও কিছু করা যায় কিনা, সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।’’

মগরা বা বৈদ্যবাটীর পরিবর্তে জিটি রোড থেকে পণ্যবাহী লরি-ট্রাক যাতে সহজে দিল্লি রোড বা দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে পৌঁছতে পারে, সে জন্যই কেএমডিএ, চন্দননগর পুরসভা এবং রেল মিলিত ভাবে চন্দননগরের ভাগাড় ধার থেকে নবগ্রাম পর্যন্ত উড়ালপুলটি তৈরি করে। তবু বেশির ভাগ পণ্যবাহী গাড়ি উড়ালপুলটি এড়িয়েই চলে। ট্রাক-চালকদের অনেকে এ জন্য আগে উড়ালপুলের গঠনগত ত্রুটির অভিযোগ তুলেছিলেন। তাঁদের মতে, উড়ালপুলটি মাত্র ১২ ফুট চওড়া। দু’টি ট্রাক পাশাপাশি গেলে সমস্যা হয়। বাঁকগুলি বিপজ্জনক। উল্টো দিক থেকে সেই সময় গাড়ি এলেও দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। যদিও পুর কর্তৃপক্ষ ওই অভিযোগ মানেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন