কী আর করব, পিটিয়েই মারছি

সাত সকালে, উঠোনময় ছড়িয়ে থাকা মুরগির পালক কিংবা শেষ রাতে হাঁসের খাঁচায় দাপাদাপি— শ্যামপুর, মালিগাছির মানুষের কাছে গা সওয়া হয়ে গিয়েছে ব্যাপারটা।

Advertisement

সুব্রত জানা

শ্যামপুর শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৩৩
Share:

খাঁচায় মৃত বাঘরোল। —নিজস্ব চিত্র।

সাত সকালে, উঠোনময় ছড়িয়ে থাকা মুরগির পালক কিংবা শেষ রাতে হাঁসের খাঁচায় দাপাদাপি— শ্যামপুর, মালিগাছির মানুষের কাছে গা সওয়া হয়ে গিয়েছে ব্যাপারটা।

Advertisement

মেছো বেড়াল বা ফিশিং ক্যাট, গ্রামের আটপৌরে মানুষের তেড়িয়া পরিভাষায় বাঘরোল। হাওড়ার বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলে এখন সাঁঝের ত্রাস।

বন দফতরের কাছে খাঁচা পাতার অনর্গল আবেদনেও সাড়া না মেলায় সহজ একটা রাস্তাও বের করে ফেলেছেন তাঁরা— খাঁতা পাতো, ধরা পড়লেই মেরে ফেলো পিটিয়ে।

Advertisement

প্রায় বিপন্ন মেছো বেড়াল তাই হাওড়ার ওই সব গাঁ-গঞ্জ থেকে হারিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়।

তা নিয়ে অবশ্য বিশেষ হেলদোল নেই হাওড়া বন বিভাগের। স্থানীয় এক বনকর্তা বলছেন, ‘‘বাঘরোলের হানার খবর যে আসে না এমনটা নয়, আসলে, প্রতি দিন তো সব গ্রামে খাঁচা পাঠানো সম্ভব নয়।’’ অতএব, নিধনের সহজ রাস্তাটা খোলাই থাকছে।

পাতুড়িয়া গ্রামের মানুষজন জানাচ্ছেন, বন বিভাগে বার বার গিয়েও তেমন সাড়া মেলেনি। তাই দিন কয়েক আগে, নিজেরাই খাঁচা কিনে তাতে বাজার থেকে নিয়ে আসা মুরগির পালক আর টুকরো-টাকরা মাংস ঝুলিয়ে ফাঁদ পেতে বসে থাকেন তাঁরা। কখনও বা আশপাশের ঝোপে পায়রা-মুরগিছানার টোপও দিয়েছেন। তার পর? সহজ হেসে পাতুরিয়ার এক মহিলা বলছেন, ‘‘কী আর করব, বন দফতর তো দেখল না, পিটিয়েই মেরে ফেলি!’’

কিলোমিটার খানেক দূরে গড়চুমুক বনদফতর আছে। রেঞ্জার উৎপল সরকার বলেন, ‘‘গ্রামের মানুষ যে বাঘরোল ধরছেন এমন খবর তো জানি না।’’ আর পঞ্চায়েত?

বেলাড়ি পঞ্চায়েত প্রধান রাধারানি প্রামাণিক বলছেন, ‘‘শুনেছি, ওখানে বাঘরোল হাঁস-মুরগি মেরে ফেলছে। তাই গ্রামের মানুষ খাঁচা করে দু’একটা বাঘরোল ধরেছে। তা বন দফতরই বা আসে না কেন!’’ এই অনুত্তরে নিশ্চুপে তাই বাঁশের গায়েই মপছে বাঘরোল। হাওড়ার খাসতালুক থেকে চুপি সারে হারিয়েই যাচ্ছে বাংলার রাজ্য পশু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন