জালে: গ্রেফতারের পর অভিযুক্তরা। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্য জুড়ে ভুয়ো ডাক্তার ধরতে তৎপরতা যখন তুঙ্গে, তখন পাঁচ ভুয়ো সিআইডি-কে গ্রেফতার করা হল।
সিআইডি পরিচয় দিয়ে উলুবেড়িয়ার মহিষালি গ্রামের এক ফার্মাসিস্টের বাড়িকে ঢুকে ভয় দেখিয়ে ৪ লক্ষ টাকা আদায়ের অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে পাঁচ জনকে ধরা হয়। উদ্ধার করা হয় ১ লক্ষ ৪১ হাজার টাকা। পাঁচ জনের মধ্যে বারাসতের বাসিন্দা প্রদীপ পাহাড়ি এবং তারকেশ্বরের জগন্নাথ রায়কে সিআইডি গ্রেফতার করে। পুলিশ গ্রেফতার করে মহিষালির শেখ আকবর, উত্তর গঙ্গারামপুরের অমিয় চক্রবর্তী এবং যদুরবেড়িয়ার কৃষ্ণ চক্রবর্তীকে। তিনটি গ্রামই উলুবেড়িয়ার।
হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ধৃতেরা দল বেঁধে কখনও রেলের অফিসার সেজে, কখনও ভিজিলেন্সের নাম করে প্রতারণা করে। এখন ভুয়ো চিকিৎসক ধরা হচ্ছে। তাই তারা সিআইডি সেজে হানা দিচ্ছে চিকিৎসক ও ফার্মাসিস্টদের কাছে। সাঁকরাইলের এক চিকিৎসক পরবর্তী শিকার ছিলেন বলে ধৃতেরা জানিয়েছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মহিষালির ওই ফার্মাসিস্টের নাম সুধাংশুকুমার মণ্ডল। তাঁর বৈধ রেজিস্ট্রেশন নম্বর আছে। বাড়ির বৈঠকখানা থেকে তিনি ওষুধ বিক্রি করেন। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি অসুস্থ। ভেলোরে তাঁকে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরিবারের লোকজন চার লক্ষ টাকা জোগাড় করেছেন। গত ৬ জুন দুপুরে ওই পাঁচ যুবক গাড়ি করে সুধাংশুবাবুর বাড়ি আসে। সরাসরি ঢুকে পড়ে বৈঠকখানায়। সুধাংশুবাবু ভিতরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। বৈঠকখানায় ছিলেন তাঁর ছেলে শুভঙ্কর।
অভিযোগ, ওই পাঁচ যুবক পরিচয়পত্র দেখিয়ে নিজেদের ‘সিআইডি অফিসার’ পরিচয় দিয়ে কাগজপত্র ঘাঁটতে থাকে। সুধাংশুবাবুর বাড়ি থেকে ওষুধ বিক্রি নিয়ে আপত্তি তোলে। তার পরে জোর করে ওই চার লক্ষ টাকা নিয়ে চলে যায়। শুভঙ্কর বলেন, ‘‘ওদের গাড়িতে সরকারি স্টিকার ছিল। ওদের কথাবার্তার ধরন দেখে প্রথমে ভয় পাই। তাই টাকা দিয়ে দিই। চূড়ান্ত ফয়সালার জন্য ওরা ভবানী ভবনে যোগাযোগ করতে বলেছিল।’’
১০ জুন ওই যুবকেরা শুভঙ্করকে ফোন করে। তিনি জানান, সে দিন ওরা ১৫ লক্ষ টাকা চায়। ১২ জুন ওই টাকা নিয়ে ভবানী ভবনের সামনে যেতে বলে। না-গেলে জেলে ঢোকানোর হুমকিও দেয়। এতেই সন্দেহ হয় শুভঙ্করের। তিনি বলেন, ‘‘কোনও অন্যায় না-করা সত্ত্বেও হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। তাই সরাসরি ভবানী ভবনে গিয়ে সিআইডিকে সব জানাতেই অফিসাররা আকাশ থেকে পড়েন। আমার থেকে ওদের ফোন নম্বর নেন। সিআইডি-র কথামতো থানায় অভিযোগ দায়ের করি।’’
সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই মঙ্গলবার যৌথ অভিযান চালায় পুলিশ ও সিআইডি। পুলিশের অনুমান, সুধাংশুবাবুর বাড়িতে যে ৪ লক্ষ টাকা ছিল, তা কোনও ভাবে জেনে গিয়েছিল মহিষালির বাসিন্দা শেখ আকবর। সেই টাকা হাতাতেই সিআইডি সেজে হানা দিয়েছিল।