পর পর বাঁধ ভাঙছে আরামবাগে

ডিভিসি জল ছাড়া অব্যাহত রাখায় নদীগুলিতে জলস্তর সে ভাবে নামছে না। আর সেই জলের চাপ সহ্য করতে না পেরে বন্যাবিধ্বস্ত আরামবাগ মহকুমায় একের পর এক নদীবাঁধ ভাঙছে বা ধসে পড়ছে। ফলে, প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বাড়ছে দুর্গতদের সংখ্যা। আর এই বাঁধ ভাঙা নিয়ে সেচ দফতরের সঙ্গে ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের চাপান-উতোরও শুরু হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আরামবাগ ও আমতা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৫ ০২:১১
Share:

কানা নদীর জল ঢুকছে জগৎবল্লভপুরে। ছবি: রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়।

ডিভিসি জল ছাড়া অব্যাহত রাখায় নদীগুলিতে জলস্তর সে ভাবে নামছে না। আর সেই জলের চাপ সহ্য করতে না পেরে বন্যাবিধ্বস্ত আরামবাগ মহকুমায় একের পর এক নদীবাঁধ ভাঙছে বা ধসে পড়ছে। ফলে, প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বাড়ছে দুর্গতদের সংখ্যা। আর এই বাঁধ ভাঙা নিয়ে সেচ দফতরের সঙ্গে ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের চাপান-উতোরও শুরু হয়েছে।
রবিবার রাতেই খানাকুল-২ ব্লকের ধান্যগোড়ি পঞ্চায়েতের ঘোড়াদহ করপাড়া সংলগ্ন রূপনারায়ণের বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় ঘোড়াদহ, কাকনান, ধান্যগোড়ি, রামচন্দ্রপুর ইত্যাদি গ্রাম। জলবন্দি ৪৫টি পরিবারকে উদ্ধার করে প্রশাসন। সোমবার ভোরেই আবার ভাঙে একই নদীর ধান্যগোড়ি গ্রাম সংলগ্ন বাঁধ। এ ছাড়া, মাড়োখানা, নতিবপুর, চিংড়া, পলাশপাই ইত্যাদি এলাকাতেও রূপনারায়ণ এবং মুণ্ডেশ্বরী নদীর অন্তত ১৫টি জায়গার বাঁধ পলকা হয়ে ভাঙতে শুরু করেছে বলে ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। একই পরিস্থিতি খানাকুল ১ ব্লক এবং আরামবাগ ব্লকেও। পুড়শুড়ার সাহাপুর গ্রাম থেকে ৯০০ মিটার দূরে মুণ্ডেশ্বরী নদীর বাঁধে ধস নেমে জল ঢোকা শুরু হয় গ্রামে। ব্লক প্রশাসন যুদ্ধকালীন তত্‌পরতায় বালির বস্তা ফেলে তা ঠেকনা দিয়েছে।
বিভিন্ন ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের অভিযোগ, সেচ দফতরের গাফিলতিতেই নদীবাঁধগুলির এই হাল। সারা বছর বাঁধের কাজ হলে এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না। সেচ দফতরের পাল্টা অভিযোগ-যে সব বাঁধ ভাঙছে, তা সেচ দফতরের নয়। পুরনো জমিদারি বাঁধ। যেগুলি সংস্কারের কথা পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদের। এটা তাদের গাফিলতি। হুগলির অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) সুমন ঘোষ অবশ্য জানিয়েছেন, সমস্ত দফতরই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করছে। বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু বাঁধ ভাঙলে সংস্কারও হবে।

Advertisement

তবে, এই আশ্বাসে গ্রামবাসীদের আতঙ্ক কাটছে না। ডিভিসি-র ছাড়া জলে দামোদর এবং মুণ্ডেশ্বরী নদীর জল ক্রমশই বাড়ছে। মুণ্ডেশ্বরী সেচ দফতরের (চাঁপাডাঙা) সহকারী বাস্তুকার আশিসকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দু’টি নদীতেই জল প্রায় চরম বিপদসীমা ছোঁয়ার মুখে। গ্রামবাসীদের সতর্ক করা হচ্ছে।’’

যথারীতি বানভাসি এলাকাগুলিতে রয়েছে ত্রাণের দাবিতে ক্ষোভ। যেমন, খানাকুল-১ ব্লকের কিশোরপুর-২ পঞ্চায়েত এলাকার মদনবাটি, গুজরাত, নিরঞ্জনবাটি, চুয়াডাঙ্গা প্রভৃতি গ্রামের মানুষের অভিযোগ, প্রধান তিন দিন ধরে পঞ্চায়েতে আসছেন না। এলাকার সব বাড়িতেই জল। কোনও ত্রাণ নেই। পানীয় জলের কল ডুবে গিয়েছে। জল আনতে নৌকা করে ৩-৪ কিমি দূরে যেতে হচ্ছে। প্রশাসন উদাসীন। বিভিন্ন জায়গায় ত্রাণ সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে মহকুমাশাসক প্রতুলকুমার বসু বলেন, ‘‘ত্রাণ কম নেই। তহবিলেরও অভাব নেই। বিডিওদের সর্বত্র নজরদারি বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’’

Advertisement

বৃষ্টি না হওয়ায় সোমবার বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে হাওড়ার আমতায়। জমা জল অল্প হলেও কমেছে। তবে, রবিবার ডিভিসি-র ছাড়া জলে উদয়নারায়ণপুরের কিছু পঞ্চায়েত প্লাবিত হয়। সোমবার দুপুরে ডিভিসি ১ লক্ষ ২০ হাজার কিউসেক জল ছাড়ে বলে সেচ দফতর সূত্রের খবর। আজ, মঙ্গলবার সকালে সেই জল হাওড়ায় এসে পৌঁছনোর কথা। এর ফলে, আরও বেশি এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে আমতা-২ ও উদয়নারায়ণপুর ব্লক প্রশাসনের আশঙ্কা। ইতিমধ্যেই এই দুই ব্লকের নিচু এলাকার বাসিন্দারা উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন। এ দিন বিকেলে দেখা যায়, আমতা-২ ব্লকের শিয়াগোড়িতে থলিয়া-বাকসি শর্টকাট চ্যানেলের সেতুতে গ্রামবাসীরা এসে বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী আস্তানা বানাচ্ছেন। বহু লোক ইট পেতে জায়গা দখল করে রেখে গিয়েছেন।

দুপুরে আমতা-১ ব্লকে কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায় ত্রাণ নিয়ে বৈঠক করেন। ত্রাণ সামগ্রীর কোনও অভাব হবে না বলে বৈঠক শেষে অরূপবাবু জানান। এ দিকে, সেচ দফতরকে চিন্তায় রেখেছে দামোদরের পূর্ব দিকে বাঁধের কিছু হানা। সেচ দফতর সারা দিন ধরে সেই সব হানায় বালির বস্তা ফেলে মেরামতের কাজ চালায়। কারণ, এই হানা থেকে বাঁধের ফাটল ধরতে পারে। তা হলে হাওড়ার শহরাঞ্চলও প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বাগনানের খাদিনানের মনসাতলায় দামোদরের বাঁধে একটি স্লুইস গেট ভেঙে যাওয়ায় সোমবার বিকেলে আতঙ্ক ছড়ায়। পরে সেই ভাঙা জায়গায় ৮০০ বালির বস্তা ফেলে ভরাট করা হয় বলে পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন