জলছবি: জলমগ্ন জয়পুর থানা (বাঁ দিকে), আপাতত এখানেই থানার কাজ (ডান দিকে)। ছবি: সুব্রত জানা।
কেউ এসে ব্লিচিং পাউডা়র চাইছেন! কেউ বাচ্চার দুধ!
কারও দাবি ত্রিপলের, তো কারও জিজ্ঞাসা, ‘‘আজ কি ডিমের ঝোল হবে?’’
এতদিন যাঁরা রাতদিন চোর-ডাকাতের পিছনে দৌড়েছেন, এফআইআর বা ডায়েরি লিখতে গিয়ে যাঁদের কলমের কালি ফুরিয়েছে— সেই জয়পুর থানার পুলিশকর্মীরা এখন অন্য ঠিকানায় অন্য কাজে ব্যস্ত! বন্যাদুর্গত মানুষের নানা চাহিদা মেটাতে হচ্ছে রাস্তার ধারে প্লাস্টিরে ছাউনি ঘেরা ‘থানা’য় বসে! আর আসল থানা ভাসছে।
দামোদর, মুণ্ডেশ্বরী এবং রামপুর খালের জলে প্লাবিত হয়েছে উদয়নারায়ণপুর এবং আমতার বিস্তীর্ণ এলাকা। গত ২৮ জুলাই জয়পুর থানা ভবন এবং আমতা-২ ব্লক অফিসও ডোবে। দু’টি জায়গা থেকেই জল এখনও বেরোয়নি। ব্লক অফিস স্থানান্তরিত হয়েছে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে বেতাইয়ে। কিন্তু থানা পুরোপুরি ছাড়তে পারেননি পুলিশকর্মীরা। দোতলায় তুলে দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। সেখানেই জনা চল্লিশ পুলিশকর্মী থাকছেন। আর অফিসটি বসানো হয়েছে ২০০ ফুট দূরে রাস্তার ধারে অস্থায়ী ছাউনিতে। পাতা হয়েছে চেয়ার-টেবিল। খাতাপত্র নিয়ে ‘ডিউটি অফিসার’ বসে কাজ করছেন। কিন্তু এ বার কাজ অন্য রকম।
থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, এখানে প্রতিদিন গড়ে একটি করে এফআইআর হয়। জেনারেল ডায়েরি হয় গড়ে ৩০টি করে। কিন্তু গত ৮ দিনে একটিও এফআইআর হয়নি। জেনারেল ডায়েরি হয়েছে হাতেগোনা। তাও-আবার বন্যা সংক্রান্ত। যেমন, ভেঙে পড়া কাঁচাবাড়ির কাঠামো চুরির নালিশ বা ভাঙা রাস্তার ইট চুরির নালিশ! ওসি দেবব্রত চক্রবর্তী জানান, ও সব নালিশেরও দ্রুত নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে দুর্গতেরা ঝগড়া করলে মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘায়ের মতো হবে।
তা হলে এখন পুলিশের এটাই কাজ? ‘‘কী বলছেন মশাই! কাজ কি কম! বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ পাঠাতে হচ্ছে। ব্লিচিং পাউডা়র, শিশুখাদ্য বিলি করতে হচ্ছে। দুর্গতদের উদ্ধারকাজ পরিচালনা করতে হচ্ছে। লঙ্গরখানা চালাতে হয়েছে।’’— বলছেন এক পুলিশকর্মী। কিন্তু পুলিশের আসল কাজে তো দৌড়ঝাঁপ কমল?
‘‘কে বলল?’’— ফের চমকে দিলেন ওই পুলিশকর্মী। তাঁর কথায়, ‘‘এর মধ্যেই ঘোড়াবেড়িয়া গ্রামের তৃণমূল নেতা শেখ শাজাহান ও তাঁর ভাইকে খুনে অভিযুক্ত দু’জনকে মুম্বই থেকে ধরে আনা হয়েছে। শনিবার তাদের আদালতে নিয়ে যাওয়া হবে।’’
ছাউনি হোক বা গাছতলা— যেখানেই থাকুক না কেন, পুলিশ যে তার আসল কাজ ভোলেনি এই দুর্যোগের মধ্যেও দুই আসামিকে গ্রেফতার তারই প্রমাণ— বলছেন জেলা পুলিশের এক কর্তা।