বিফলে: ফেলে দেওয়া হচ্ছে পচে যাওয়া ফল। ছবি: দীপঙ্কর দে
নিপার কোপ কেটেছে মাস খানেক আগে। কিন্তু তার ছাপ রয়ে গিয়েছে হুগলির হিমঘরে। শুধু নিপা নয়। মাস দুয়েক আগে আপেলের গায়ে মোমের পালিশ নিয়েও উত্তাল হয়েছিল কলকাতা-সহ গোটা রাজ্য। তারই ফলে আপেল বা অন্য ফলের চাহিদা কমেছে হু হু করে। বিপাকে পড়েছেন হিমঘরের মালিক। জীবিকা সঙ্কটে শ’খানেক স্থায়ী-অস্থায়ী কর্মীও।
হুগলির বড়বেলুর বহুমুখী হিমঘরে রাখা হয় ফল, মিষ্টি, মাছ, শাক, পচনশীল আনাজ। ২০১৩ সালে তৈরি ৬০ চেম্বারের ওই হিমঘরটি রাজ্যের অন্যতম দামি হিমঘর। মাছ, মিষ্টির মতো খাবার জমিয়ে রাখার জন্য ওখানে ব্যবহার করা হয় দামি ফিওন গ্যাস। ফলে খরচ বাড়ে।
কিন্তু গত কয়েক মাসে ওই হিমঘরে জমিয়ে রাখা ফল কার্যত ফেলে দিতে বাধ্য হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। কেন?
হিমঘর কর্তৃপক্ষের তরফে অমিত কোলে জানান, ব্যবসায়ীরা ফল রাখার সময় সামান্য কিছু টাকা দিয়ে ফল রেখে যান। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সেই ফল বের করা হয়। সে সময়ই টাকা দেন ব্যবসায়ীরা। তা দিয়েই হিমঘরের বিদ্যুৎ বিল ও অন্যান্য খরচ মেটানো হয়। এ বারও যাঁরা ফল রেখে গিয়েছেন, তাঁরা প্রাথমিক ভাবে কিছুটা টাকা দিয়ে ফল রেখে গিয়েছেন। কিন্তু মাসের পর মাস তাঁদের আর দেখা নেই। কেউ মুম্বইয়ের ব্যবসায়ী, কেউ চেন্নাইয়ের। কেউই আর ফল নিতে আসছেন না বলে দাবি অমিতের।
হিমঘরের মালিক অশোক কোলে বলেন, ‘‘মোম আর নিপার ভয়ে মাস দুই আগে থেকে অন্তত ১৫ জন ব্যবসায়ী ফল নিয়ে যেতে অস্বীকার করেছেন। আমার কয়েক কোটি টাকা ক্ষতি হয়ে গিয়েছে।’’
আমেরিকা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে জাহাজে দিল্লি, মুম্বই ও চেন্নাইয়ের ব্যবসায়ীরা খিদিরপুর দিয়ে প্রচুর ফল আনেন এই রাজ্যে। রয়েছেন কলকাতার ব্যবসায়ীরাও। সে সব মজুত করা হয় এই বহুমুখী হিমঘরে। তারপর চাহিদা অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা সেই ফল বিভিন্ন রাজ্যের বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেন। গত কয়েক মাসে সারা দেশে ফলের চাহিদা কমেছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা।
অমিতের দাবি, তাঁরা নিজেরাও লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেন ফলে। সে সবও মার খেয়েছে। এরই মধ্যে আবার আপেলের সময় হয়ে গিয়েছে। নতুন ফল ঢুকবে আর কয়েক মাসের মধ্যেই। ফলে হিমঘর ফাঁকা করাও প্রয়োজন।
কৃষিজাত পণ্য সংরক্ষণে চাষিদের সুবিধার জন্য দিল্লি রোড, জিটি রোড এবং এক্সপ্রেসওয়ে লাগায়ো জামিতে ওই হিমঘর তৈরি করা হয়। এ বছর কয়েক লক্ষ টাকার বিদ্যুৎ বিল মেটাতে তাঁদের ঋণ নিতে হয়েছে বলে দাবি করেছেন হিমঘর কর্তৃপক্ষ। এক কর্তা বলেন, ‘‘কিস্তিতে টাকা মেটানোর অনুমতি দিয়েছেন রাজ্য বিদুৎবণ্টন সংস্থার কর্তারা। কিন্তু স্থানীয় অফিস থেকে বলা হচ্ছে বিল না দিলে লাইন কেটে দেওয়া হবে। এ ভাবে কি ব্যবসা করা যায়।’’
ওই হিমঘরে ২৫ জন স্থায়ী, ৫০ জন অস্থায়ী কর্মী রয়েছেন। গত কয়েকমাসে তাঁরাও ভুগছেন অনিশ্চয়তায়। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবছেন হিমঘর কর্তৃপক্ষ। অশোকবাবু বলেন, ‘‘এরপর আমরা কী করব জানি না। কৃষি বিপণন মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। দেখি যদি কোনও সুরাহা মেলে!’’