বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা।—নিজস্ব চিত্র।
গ্রামের ইতিহাস নিয়ে বই। আর নতুন বছরের প্রথম দিন সেই বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে উচ্ছ্বাসে ভাসল হুগলির চণ্ডীতলার গরলগাছা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত এক নবতিপর ডুব দিলেন ছেলেবেলার স্মৃতিচারণে। তন্ময় হয়ে শুনল নবীন প্রজন্ম। গ্রামের নানা কাহিনী নিয়েই বই ‘গরলগাছার ইতিকথা’। বইটির সম্পাদনা করেছেন গ্রামেরই বাসিন্দা সমরেন্দ্রনাথ খাঁড়া। তিনি জানান, গ্রামের জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে বর্তমানের নানা গল্প স্থান পেয়েছে বইতে। রয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গ্রামের কৃতি সন্তানদের কথা। বিজ্ঞানচর্চা, চিকিৎসা ব্যবস্থা, যাত্রা ও নাট্যচর্চা, সঙ্গীতচর্চা নিয়েও আলোকপাত করা হয়েছে বইতে।
নববর্ষের বিকেলে পাবলিক লাইব্রেরির মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বইটি প্রকাশ করেন রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল শ্যামল সেন। উপস্থিত ছিলেন হুগলি জেলা পরিষদের সভাধিপতি মেহবুব রহমান, উত্তরপাড়ার বিধায়ক অনুপ ঘোষাল প্রমুখ। সন্ধ্যায় ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ‘গরলগাছার ইতিকথা প্রকাশনা কমিটি’র সম্পাদক সমরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, নব্বই পেরনো গ্রামবাসী মনোরঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়কে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বই প্রকাশ উপলক্ষে গত ১২ এপ্রিল এক শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল। ট্যাবলো সহকারে মার্টিন রেল, ঘেঁটুগান, তরজা, গাজন, চড়কের সঙ নিয়ে বর্ণময় শোভাযাত্রায় সামিল হয়েছিলেন কয়েকশো গ্রামবাসী।
গ্রামবাসীদের বক্তব্য, সরস্বতী নদীর ধারে বর্ধিষ্ণু গরলগাছা গ্রামের ইতিহাসের সরণীতে কম মণিমুক্তো ছড়ানো নেই! ১৮৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। ’৫৮ সালে বিএ পাশ করেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও যদুনাথ বসু। পরের বছর স্নাতক হন এই গ্রামেরই শ্যামচরণ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি রাজা প্যারীমোহন কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ‘রায়চাঁদ প্রেমচাঁদ’ বৃত্তি পেয়েছিলেন গরলগাছারই সন্তান আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। পরে আরও দু’জন এই বৃত্তি পান। ১৮৩৪ সালে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হন মন্মথনাথ মুখোপাধ্যায়। শতবর্ষ পার হয়ে এগিয়ে চলেছে গরলগাছা পাবলিক লাইব্রেরি।