আলোচনা: দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে আরামবাগে কর্মিসভা দিলীপের। ছবি: মোহন দাস
ভোটের ফল আশানুরূপ হয়নি। কঠিন পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়াতে এক দলের শ্রেণির নেতা-কর্মীকে ‘চলন-বলন’ বদলানোর ‘পরামর্শ’ দিলেন হুগলি জেলা তৃণমূলের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত আহ্বায়ক দিলীপ যাদব।
দলীয় সংগঠন ঢেলে সাজতে শনিবার হুগলিতে রত্না দে নাগকে চেয়ারপার্সন ঘোষণা করেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিলীপ-সহ তিন জনকে আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়। অরূপ বিশ্বাসের পরিবর্তে এই জেলায় পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পান কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। রাতেই ফোনে দিলীপের সঙ্গে ফিরহাদের কথা হয়। এর পরেই রবিবার আরামবাগ রবীন্দ্রভবনে গিয়ে কর্মিসভা করেন দিলীপ।
সেখানে সংবাদমাধ্যমকে থাকতে দেওয়া হয়নি। তৃণমূল সূত্রের খবর, বৈঠকে কড়া ভাষায় দলের এক শ্রেণির নেতা-কর্মীর ভাবমূর্তি নিয়ে বার্তা দেন দিলীপবাবু। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘মোটা সোনার চেন, দামি ব্র্যান্ডের জুতো, আর মানুষের উপর চোখ তুলে কথা বলা— এই সব করে যাঁরা দল করা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁদের বলছি, অনেক হয়েছে, আর নয়। আমাদের দল ভোটের শতাংশের হারে রাজ্যে এখনও প্রথম। সাবধান হওয়ার সময় আছে। না হলে দরজা খোলা। আসতে পারেন।’’
ওই সভায় সাংসদ অপরূপা পোদ্দার, গোঘাটের বিধায়ক মানস মজুমদার, আরামবাগের বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা, পুরপ্রধান স্বপন নন্দীরা উপস্থিত ছিলেন। দলের সব স্তরের নেতা-কর্মীদের বক্তব্য শোনা হয়। তৃণমূলের অন্দরের খবর, অনেকেই ধনেখালির বিধায়ক অসীমা পাত্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। অভিযোগ ওঠে, দলীয় প্রার্থীকে জেতানোর জন্য জন্য দলের কিছু নেতা এবং তাঁদের দলবলের আন্তরিকতার অভাব ছিল।
কিছু জায়গায় দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব চিন্তায়। গোঘাটে শেখ ফরিদ এবং শেখ আতাউলের গোষ্ঠীবিবাদ নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনও জেরবার। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ভুলে কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার বার্তা দেওয়া হয় দলীয় নেতৃত্বের তরফে।
শনিবার মমতা যখন সংগঠনে রদবদলের সিদ্ধান্তের কথা জানাচ্ছেন, ততক্ষণে খবর আসতে শুরু করেছে খানাকুল, গোঘাট, পুড়শুড়া, আরামবাগ, ধনেখালি থেকে একের পর এক দলীয় কার্যালয়ে বিজেপি হামলা করছে। দখল করছে। ধনেখালিতে অনেক পঞ্চায়েত সদস্য ঘরছাড়া হয়েছেন। গ্রামছাড়া পঞ্চায়েত সদস্যরা জেলায় দলীয় নেতৃত্বের কাছে
সাহায্য চেয়েছিলেন। নিচুতলার অনেক কর্মীই এ দিন প্রশ্ন তোলেন, দলের কর্মীরা যখন বিপদগ্রস্ত, বিজেপির হাতে মার খাচ্ছেন, তখন খানাকুলের বিধায়ক ইকবাল কলকাতায়, তারকেশ্বরের বিধায়ক রচপাল সিংহ সল্টলেকে, পুড়শুড়ার বিধায়ক নুরুজ্জামান কলকাতায়, গোঘাটের বিধায়ক মানস মজুমদার চুঁচুড়ায়, সাংসদ অপরূপা পোদ্দার রিষড়ার বাড়িতে থাকছেন। তা হলে এলাকায় থেকে কর্মীদের ভরসা যোগাবেন কে?
ক্ষোভের আঁচ পেয়ে দিলীপবাবু স্থির করেন, আগামী শনিবার আরামবাগ মহকুমার ছয় ব্লকেই নেতা-কর্মীদের বক্তব্য শুনতে এলাকায় গিয়ে বৈঠক করা হবে। বলা হয়, কোথাও দলের কর্মী আক্রান্ত হলে পাল্টা মারধর বা অশান্তি করা চলবে না। পুলিশ-প্রশাসনে অভিযোগ জানাতে হবে। স্মারকলিপি দেওয়া যেতে পারে। মারধরের ঘটনায় জড়ালে দল দায়িত্ব নেবে না।
গোটা বিষয়টি নিয়ে দিলীপবাবুর বক্তব্য, ‘‘ভোটে আমাদের ফল ভাল হয়নি। কর্মীদের মনোবল বাড়াতে জেলার বিভিন্ন জায়গায় পর্যায়ক্রমে বসে তাঁদের মতামত শোনা হবে। দলনেত্রী যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা যথাযথ ভাবে পালনের চেষ্টা করব।’’