বেহাল শিল্পই কমিয়েছে ভোট, মানছে তৃণমূলও

লোকসভার ফল বলছে, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ১০৫৮ ভোটে ‘লিড’ পেয়েছেন বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৯ ০২:২৭
Share:

সুনসান: তালাবন্ধ কারখানা। মঙ্গলবার দুপুরে। নিজস্ব চিত্র

এ বারের লোকসভা নির্বাচনে চন্দননগর পুরসভায় ‘লিড’ পেয়েছেন তৃণমূলের রত্না দে ন‌াগ। কিন্তু গোন্দলপাড়ার শ্রমিক মহল্লায় উল্টো ছবি। অনেকেই বলছেন, গত এক বছরে গোন্দলপাড়া চটকলের পরিস্থিতির জন্যই এখানকার মানুষ তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়েছেন।

Advertisement

ওই চটকলে প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক রয়েছেন। পুরসভার ‌২৫ এবং ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে এখানকার শ্রমিকদের বাস। সূত্রের খবর, ২০১৫ সালে পুরভোটে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ৬০০ ভোটে জয়ী হয় ফরওয়ার্ড ব্লক। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় সাড়ে তিনশো ভোটে জেতে বিজেপি। বিধানসভায় দু’টি ওয়ার্ডেই এগিয়ে ছিল বামফ্রন্ট।

লোকসভার ফল বলছে, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ১০৫৮ ভোটে ‘লিড’ পেয়েছেন বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায়। এখানে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ১৭৬৩। তৃণমূল ভোট পেয়েছে ৭০৫টি। সিপিএমের ঝুলিতে ভোট ১৫৪টি। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি-র ভোট ৩০৩৭টি। তৃণমূল পেয়েছে ৮৪৭টি ভোট। বামেদের বাক্সে ১৮৪টি ভোট। অর্থাৎ তৃণমূল ২১৯০ ভোটে বিজেপির থেকে পিছিয়ে। পুর-এলাকায় এখানেই তৃণমূলের হারের ব্যবধান সর্বাধিক।

Advertisement

এক চটকল-শ্রমিকের কথায়, ‘‘গত বছর ২৭মে থেকে মিলটা বন্ধ ছিল। তৃণমূল আন্দোলন করেনি। ভোটের আগে চমকের জন্য খোলা হল। আমরা তৃণমূলের উপরে ভরসা রাখতে পারিনি।’’

এক সিপিএম নেতার কথায়, ‘‘জুটমিল নিয়ে আমরা আন্দোলন করেছি। তৃণমূলের স্থানীয় নেতা নিজের আখের গোছানো ছাড়া কিছু করেননি। তবে মানুষ হয়তো মনে করেছে চটকল খোলার ক্ষমতা বামেদের নেই। তাই তৃণমূলের প্রতি আস্থা হারিয়ে বিজেপিকে ভোট দিয়েছে।’’

স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের উপরে শ্রমিকদের ‘আস্থা’ টের পাওয়া গিয়েছিল গত ৮ মে, হুগলিতে লোকসভা ভোটের এক দিন পরে। ওই দিন মিল বন্ধের খবর পেয়ে ক্ষিপ্ত শ্রমিকরা দুই তৃণমূল নেতার বাড়িতে, দু’টি কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায়। ‘এক নেতার তত্ত্বাবধানে চলা’ ফেরিঘাটে ভাঙচুর চলে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া প্রতিক্রিয়ার পরে ওই সন্ধ্যাতেই অবশ্য মিল বন্ধের বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করেন মিল কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার ফের ওই চটকলে তালা ঝুলল।

সার্বিক ভাবে পুরসভার ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল ২২টিতে এবং বিজেপি ১১টিতে এগিয়ে। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে কয়েক মাস আগে পুরবোর্ড ভেঙে দেয় রাজ্য সরকার। তা নিয়ে জনমানসে প্রতিক্রিয়া হয়।

এই অবস্থায় ভোটে ‘লিড’ নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে অনেকেই সংশয়ে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ‘লিড’ পেয়েছে তৃণমূলই। তবে প্রাক্তন মেয়র তথা লোকসভা নির্বাচনে পুর-এলাকার নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান রাম চক্রবর্তীর ওয়ার্ডে তৃণমূল পিছিয়ে। তৃণমূল নেতারা বলছেন, মুসলিম এলাকায় দলের ফল ভাল হয়েছে। চটকল-সহ অবাঙালি অধ্যুষিত কিছু জায়গার চিত্র উল্টো।

চটকল বন্ধ থাকা সংলগ্ন‌ এলাকায় খারাপ ফলের অন্যতম কারণ বলে মানছেন রামবাবু। তবে তাঁর দাবি, ‘‘মিল খোলার ব্যাপারে আমাদের সাংসদ, বিধায়ক তথা মন্ত্রী সবাই তদ্বির করেছেন। কিন্তু সিপিএম এবং বিজেপি শ্রমিকদের ভুল বুঝিয়েছে।’’ বিজেপির চন্দননগর মণ্ডল সভাপতি বিনোদ দাসের প্রতিক্রিয়া, ‘‘শ্রমিকদের দিকে তাকায়নি তৃণমূল। তাই শ্রমিকরা ওদের থেকে মুখ ফিরিয়েছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement