নিজের বিয়ে রুখে ষোড়শী রিয়া ‘কন্যাশ্রী যোদ্ধা’

সদ্য ষোলোয় পা দেওয়া মেয়েটা অবশ্য ভেবেছিল অন্য রকম। তার আর্জিতে স্কুলের স্যরদের দৌড়ঝাঁপ এবং প্রশাসনের মধ্যস্থতায় বিয়ে বন্ধ হয়। নিজের বিয়ে রুখে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার স্বীকৃতি হিসেবে ব্লক প্রশাসনের ‘কন্যাশ্রী যোদ্ধা’ শিরোপা পেল সে। মেয়েটির নাম রিয়া দাস। সে হরিপালের জামাইবাটী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হরিপাল শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৮ ০২:০৮
Share:

অনুষ্ঠান মঞ্চে পুরস্কার নিচ্ছে রিয়া। নিজস্ব চিত্র

শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে ‘খুন্তি নাড়া’র ব্যবস্থা প্রায় পাকা করে ফেলেছিলেন বাবা-মা।

Advertisement

সদ্য ষোলোয় পা দেওয়া মেয়েটা অবশ্য ভেবেছিল অন্য রকম। তার আর্জিতে স্কুলের স্যরদের দৌড়ঝাঁপ এবং প্রশাসনের মধ্যস্থতায় বিয়ে বন্ধ হয়। নিজের বিয়ে রুখে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার স্বীকৃতি হিসেবে ব্লক প্রশাসনের ‘কন্যাশ্রী যোদ্ধা’ শিরোপা পেল সে। মেয়েটির নাম রিয়া দাস। সে হরিপালের জামাইবাটী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী।

মঙ্গলবার ছিল ‘কন্যাশ্রী দিবস’। হুগলির বিভিন্ন ব্লকে প্রশাসনের তরফে দিনটি পালন করা হয়। হরিপাল বিডিও দফতরের তরফেও আয়োজিত অনুষ্ঠানে রিয়ার হাতে স্মারক এবং মানপত্র তুলে দেওয়া হয়। বিডিও বিমলেন্দু নাথ বলেন, ‘‘রিয়ার কাহিনী অন্য মেয়েদের এবং তাঁদের অভিভাবকদের অনুপ্রাণিত করছে এবং করবে।’’

Advertisement

‌বিডিও-র সংযোজন, ‘‘মেয়েটি সাহস করে শিক্ষকদের কাছে বিষয়টি জানিয়েছিল। তার পরে প্রধান শিক্ষক সন্দীপ সিংহ ব্যক্তিগত উদ্যোগে ওই নাবালিকার বিয়ে আটকানোর চেষ্টা করেছেন। আমাদের সাহায্য নিয়েছেন। ফলে স্কুলের ভূমিকাও প্রশংসনীয়।’’ প্রশাসনের তরফে সন্দীপবাবুকেও পুরস্কৃত করা হয়। অনুষ্ঠানে বিডিও-সহ ব্লক প্রশাসনের অন্যান্য আধিকারিক, চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর গোপীবল্লভ শ্যামল, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সফিউল ইসলাম সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রশাসন সূত্রের খবর, হরিপালের পূর্ব নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা ওই কিশোরীর বাবা তারকবাবু কাঠমিস্ত্রী। চলতি বছরের গোড়ায় মেয়েটির বিয়ে ঠিক হয়। সব দেখেশুনে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে মুখচোরা মেয়েটি। জানায়, এখনই বিয়ে করবে না। কেননা, আঠেরো বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া অনুচিত। অভিভাবকেরা অবশ্য তাতে কান দেননি। শেষে সে স্কুলের ক্লাস টিচারের দ্বারস্থ হয়।

শিক্ষকরা তাকে সন্দীপবাবুর কাছে নিয়ে যান। সন্দীপবাবু আসরে নামেন। এক শিক্ষককে নিয়ে সটান মেয়েটির বাড়িতে চলে যা‌ন‌। কম বয়সে মেয়ের বিয়ে দিয়ে তার ‘ভবিষ্যৎ নষ্ট’ না করার পরামর্শ দেন বাড়ির বড়দের। তাতে কাজ ফল হয়নি। পরিবারের তরপে জানিয়ে দেওয়া হয়, ‘অভাবের সংসারে ভাল পাত্র’ মিলেছে। হাতছাড়া করার প্রশ্নই নেই।

নাছোড় সন্দীপবাবু বিডিও-কে বিমলেন্দুবাবুকে বিষয়টি জানান। ব্লক ওয়েলফেয়ার অফিসার মৌমিতা চক্রবর্তী পুলিশ এবং চাইল্ড লাইনের আধিকারিকদের নিয়ে মেয়েটির বাড়িতে যান। প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে মেয়েটির বাবা-মা রণে ভঙ্গ দেন। মেয়েটি এখন নিয়মিত স্কুলে আসছে। স্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাবেরও সদস্য করা হয়েছে তাঁকে। মেয়ে পুরস্কৃত হওয়ায় মা রূপাদেবী খুশি। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলের শিক্ষক থেকে ব্লকের কর্তারা সবাই আমাদের বুঝিয়েছেন। বিডিও বলেছেন, কোনও সমস্যা হলে মেয়েকে সাহায্য করবেন।’’ মায়ের সংযোজন, ‘‘ওঁরা যা বলেন তাই করব। মেয়ে আরও পড়ুক। এখন‌ই বিয়ে দিচ্ছি ন‌া।’’

নাবালিকা বিয়ে আটকানোর জন্য গত কয়েক বছর ধরেই চেষ্টা করে যাচ্ছে হরিপালের ওই স্কুল। প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘সহকর্মীরাও এগিয়ে আসেন।’’

কন্যাশ্রী দিবসের অ‌নুষ্ঠানে রিয়ার বিয়ে রুখে দেওয়ার কাহিনি নিয়ে নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। বিডিও দফতর, গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মীরা তাতে অভিনয় করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন