খোলেনি গোন্দলপাড়া

কোপ জগদ্ধাত্রী পুজোর বাজেটে

শহর উৎসবময়। কিন্তু উৎসবের আঙিনায় দাঁড়িয়েও ওঁরা বিমর্ষ। তার ছাপ পড়েছে আশপাশের জগদ্ধাত্রী পুজোর মণ্ডপেও।

Advertisement

প্রকাশ পাল ও তাপস ঘোষ

চন্দননগর শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:১৩
Share:

মলিন: স্থানীয় একটি ক্লাবের মণ্ডপ। নিজস্ব চিত্র

শহর উৎসবময়। কিন্তু উৎসবের আঙিনায় দাঁড়িয়েও ওঁরা বিমর্ষ। তার ছাপ পড়েছে আশপাশের জগদ্ধাত্রী পুজোর মণ্ডপেও।

Advertisement

ওঁরা— চন্দননগরের গোন্দলপাড়া চটকলের শ্রমিক এবং তাঁদের পরিবারের লোকজন। প্রায় ছ’মাস বন্ধ এই চটকল। ফলে শ্রমিক মহল্লা চরম সঙ্কটে। কোনও রকমে দিন গুজরান হচ্ছে। তার ছাপ পড়েছে আশপাশের কয়েকটি পুজোয়। কারণ, ওই সব পরিবার থেকে আগের মতো চাঁদা মিলছে না। ফলে, উদ্যোক্তারা পুজো-বাজেট কাটছাঁট করেছেন। চারদিকে উৎসবের আলোতেও তাই ম্রিয়মাণ এই তল্লাট!

গোন্দলপাড়া দিনেমারডাঙা শিবমন্দির পুজো কমিটির বাজেট এ বার এক ধাক্কায় অনেকটাই কমে গিয়েছে। কমিটির সদস্য মণিলাল চৌধুরী বলেন, ‘‘আমাদের খরচের অনেকটা আসে বাড়ি বাড়ি চাঁদা তুলে। কিন্তু এ বার মিল বন্ধের কারণে পরিস্থিতি পুরো পাল্টে গিয়েছে। অনেকেই অন্যান্য বছরের তুলনায় চার-পাঁচ ভাগ চাঁদাও দিতে পারেননি।’’ মণিলাল জানান, গত বছর এই পুজোর বাজেট ছিল ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। এ বার মাত্র ১ লক্ষ ১০ হাজার। গত বছর যাঁরা ১৫০-২০০ টাকা দিয়েছিলেন, এ বার তাঁরা ৫০ টাকাও দিতে পারেননি।

Advertisement

বিভিন্ন পুজো কমিটির কর্তারা জানিয়েছেন, এলাকার অর্থনীতিতে মিল বন্ধের প্রভাব পড়েছে। তাই যে যা চাঁদা দিয়েছেন তা-ই নেওয়া হয়েছে হাসিমুখে। কদমতলা সর্বজনীনের গত বছর বাজেট ছিল ১৬ লক্ষ টাকা। এ বার তা দাঁড়িয়েছে মেরেকেটে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকায়। চাঁদা তো বটেই, বিজ্ঞাপনও জোটেনি বললেই চলে। কমিটির সম্পাদক চন্দন বর্মন বলেন, ‘‘অনেকে ৫-১০ টাকা চাঁদাও দিয়েছেন। অন্যান্য বার স্থানীয় বাসিন্দাদের বসিয়ে ভোগ খাওয়ানো হয়। এ বার তা বাতিল করতে হয়েছে।’’ বিনোদতলা সর্বজনীন‌ের সম্পাদক সোমনাথ পালেরও বক্তব্য, ‘‘সব দিকেই কাটছাঁট করতে হয়েছে। বাহুল্য নেই, পুজোটাই যা হচ্ছে।’’

জগদীশ যাদব নামে ওই চটকলের এক শ্রমিকের কথায়, ‘‘আনন্দ কোথা থেকে আসবে? পকেটে পয়সা না-থাকলে আনন্দ থাকে!’’ আর এক শ্রমিকের স্ত্রী সুনীতা দেবীর খেদ, ‘‘আনন্দ করব কী, বাচ্চাদের খাওয়া-পড়াই সামল‌াতে পারছি না।’’ শ্রমিক পরিবারের সন্তান সুমিত চৌধুরী অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। সে জানায়, ছট এবং জগদ্ধাত্রী পুজোয় নতুন জামাকাপড় হয়। এ বার হয়নি। বড়দের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে যাওয়াও হয়নি।

কবাডি ক্লাবের গত বছরের বাজেট ছিল প্রায় ৩ লক্ষ টাকা। এ বার ৫০ হাজারও ছোঁয়নি। ক্লাবের সদস্যেরা জানিয়েছেন, এ বার তাঁরা নিজেরাই প্যান্ডেল বানিয়েছেন। একটি পুজো কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘‘এই এলাকায় অপেক্ষাকৃত যে বড় পুজোগুলো রয়েছে, তাদের খুব একটা সমস্যা হয়নি। কেননা, তারা বাইরের বিজ্ঞাপন‌ বা অনুদানের উপর নির্ভর করে। যাঁরা শুধু এলাকার চাঁদার উপরে নির্ভর করে, তাদের নমো নমো করে পুজো সারতে হচ্ছে।’’

কাঁচা পাটের অভাবের কথা জানিয়ে গত ২৬ মে ওই চটকলে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। তার পর থেকে একের পর এক বৈঠক হয়েছে। কিন্তু সদর্থক কিছু হয়নি। সংশ্লিষ্ট সকলেই চাইছেন, অবিলম্বে চটকল খুলুক। একটু একটু করে চাঙ্গা হোক এলাকার অর্থনীতি। পরের বার ফের ধুমধাম করে পুজো করতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন