প্রচারে ঢিলেমি, ভ্যানিশ হেলমেট-বাইকের সখ্যতা

‘বাবার মাথা ভীষণ দামি হেলমেটেতে ঢাকা, ছোট্ট মাথার নেই কোনও দাম, আমার মাথা ফাঁকা...’ ছড়ায়-ছবিতে হেলমেট পরার এমন বার্তাই নির্দেশ হয়ে উঠে এসেছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ স্লোগানে।

Advertisement

প্রকাশ পাল

হুগলি শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৩০
Share:

কোথায় সুরক্ষা? সোমবার সিঙ্গুরে দীপঙ্কর দে’র তোলা ছবি।

‘বাবার মাথা ভীষণ দামি হেলমেটেতে ঢাকা, ছোট্ট মাথার নেই কোনও দাম, আমার মাথা ফাঁকা...’

Advertisement

ছড়ায়-ছবিতে হেলমেট পরার এমন বার্তাই নির্দেশ হয়ে উঠে এসেছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ স্লোগানে। মাথায় হেলমেট না থাকলেই জরিমানা। এমনকী পেট্রোল পাম্পেও মিলবে না তেল। এ হেন শাস্তির হুমকিতে রাতারাতি বদলে গিয়েছিল ছবি। হেলমেটহীন মাথা ঢেকেছিল হেলমেট-এ। পাশাপাশি হেলমেট সচেতনতায় শুরু হয়ে যায় নাগাড়ে প্রচার। কখনও পুলিশ-প্রশাসন, কখনও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাত ধরে।

কিন্তু অভিযোগ, পুজোর আগে মাস খানেক ধরে প্রচারে ঢিলেমির ফাঁকে ফের মাথাচাড়া দিয়েছে হেলমেটহীন মাথা। মাস খানেক আগেও যখন চোখ ক্রমশ অভ্যস্ত হয়ে উঠছিল হেলমেট ঢাকা মাথার ছবিতে। সেখানে ফের ফিরে এসেছে পুরনো ছবি। কখনও দুই, কখনও তিন হেলমেটহীন আরোহীকে নিয়েই ছুটছে মোটরবাইক। এমনকী ছেলেমেয়েকে স্কুলে পৌঁছতে যাওয়ার সময়েও দেখা গিয়েছে কারও মাথাতেই সুরক্ষা-কবচের বালাই নেই।

Advertisement

শ্রীরামপুরে মাহেশের কাছে হেলমেটহীন এক বাইক আরোহীকে হেলমেট না পরার কারণ জানতে চাইতেই তাঁর সহাস্য উত্তর, ‘‘বাড়িতে একটা আছে।’’ সঙ্গে নেই কেন জানতে চাওয়ায় তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘এই গরমে মাথায় রাখা যায়, আপনিই বলুন!’’ কিন্ত পুলিশ ধরলে? এ বার যেন বেপরোয়া, ‘‘তখন দেখা যাবে।’’

এটা যে নেহাত কথার কথা নয়, তা বোঝা গেল যখন দেখা গেল রাস্তা দিয়ে একাধিক হেলমেটহীন বাইক ছুটছে। অথচ ধারেকাছে কোথাও পুলিশের নজরদারি চোখে পড়ল না।

হুগলির ডিএসপি (ট্রাফিক) অরুণ মণ্ডলের অবশ্য দাবি, ‘‘হেলমেট পরা নিয়ে সচেতনতায় যে অভিযান চালানো হয় তাতে ফল মিলেছে। হেলমেট পরার প্রবণতাও বেড়েছে। বেপরোয়া ভাবে বাইক চালানোর প্রবণতাও কমেছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘কিছু ব্যতিক্রম হয়তো হচ্ছে। তবে সে জন্য নজরদারি রয়েছে।’’

মাসখানেক আগেই মাহেশে একটি পেট্রোল পাম্পের সামনে বিশাল বাহিনী নিয়ে হেলমেটবিহীন মোটরবাইক আরোহীদের পাকড়াও করছিলেন শ্রীরামপুরের এসডিপিও এবং আইসি। ঘণ্টাখান‌েকের মধ্যে বাইকের লাইন পড়ে গিয়েছিল।

কিন্তু এখন হেলমেট নিয়ে পেট্রোল পাম্পগুলিকে দেওয়া নির্দেশিকা কার্যত শিকেয়। আরামবাগ শহরের লিঙ্করোডের ধারে এক পাম্প মালিকের বক্তব্য, ‘‘রাস্তার মোড়ে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ সাইনবোর্ড টাঙিয়েই দায় সেরেছে প্রশাসন। হেলমেট নিয়ে সচেতনতা, কড়াকড়ি সব শিকেয়। বাধ্য হয়ে আমরাই হেলমেট কিনে রেখেছি।’’

হুগলি পুলিশের একাংশের বক্তব্য, লাগাতার কর্মসূচিতে হেলমেট পরার প্রবণতা কিছুটা বাড়লেও এটা সত্যি যে, কাঙ্খিত সাফল্য আসেনি। তবে এ ব্যাপারে ফের অভিযান‌ চালানোর চিন্তাভাবনা চলছে। আরামবাগের ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক দেবজিৎ বসু বলেন, “হেলমেট নিয়ে নানা অনিয়ম চোখে পড়ছে। প্রচার যে হয়নি, তা নয়। তবে পরিস্থিতি বদলাতে আইনি ব্যবস্থায় আরও জোর দিতে হবে।”

মাথায় হেলমেট ধরে রাখতে এখন কতটা কড়া হয় প্রশাসন, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন