লজ মালিককে ‘ভয় দেখিয়ে, তুলে নিয়ে গিয়ে’ মহিলা তৃণমূলের সভা বানচালের চেষ্টার অভিযোগ উঠল দলেরই এক নেতার বিরুদ্ধে। শনিবার বিকেলে ওই অভিযোগকে কেন্দ্র করে শোরগোল পড়ে হুগলির শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লকের নবগ্রামে। লজ তালাবন্ধ থাকায় শেষ পর্যন্ত একটি বাড়ির সামনে সভা করেন তৃণমূলের মহিলা নেত্রীরা। এ ভাবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসায় স্বাভাবিক ভাবেই দলের জেলা নেতৃত্ব অস্বস্তিতে।
তৃণমূল সূত্রে খবর, ২১ জুলাইয়ের প্রস্ততি হিসেবে এ দিন বিকেলে ওই সভার আয়োজন করা হয়। উদ্যেক্তা ছিলেন দলের ব্লক সভানেত্রী তথা হুগলি জেলা পরিষদের সদস্যা দীপ্তি ভট্টাচার্য। নবগ্রাম ‘বি’ ব্লকের একটি লজে সভা হওয়ার কথা ছিল। অভিযোগ, দুপুরে সভাস্থলে ঢুকতে গিয়ে আয়োজকরা দেখেন সেটি তালাবন্ধ। লজ মালিকের সঙ্গে চেষ্টা করেও তাঁরা যোগাযোগ করতে পারেননি। ইতিমধ্যেই সভায় যোগ দিতে আসেন জেলা মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী তথা মন্ত্রী বেচারাম মান্নার স্ত্রী করবী মান্না। পঞ্চায়েত সমিতি, বিভিন্ন পঞ্চায়েতের মহিলা সদস্যরাও উপস্থিত হন। পরিস্থিতি দেখে সকলেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন। লজ খোলার ব্যবস্থা করতে না পেরে পাশেই একটি বাড়ির সামনের চত্বরে চেয়ার-টেবিল পেতে সভা করা হয়।
ঘটনার জন্য দীপ্তিদেবী সরাসরি আঙুল তুলেছেন দলের স্থানীয় নেতা অপূর্ব মজুমদারের দিকে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘সাত দিন আগে লজ মালিককে চিঠি দিই। ওখানে সভা হবে বলে সব ঠিকই ছিল। অপূর্ববাবু সভা করতে দেবেন না বলে লজ মালিককে তুলে নিয়ে যান। আমরা ওখানে সভা করলে তাঁকে ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়।’’ ক্ষোভ প্রকাশ করে দীপ্তিদেবী বলেন, ‘‘অপূর্ববাবু চান না, তাঁকে ছাপিয়ে কেউ উপরে উঠুক। বিশেষ করে কোনও মহিলা রাজনীতিতে এগিয়ে গেলে তিনি সহ্য করতে পারেন না। সে জন্যই এমন আচরণ করলেন। গোটা বিষয়টি দলকে জানিয়েছি। দলই যা করার করবে।’’
অপূর্ববাবু অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি দলের অঞ্চল সভাপতি। এ দিন এখানে যে দলের অনুষ্ঠান ছিল, তা-ই জানি না। কাউকে তুলে নিয়ে যাওয়া বা ভয় দেখানোর প্রশ্নই নেই। আমি স্বচ্ছ রাজনীতি করি। মনগড়া অভিযোগ করে আমাকে হেয় করার চেষ্টা হচ্ছে।’’ দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘ব্লক সভানেত্রীর রিপোর্ট পেয়েছি। যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবে।’’
জেলায় অপূর্ববাবু সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তৃণমূল শিবিরের খবর, নবগ্রামে দলের রাশ কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে অপূর্ববাবুর সঙ্গে দীপ্তিদেবীর ‘ঠাণ্ডা’ লড়াই ছিলই। এ দিনের ঘটনায় তা আরও প্রকট হল। এর আগেও অবশ্য অপূর্ববাবু বিতর্কে জড়িয়েছেন। সম্প্রতি নবগ্রাম কলেজে তাঁর সভাপতি হওয়ার পদ্ধতি নিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তরফেই আপত্তি জানানো হয়। যা নিয়ে হইচইও কম হয়নি।