চন্দ্রহাটির সম্প্রীতি বেঁধে রেখেছে বাতাস পিরের মাজার

শনিবার দুপুরে পন্ডুয়ার চন্দ্রহাটি পশ্চিমপাড়ায় গিয়ে দেখা মিলল মহম্মদ আকবর আলির। তিনিই বালতি হাতে নিয়ে খিচু়ড়ি দিচ্ছেন পাতে পাতে। আর কলাপাতা কেটে পরিষ্কার করে পেতে দিচ্ছেন প্রণব দাস।

Advertisement

সুশান্ত সরকার

পান্ডুয়া শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৮ ০৬:৩০
Share:

সমবেত: উরস উপলক্ষে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া। নিজস্ব চিত্র

রোজের রান্নাবান্না, ঘরকন্নার ছুটি। তাই লক্ষ্মী সিংহ, আনোয়ারা বিবি, সবিতা ঘোষেরা সকাল থেকে আড্ডা জমিয়েছেন খেলার মাঠে। পড়াশোনার ছুটি কচিকাচাদেরও। তারা ছুটে বেড়াচ্ছে মাঠময়। গোটা গ্রামের নিমন্ত্রণ বাতাস পিরের মাজারে। পাতে পড়বে মুরগি-বিরিয়ানি। যাঁরা খাবেন না তাঁদের জন্য খিচুড়ি-চাটনির ব্যবস্থা। রান্নাবান্নার দায়িত্বে গ্রামের পুরুষরা।

Advertisement

শনিবার দুপুরে পন্ডুয়ার চন্দ্রহাটি পশ্চিমপাড়ায় গিয়ে দেখা মিলল মহম্মদ আকবর আলির। তিনিই বালতি হাতে নিয়ে খিচু়ড়ি দিচ্ছেন পাতে পাতে। আর কলাপাতা কেটে পরিষ্কার করে পেতে দিচ্ছেন প্রণব দাস। অনেক দিন ধরেই বাতাস পিরের মাজারে পালিত হয় উরস উৎসব। গোটা গ্রামের এক উৎসব। এ বারও শুক্র-শনিবার পালিত হয়েছে উরস। সে জন্যই এ দিনের প্রীতিভোজ।

শোনা যায়, বেলুন ধামাসিন পঞ্চায়েতের অধীনে চন্দ্রহাটি গ্রামের এই খেলার মাঠটি এক সময় ছিল জঙ্গল। সাপের উৎপাত। কয়েকশো বছর আগে সেখানে আসতেন এক ফকির। অনেক পরে সেখানে ফকিরের ওই আস্তানায় শুরু হয় মানুষের যাতায়াত। গ্রামের মানুষ যেতেন নানা সময়, নানা প্রয়োজনে। এলাকার বাসিন্দা অশীতিপর বিমল সিংহ বলেন, ‘‘মানুষের খুব ভরসা বাতাস পিরের উপর। বছর ৫০-৬০ আগে নাজির আহমেদ নামে এক ব্যক্তি এই মাজারটি প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর থেকে হিন্দু, মুসলিম— সব সম্প্রদায়ের মানুষই প্রদীপ জ্বালায় সেখানে। ভরসা সকলেরই।’’

Advertisement

উরস উৎসবে মিলাদ প়ড়তে আসেন হাফিস সাহেব। কিন্তু রাতের জলসায় যোগ দেয় এলাকার ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা। কেউ কবিতা বলে, কেউ গান শোনায়। আর আছে এই খাওয়া-দাওয়া। ‘‘সব ব্যবস্থা আমরা দুই সম্প্রদায়ের মানুষ মিলেমিশে করি’’, বললেন উরস কমিটির সভাপতি মহম্মদ আকবর আলি।’’ কমিটির সম্পাদক বিমল মাঝি বললেন, ‘‘তা আর করব না? আমাদের গ্রামে এই তো এক ভরসার জায়গা।’’

গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মী সিংহ বলেন, ‘‘এই তো মাধ্যমিক শেষ হল, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে। গ্রামের ছেলেমেয়েরা বাবার মাজারে দেখা না দিয়ে পরীক্ষা দিতে যায় না। কারও বিয়ে হলে— তা সে যে ধর্মেরই হোক, নব দম্পতিকে আসতেই হবে মাজারে। সেটাই নিয়ম।’’ এ এক আশ্চর্য বিশ্বাস। সব মনোবাসনা নাকি পূরণ হয় পিরের আশীর্বাদে। আর সেই বিশ্বাসই বেঁধে বেঁধে রাখে কাছের মানুষগুলোকে।

তাই মাস খানেক আগে থেকে শুরু হয় চাঁদা তোলা। কেউ আবার স্বেচ্ছায় চাল, ডাল, আলু দেন। কেউ দেন মিষ্টি, রান্নার মশলা। উরসের প্রীতিভোজে পাত পড়ে প্রায় হাজার খানেক মানুষের, দাবি চন্দ্রহাটির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন