নেহরু বালিকা বিদ্যালয়ে চলছে প্রশিক্ষণ। —নিজস্ব চিত্র।
আত্মরক্ষায় জন্য মার্শাল আর্ট শিখছেন গ্রামীণ হাওড়ার কয়েকটি স্কুলের ছাত্রী ও শিক্ষিকারা। বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং একটি বেসরকারি মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্যোগে এই প্রকল্প শুরু হয়েছে সম্প্রতি।
গত কয়েক বছরে রাজ্যের নানা প্রান্তে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। স্কুল-কলেজের ছাত্রী বা শিক্ষিকারাও হামলার মুখে পড়েছেন এমন নজিরও রয়েছে। গত বছরের শেষ দিকে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে কলকাতার কয়েকটি স্কুলে আত্মরক্ষায় প্রশিক্ষণ শেখানো শুরু হয়। গ্রামীণ হাওড়ার উলুবেড়িয়া কলেজে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষণ চলছে। সম্প্রতি ডোমজুড় নেহরু বালিকা বিদ্যালয় ও কোলড়া গালর্স হাইস্কুলে মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। এ ছাড়াও ঝাঁপড়দহ ডিউক ইনস্টিটউশন-সহ কয়েকটি স্কুলে প্রশিক্ষণ শুরুর বিষয়ে কথাবার্তা হয়েছে। প্রশিক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন হাওড়া শহ৭রের একটি বেসরকারি তাইকেন্ডো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। নেহরু বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা অসীমা রায় বলেন, ‘‘আপাতত প্রায় ১৭০ জন পড়ুয়া ও চার জন শিক্ষিকা তাইকেন্ডোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষিকা বলেন, ‘‘স্কুলে যাতায়াতের পথে এককবার ইভটিজিংয়ের মুখে পড়েছিলাম। তাই ছাত্রীদের এই কৌশল শিখতে উৎসাহ দিচ্ছি।’’ কোলড়া গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বর্ণা সান্যাল বলেন, ‘‘ব্লক অফিসের মাধ্যমে যোগাযোগ করে ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আমাদের স্কুলে এসে অনুষ্ঠান করেছিল। তারপর তাদের প্রশিক্ষণের অনুমোদন দিয়েছি।’’ ডোমজুড়ের বিডিও তমোঘ্ন কর জানান, উপযুক্ত পরিকাঠামো এবং প্রশিক্ষকের অভাবে কাজ শুরু করা যাচ্ছিল না। তিনি বলেন, ‘‘তাইকেন্ডো হল আত্মরক্ষার অন্যতম মাধ্যম। তাই ব্লকের স্কুলগুলিতে তাইকেন্ডো শেখানোর সুপারিশ করেছি।’’ ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর ইন্দ্রনীল গুপ্ত হাওড়ার নিখোঁজ পর্বতারোহী ছন্দা গায়েনকে তাইকেন্ডো শেখাতেন। তাঁর দাবি, ‘‘আমরা চাই হাওড়ার গ্রামে গ্রামে আরও অনেক ছন্দা গায়েন তৈরি হোক। যাঁরা বিপদকে একাই মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে।’’ তবে, বিষয়টি যে মোটেও সহজ নয় সেটা ভালই জানেন ইন্দ্রনীলবাবু। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘অনেক স্কুলে গিয়ে শুনতে হয়েছে মেয়েরা মারপিট শেখে নাকি? কেউ বলেছেন মার্শাল আর্ট শিখলে মেয়েদের শারীরিক ক্ষতি হতে পারে।’’
হাওড়া জেলা পরিষদের এক কর্তা জানান, স্কুল-কলেজে সরকারি উদ্যোগে আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ শেখানোর জন প্রাথমিক স্তরে আলোচনা হয়েছে। ডোমজুড় থানার আইসি মধূসূদন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শারীরিক সক্ষমতার সঙ্গে মানসিক ভাবেও সক্ষম হতে হবে ছাত্রছাত্রীদের। তবেই, দুষ্কৃতীদের প্রতিরোধ সম্ভব।’’
ওই স্কুলগুলির ছাত্রীরা এখন তাইকেন্ডো শেখার মজায় মজেছে।