জমি বিবাদে খুন স্বামীও

রবিবার সকালে পুষ্পাদেবীর শ্রাদ্ধের কাজ চলার সময়েই কলকাতার হাসপাতালে মৃত্যু হল সুনীলবাবুর। সে খবর পৌঁছতেই তেতে ওঠে গ্রাম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বলাগড় শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৮ ২৩:৪২
Share:

শোকার্ত: মায়ের শ্রাদ্ধের সময়েই এল বাবার মৃত্যুর খবর। ছবি: তাপস ঘোষ

জমি-বিবাদের জেরে তিন দিন আগে বলাগড়ের সোমরাবাজারের আদর্শপল্লির পুষ্পা দেবনাথকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছিল পড়শি দম্পতির বিরুদ্ধে। সেই গোলমালে গুরুতর জখম হন নিহতের স্বামী সুনীল দেবনাথ (৫২)। রবিবার সকালে পুষ্পাদেবীর শ্রাদ্ধের কাজ চলার সময়েই কলকাতার হাসপাতালে মৃত্যু হল সুনীলবাবুর। সে খবর পৌঁছতেই তেতে ওঠে গ্রাম। অভিযুক্তদের বাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের গ্রেফতারের দাবিতে পথ অবরোধও হয়। বন্ধ রাখা হয় দোকানপাট।

Advertisement

হুগলি জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন জানান, অভিযুক্ত জগন্নাথ সরকার ও তাঁর স্ত্রী দীপালির বিরুদ্ধে আগে একটি খুন এবং খুনের চেষ্টার অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছিল। এ বার দু’টি খুনের মামলা রুজু হল। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আদর্শপল্লিতে দুই ছেলেকে নিয়ে বাস করতেন সুনীলবাবু ও তাঁর স্ত্রী। সুনীলবাবু রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। বছর তিনেক আগে তাঁদের বাড়ির পাশে জমি কিনে বাড়ি করেন জগন্নাথ। তারপর থেকেই শুরু হয় অশান্তি। জগন্নাথের অভিযোগ ছিল, তাঁর ভাগের কিছুটা জমি দখল করে রেখেছেন সুনীলবাবু। আগে বাঁশের বেড়া দেওয়া ছিল সুনীলবাবুদের বাড়িতে। দিন কয়েক আগে তাঁরা পাঁচিল দেওয়ার জন্য ইট গাঁথতে শুরু করেন। অশান্তি বাড়ে। বৃহস্পতিবার রাতেও অশান্তি হয়। সে সময় সুনীলবাবুর দুই ছেলের কেউই বাড়ি ছিলেন না। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ তাঁরা ফিরে দেখেন, বাড়ির সামনেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে মা। বাড়ির ভিতরে বাবার গোঙানির শব্দ পান তাঁরা। রক্তে ভেসে যাচ্ছিল তাঁর শরীরও। ছেলেদের চিৎকারে চলে আসেন প্রতিবেশীরা। দম্পতিকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই পুষ্পাদেবীকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। অবস্থার অবনতি হওয়ায় কলকাতার হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সুনীলবাবুকে। ঘটনার পরই বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে বেপাত্তা জগন্নাথ-দীপালি এবং তাঁদের দুই ছেলেমেয়ে।

Advertisement

মায়ের শ্রাদ্ধের কাজের মধ্যেই বাবার মৃত্যু-সংবাদে স্তম্ভিত সুনীলবাবুর দুই ছেলে টিটু ও রতন। সুনীলবাবু রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। তাঁর আয়েই সংসার চলত। এ বার তাঁরা বিপদে পড়ে গেলেন বলে জানিয়েছেন দুই ভাই-ই। রতন বলে, ‘‘পাশের বাড়ির সঙ্গে জমি নিয়ে গোলমাল মিটিয়ে নিতে বলেছিলাম বাবা-মাকে। কিন্তু ওরা যে বাবা-মাকে মেরে ফেলবে, ভাবিনি। ওদের যেন কঠোর শাস্তি হয়।’’

একই দাবি গ্রামবাসীরও। সকাল ৭টা নাগাদ সুনীলবাবুর মৃত্যুর খবর পৌঁছতেই জগন্নাথদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। দমকলের একটি ইঞ্জিন গিয়ে আগুন নেভায়। এক ঘণ্টা অবরোধ চলে অসম লিঙ্ক রোডে। ওই এলাকার বাসিন্দা ছবি ব্যাপারী বলেন, ‘‘সুনীলবাবুরা শান্ত প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। পাশের খালি জমিতে জগন্নাথ বাড়ি করার পর থেকেই ওঁর সংসারে অশান্তি শুরু। সামান্য একটু জমির জন্য যারা এ ভাবে দু’টো মানুষের প্রাণ কাড়ল, তাদের যেন কড়া শাস্তি হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন