নজরের ফাঁক গলে বাড়ছে নার্সিংহোম

হাসপাতাল আর কসাইখানা এক নয়। কলকাতার নামীদামি বেসরকারি হাসপাতালের শীর্ষ কর্তাদের এ ভাবেই সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আমজনতা এবং ভুক্তভোগী রোগীর পরিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৭ ০১:১২
Share:

অব্যবস্থা। জেলা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা নার্সিংহোমগুলির বিরুদ্ধেই উঠছে যাবতীয় অভিযোগ। ছবি: দীপঙ্কর দে।

হাসপাতাল আর কসাইখানা এক নয়। কলকাতার নামীদামি বেসরকারি হাসপাতালের শীর্ষ কর্তাদের এ ভাবেই সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আমজনতা এবং ভুক্তভোগী রোগীর পরিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। নড়েচড়ে বসেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর।

Advertisement

কিন্তু কলকাতা শহরের চৌহদ্দি পেরিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীদেরই নড়াচড়া ঠিক কতটা? নার্সিংহোমগুলির উপর দফতরের কর্তাদের নজরদারির বহরটাই বা কেমন? চারপাশে একটু নজর দিলেই ছবিটা স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

হুগলির উত্তরপাড়ায় অমলকান্তি রায়চৌধুরী (নাম পরিবর্তিত) নার্সিংহোম করেছেন প্রায় দশ বছর হতে চলেছে। আপনার নার্সিংহোমে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা কবে পরিদর্শনে এসেছিলেন? প্রশ্ন শুনে হেসে ফেললেন অমলবাবু। জানালেন, ‘‘ওঁরা ব্যস্ত। সরকারি কাজে লোক কম। তাই আমিই যেতাম ওঁদের কাছে চুঁচুড়ায়। বছরে নিয়ম করে অন্তত একবার। নার্সিংহোমের লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের জন্য। ওই ভাবেই চলছিল। তবে কলকাতায় শিশু পাচারের বিষয়টা পুলিশের নজরে আসার পর এখন স্বাস্থ্য দফতর খুব ‘অ্যাক্টিভ’। গত মাসে ওঁরা নার্সিংহোম পরিদর্শনে এসেছিলেন। প্রায় এক ঘণ্টা ছিলেন। সবকিছু খুঁটিয়ে জেনে নিয়েছেন।

Advertisement

জেলার নার্সিংহোমগুলির উপর সরকারি নজরদারির প্রসঙ্গে সিএমওএইচ শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জেলার নার্সিংহোমগুলির উপর সরকারি নজরদারি রয়েছে। সম্প্রতি নানা অব্যবস্থায় হুগলির প্রায় ৪২টি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে শো-কজ করা হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে কড়া পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, শুধু উত্তরপাড়ার ওই নার্সিংহোম নয়, জেলার অন্য নার্সিংহোমগুলিতেও নজরদারি শুরু হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে জেলার চারটি নার্সিংহোম বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জাঙ্গিপাড়ার দু’টি এবং ব্যান্ডেলের একটি। আর একটি মগরার। তাঁদের বিরুদ্ধে মূলত অভিযোগ, আরএমও (রেসিডেন্সিয়াল মেডিক্যাল অফিসার) ছিলেন না। তা ছাড়া নার্সিংহোম অপরিষ্কার। স্বা‌স্থ্য দফতরের কর্তাদের অভিযোগ, আদতে রোগীদের থেকে প্রচুর টাকা বিল নেওয়া হলেও বহু ক্ষেত্রেই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে সে ভাবে নজর দেন না।

রাজ্যে একটি মাত্র সংস্থা আছে যারা হাসপাতাল ও নার্সিংহোমের বর্জ্য নেয়। কিন্তু অভিযোগ, নার্সিংহোমগুলির বর্জ্যর পরিমাণ অনেক বেশি হয়। অনেক সময় বাড়তি ময়লা তাঁরা স্থানীয় এলাকায় ফেলে দেন। তার উপর যে পরিমাণ শয্যাসংখ্যার ভিত্তিতে নার্সিংহোমগুলি লাইসেন্স পায়, আদতে তার চেয়ে বেশি পরিমাণে বেসি শয্যা রাখে তারা। অথচ সেখানে সেই পরিকাঠামোই নেই। থাকেন না বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও।

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, জেলা শহরের নার্সিংহোমগুলি নিয়ে যেখানে মানুষের এত ক্ষোভ, তা হলে তাঁরা সেখানে যান কেন?

কলকাতার খুব কাছেই উত্তরপাড়া। হাত বাড়ালেই মানুষ কলকাতায় পৌঁছতে পারেন। তবু উত্তরপাড়ায় নার্সিংহোমগুলির রমরমা। অভিযোগ, ছোটখাটো অস্ত্রোপচার ছাড়া মূলত প্রসূতিদের জন্যই নার্সিংহোমগুলির বাড়বাড়ন্ত। পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালে পরিকাঠামোর অব্যবস্থাও মানুষকে নার্সিংহোমে যেতে বাধ্য করছে বলে অনেকের অভিমত। তার উপর জেলায় সরকারি হাসপাতালে হার্টের চিকিৎসার তেমন সু-ব্যবস্থা নেই। নেই মনিটারিং সিস্টেম। জরুরি প্রয়োজনে প্রাণের দায়েই নার্সিংহোমে ছুটতে হয় রোগীকে। আর সেটাই নার্সিংহোমগুলির বাড়বাড়ন্তের কারণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন