অনুমতির পদ্ধতি নিয়ে জটিলতা

হাওড়ায় বেআইনি বালি কারবারীদের রমরমা

যেন মোচ্ছব চলছে। দামোদরের বুকে একাধিক নৌকায় বসানো যন্ত্রচালিত পাম্প। সেই পাম্পের সাহায্যে নদীখাত থেকে তোলা হচ্ছে বালি।

Advertisement

নুরুল আবসার

উদয়নারায়ণপুর শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৪০
Share:

যেন মোচ্ছব চলছে।

Advertisement

দামোদরের বুকে একাধিক নৌকায় বসানো যন্ত্রচালিত পাম্প। সেই পাম্পের সাহায্যে নদীখাত থেকে তোলা হচ্ছে বালি। বালি এসে পড়ছে জমি কেটে তৈরি করা খাদানে। সেখান থেকে ট্রাকভর্তি হয়ে চলে যাচ্ছে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায়।

স্থান হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের বড়দা গ্রাম। দামোদরের বাঁধ থেকে প্রায় ৫০০ মিটার ধানজমি উজিয়ে যেতে হয় আমতা-উদয়নারায়ণপুর সড়কে। ধান জমির উপরেই সার সার দাঁড়িয়ে ১০ চাকার ভারী ট্রাক। বালির ট্রাকের নিরন্তর যাতায়াতে জমির দফারফা। কিন্তু সে দিকে কে নজর দেয়! এ ছাড়াও ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে আমতা-উদয়নারায়ণপুর সড়কেও। সব মিলিয়ে অন্তত ৫০টি ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে বালি তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, সবই হচ্ছে বেআইনি ভাবে।

Advertisement

এক সময়ে জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরই বালি তোলার জন্য খাদান মালিকদের অনুমতি দিত। কিন্তু সেই পদ্ধতিতে বেশ কিছু ফাঁক ধরা পড়ে। গত বছর থেকে বালি তোলার অনুমতি দেওয়া শুরু করে সেচ দফতর। তারা প্রতি ১৫ দিন অন্তর অস্থায়ীভাবে বালি তোলার অনুমতি দিত খাদান মালিকদের। সম্প্রতি রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরই অনুমতি দেবে। কিন্তু কোন পদ্ধতিতে অনুমতি দেওয়া হবে তা চূড়ান্ত হয়নি। ফলে এখনও ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর অনুমতি দেওয়ার কাজ শুরু করতে পারেনি। এই অবস্থায় গত এপ্রিল মাস থেকেই হাওড়া জেলায় বালি তোলার অনুমতি দেওয়া বন্ধ। আর তারই সুযোগে বেআইনি ভাবে বালি তোলা বেড়েছে। যার ফলে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্বও হারাচ্ছে সরকার।

বড়দা গ্রামে দামোদর থেকে যেখানে বালি তোলা হচ্ছে, দেখা গেল সেখানে পাহারায় রয়েছে বাইকবাহিনী। স্থানীয় লোকজন কেউই মুখ খুলতে চাইলেন না। পীড়াপিড়িতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসী জানালেন, দিন রাত ধরে এখানে বালি তোলার কাজ চলে। ধানজমির উপর দিয়েই চালানো হয় বালিভর্তি ট্রাক। কিন্তু কি‌ছু বলার উপায় নেই। যদিও ওখানে কাজ করা শ্রমিকদের যুক্তি, এখানে বালি তোলা হচ্ছে না। তাহলে এত ট্রাক দাঁড়িয়ে কেন? ওই শ্রমিকদের উত্তর, ‘‘ওদের অন্য কোথাও দাঁড়ানোর জায়গা নেই। তাই এখানে দাঁড়িয়ে থাকে। ভাড়া পেলে চলে যায়।’’

স্থানীয় বাসিন্দারাই জানান, এখানে খাদান থেকে বালি তুলছেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় নামে একজন খাদানমালিক। এ বিষয়ে জয়ন্তবাবুর সঙ্গে কথা বললে তাঁর উত্তর, ‘‘এই খাদান থেকে বালি তোলার পারমিট আমারই ছিল বটে। কিন্তু এখন পারমিট দেওয়া বন্ধ আছে। আমি আর বালি তুলছি না।’’

তা হলে কে তুলছেন বালি?

এ বার উত্তর এল, ‘‘যে যে ভাবে পারছে বালি তুলছে। সেচ দফতর তাদের খুঁজে বের করুক।’’

আগে এখানে বালি তোলার অনুমতি দিত সেচ দফতরের পক্ষে নিম্ন দামোদর নির্মাণভুক্তি। ওই বিভাগের একজন পদস্থ আধিকারিক জানান, তাঁরা বালি তোলার পারমিট দিচ্ছেন না। বেআইনিভাবে বালি তোলা হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা সেচ দফতরের হাওড়া ডিভিশনের।

সেচ দফতরের আমতা সাব ডিভি‌শন সূত্রে খবর, বেআইনি ভাবে বালি তোলার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সেচ দফতরের হাওড়া ডিভিশনের এক কর্তা জানান, বালি তোলার খবর পেয়ে তাঁরা বাঁধ পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু বাঁধের কোনও ক্ষতি হয়নি। তবে বেআইনিভাবে বালি তোলার জন্য যদি রাজস্বের ক্ষতি হয় সেটা দেখার কথা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের। এ বিষয়ে তাঁদের কিছু করণীয় নেই।

হাওড়া জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘যদি নদীর বুক থেকে বালি তোলা হয় তবে তা বেআইনিভাবেই করা হচ্ছে। সরেজমিন পরিদর্শন করে এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন