শ্রীরামপুর সংশোধনাগারে বন্দিদের জন্য ডাইনিং হল, ছাদে ট্যাঙ্ক

বট, অশ্বত্থ গজিয়ে উঠেছিল ছাদে-দেওয়ালে। ওয়ার্ডে বা শৌচাগারে ছিল না জলের সংযোগ। দীর্ঘদিন ধরে পানীয় জল কিনতে হতো বাইরে থেকে।

Advertisement

প্রকাশ পাল

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৬ ০১:১৮
Share:

ছবি: দীপঙ্কর দে।

বট, অশ্বত্থ গজিয়ে উঠেছিল ছাদে-দেওয়ালে। ওয়ার্ডে বা শৌচাগারে ছিল না জলের সংযোগ। দীর্ঘদিন ধরে পানীয় জল কিনতে হতো বাইরে থেকে।

Advertisement

সমস্যা ছিল আরও অনেক। সেই সব সমস্যার সমাধান করতে ঢেলে সাজা হচ্ছে ডেনিস আমলের শ্রীরামপুর উপ-সংশোধনাগার। কারা দফতরের টাকায় সেই কাজ আগামী বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন সরকারি কর্তারা। এ জন্য সংশোধনাগারের পুরুষ ও মহিলা-বন্দিদের অন্য জেলে সরানো হয়েছে।

প্রায় চার বিঘা জমিতে সংশোধনাগারটি তৈরি হয় ১৮০৩ সালে। তখন এই জ‌নপদে ডেনিসদের শাসন চলছে। শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতাল, সেন্ট ওলাভ গির্জা-র মতো স্থাপত্যগুলি এই সময়েই গড়ে ওঠে। ওই আমলের কয়েকটি স্থাপত্য সংস্কারের কাজও চলছে। তবে তা হচ্ছে ডেনিসদের অর্থানুকূল্যে।

Advertisement

কারা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই জেলে তিনটি একতলা ভবন রয়েছে। সেলের সংখ্যা ৫। একটি ভবনের বয়স প্রায় দেড় দশক। বাকি দু’টি পুরনো আমলের। দু’টি ভবনেরই অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠেছিল। জেলের ভিতরে ডাইনিং হল বলে কিছু ছিল না। বন্দিদের যে যেখানে পারত, বসে বা দাঁড়িয়ে খাওয়া সারত। এ সব নিয়ে বন্দিদের মধ্যে অসন্তোষও ছিল। সার্বিক পরিকাঠামো নিয়ে চিন্তায় ছিলেন জেল কর্তৃপক্ষও। গত বছরের অগস্ট মাসে তৎকা‌লীন কারামন্ত্রী হায়দর আজিজ সফি জেলের পরিকাঠামোগত সমস্যাগুলি দেখে যান। তার পরেই পরিকাঠামো ঢেলে সাজতে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়।

জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘সংশোধনাগারের আমূল সংস্কার হচ্ছে। পূর্ত দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করেই যাবতীয় পরিকল্পনা কার্যকর করা হচ্ছে।’’ কারা দফতর সূত্রের খবর, ধাপে ধাপে কাজ হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা এসেছে। আরও ৭০-৮০ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এক জেলকর্তা বলেন, ‘‘দু’টি ভবনের জরাজীর্ণ অবস্থা দেখে ভয় হতো, কোন দিন ভেঙে না পড়ে! এখন আর চিন্তা নেই।’’

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমেই জ‌লের সমস্যা সমাধানের দিকে নজর দেওয়া হয়। ভব‌নের ছাদে জলের ট্যাঙ্ক বসানো হয়েছে। ওয়ার্ডে এবং শৌচাগারেও জলের সংযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে বন্দিদের পর্যাপ্ত জল পেতে সমস্যা হবে না। দোতলায় ডাইনিং হল করা হচ্ছে। যাতে জনা পঞ্চাশেক বন্দি এক সঙ্গে বসে খেতে পারে। জেলের সীমানা প্রাচীর আরও উঁচু করার পরিকল্পনা রয়েছে। জেলে একটি পুকুর আছে। সেটির পাড় বাঁধাই করে বন্দিদের হাঁটার জন্য ফুটপাথ তৈরিরও ভাবনা রয়েছে। সংশোধনাগারে ঢোকার গেটটিও জীর্ণ হয়ে পড়েছে। গেটের দেওয়ালেও বড় বড় ফাটল ধরেছে। ফলে, গেটটিও নতুন করে তৈরি করা হবে। এমনিতে এই সংশোধনাগারে ৯৮ জন পুরুষ এবং ৮ জন মহিলা-বন্দি থাকার কথা। কিন্তু অন্যান্য জেলের মতো এখানেও অতিরিক্ত আসামী রাখতে হয়।

জেলার রাহুল বর্মন জানান, সংস্কারের সুবিধার জন্য বন্দিদের অন্য জেলে পাঠানো হয়েছে। মহিলা-বন্দিদের যে ভবনে রাখা হয়, সেটি সংস্কার করা হয়েছে। ভবনটির ছাদ ভেঙে ফেলে নতুন করে ঢালাই করা হয়েছে। অন্য ভবনটি পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেখানে নতুন ভবন তৈরির কাজ চলছে। এই ভবনটি দোতলা করা হবে।

নতুন সাজে সাজছে শ্রীরামপুর উপ-সংশোধনাগার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন