বাড়ছে বন্দির সংখ্যা

জেলের ভিতর বহাল আঁধার

হুগলি সংশোধনাগারে দুষ্কৃতী-তাণ্ডবের ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে কারারক্ষীর অপ্রতুলতা এবং সামগ্রিক পরিকাঠামোর অভাবের দিকটি সামনে এসেছে কারা বিভাগের।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৮ ০২:৪৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

বন্দির সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। কিন্তু হুগলির চার জেলে তাদের রাখার মতো পরিকাঠামো বা কারারক্ষীর সংখ্যা বাড়ছে কই?

Advertisement

হুগলি সংশোধনাগারে দুষ্কৃতী-তাণ্ডবের ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে কারারক্ষীর অপ্রতুলতা এবং সামগ্রিক পরিকাঠামোর অভাবের দিকটি সামনে এসেছে কারা বিভাগের। জেলার বাকি তিনটি জেলেরও (চন্দননগর, শ্রীরামপুর ও আরামবাগ) একই অবস্থা বলে মেনে নিয়েছেন তাঁরা। কর্মিসংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে আশ্বাস দিয়েছেন এক কারা-কর্তা।

কয়েক মাস আগে এই জেলার কুখ্যাত সমাজবিরোধী নেপু গিরিকে হুগলি জেল থেকে অন্যত্র স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেন জেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কেন তাকে সরানো হবে, এই প্রশ্ন তুলে সেখানে তুলকালাম বাধায় জেলবন্দি নেপুর শাগরেদরা। জেলকর্মীদের মারধর, জেলের রান্নাঘর, গেট, লাইব্রেরি, অফিস-ঘরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ— কিছুই বাকি রাখেনি তারা।

Advertisement

ওই জেলের রক্ষী ও কর্মীরা কেন বন্দিদের সামলাতে পারলেন না, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই কারা বিভাগের কর্তারা দেখেন, ওইসব মারমুখী দুষ্কৃতীদের সামলানো আদপেই সম্ভব ছিল না কারারক্ষীদের। কারণ, তাঁরা সংখ্যায় ছিলেন খুবই কম। কারা বিভাগের পরিসংখ্যান বলছে, ওই জেলে প্রায় ৫০০ জন বন্দি থাকে। তার মধ্যে অন্তত ১০০ জন সাজাপ্রাপ্ত, বাকিরা বিচারাধীন। সেখানে কারাকর্মীর সংখ্যা মাত্র ৫৫। অথচ, থাকার কথা ৬৫ জনের। আরামবাগ জেলে গড়ে ৬৬ জনেরও বেশি বিচারাধীন বন্দি থাকে। থাকার কথা ৩০ জনের। সেখানে কর্মী রয়েছেন মাত্র ১৮ জন। কর্মী-সঙ্কটের একই ছবি রয়েছে শ্রীরামপুর এবং চন্দননগর জেলেও।

কিন্তু শুধু কারারক্ষীর সংখ্যা বাড়ালেই সব সমস্যা মিটবে না বলে মনে করছেন ওই সব জেলের কর্তৃপক্ষের একাংশ। কারণ, জেল এখন সংশোধনাগার। পরিকাঠামোর অভাবে বন্দিরা কতটা সংশোধনের সুযোগ পাচ্ছে, এ প্রশ্নও উঠছে। ওই সব জেল কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, স্বাধীনতার পরে তৈরি জেলগুলিতে বন্দিদের রাখার পরিকাঠামো বাড়িয়ে তোলা বা আধুনিকীকরণ কোনওটাই হয়নি। নেই বন্দিদের যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থাও। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি জেলে অন্তত একজন মেডিক্যাল অফিসার থাকার কথা। কিন্তু চন্দননগর, আরামবাগ এবং শ্রীরামপুর জেলে কোথাও মেডিক্যাল অফিসার নেই। আরামবাগে কাজ চালান এক ফার্মাসিস্ট। সব জায়গাতেই তাই অ্যাম্বুল্যান্স রাখা থাকে। কোনও বন্দি অসুস্থ হলে সেই অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে সোজা সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

চন্দননগর জেলের পরিসর ছোট। সেখানে খেলার মাঠ পর্যন্ত নেই। কয়েক মাস আগে পর্যন্ত সেখানে বন্দিদের বিনোদনের সামান্য টিভি পর্যন্ত ছিল না। তবে সম্প্রতি টিভি এসেছে। বন্দিদের হাতের কাজের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা নেই চার জেলেই। কারাকর্তারা মানছেন, যথাযথ ভাবে সংশোধনাগার গড়ে তুলতে হলে পরিকাঠামো আরও বাড়ানো প্রয়োজন। এ নিয়ে এক বিভাগীয় কর্তা বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে বহু জেলেই পরিকাঠামোয় হাত পড়েনি। যেখানে হাত দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজনের তুলনায় তা নগণ্য। তবে, বিষয়টি দফতরের নজরে রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন