জাহাঙ্গিরের স্বর্ণমুদ্রা ছিল রথে নজরানা 

শ্যামানন্দের জীবতত্ত্বের ব্যখ্যা শুনে অত্যন্ত খুশি হয়ে বৈষ্ণবক্ষেত্র গোপীবল্লভপুরের বার্ষিক উত্সবের জন্য সাহায্য পাঠাতেন বাদশাহ। গোপীবল্লভপুরের আগের নাম ছিল কাশীপুর। কাশীপুরের নাম পরিবর্তন করে গোপীবল্লভপুর নামটি প্রবর্তন করেন শ্যামানন্দ। কৃষ্ণের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। সেই মন্দিরের নাম গোবিন্দজিউ মন্দির। সপ্তদশ শতক জুড়ে এক উল্লেখযোগ্য বৈষ্ণবক্ষেত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে গোপীবল্লভপুর। শ্যামানন্দের উদ্যোগেই গোপীবল্লভপুরে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করে নিত্যসেবা শুরু হয়। শুরু হয় বার্ষিক রথ উত্সব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গোপীবল্লভপুর শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৮ ০৮:২০
Share:

সজ্জা: সাজছে রথ। নিজস্ব চিত্র

বয়স প্রায় চারশো বছর। শ্রীপাট-গোপীবল্লভপুরের রথযাত্রার জৌলুসে ভাটা পড়লেও ঐতিহ্য অমলিন। জগন্নাথের রথযাত্রা উত্সবের জন্য এখানে প্রতি বছর স্বর্ণমুদ্রা পাঠাতেন মুঘল বাদশাহ জাহাঙ্গিরও!

Advertisement

গোপীবল্লভপুরের বৈষ্ণবক্ষেত্রের প্রতিষ্ঠাতা বৃন্দাবনের পরম বৈষ্ণব শ্যামানন্দ গোস্বামী। তাঁর উদ্যোগে আনুমানিক ১৬২০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ গোপীবল্লভপুরের রথযাত্রা উত্সবের সূচনা হয়। শ্রীপাট গোপীবল্লভপুরের বর্তমান মহান্ত কৃষ্ণকেশবানন্দ দেবগোস্বামী জানালেন, সপ্তদশ দশকের গোড়ায় শ্যামানন্দ গোস্বামীর কাছে প্রতি বছর সুষ্ঠুভাবে উত্সব পালনের জন্য ও মোঘল রাজত্বের সুশাসনের প্রার্থনায় একটি করে স্বর্ণমুদ্রা পাঠাতেন মুঘল সম্রাট।

ওই সময় মোঘল সম্রাট ছিলেন জাহাঙ্গির। জনশ্রুতি, পিতা ধর্মসহিষ্ণু সম্রাট আকবরের মতো তিনিও অন্যান্য ধর্মের তত্ত্ব শুনতেন। শ্যামানন্দের জীবতত্ত্বের ব্যখ্যা শুনে অত্যন্ত খুশি হয়ে বৈষ্ণবক্ষেত্র গোপীবল্লভপুরের বার্ষিক উত্সবের জন্য সাহায্য পাঠাতেন বাদশাহ। গোপীবল্লভপুরের আগের নাম ছিল কাশীপুর। কাশীপুরের নাম পরিবর্তন করে গোপীবল্লভপুর নামটি প্রবর্তন করেন শ্যামানন্দ। কৃষ্ণের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। সেই মন্দিরের নাম গোবিন্দজিউ মন্দির। সপ্তদশ শতক জুড়ে এক উল্লেখযোগ্য বৈষ্ণবক্ষেত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে গোপীবল্লভপুর। শ্যামানন্দের উদ্যোগেই গোপীবল্লভপুরে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করে নিত্যসেবা শুরু হয়। শুরু হয় বার্ষিক রথ উত্সব।

Advertisement

জনশ্রুতি, প্রতি বছর পুরীতে রথউত্সবে জগন্নাথ দর্শনে যেতেন সপার্ষদ শ্যামানন্দ। একবার নীলাচলে যাওয়ার পথে বয়সের ভারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। জনশ্রুতি, শ্যামানন্দ ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখেন, জগন্নাথ তাঁকে বলছেন, ভক্তকে দেবতার কাছে আসতে হবে না। দেবতাই ভক্তের কাছে থাকবেন। স্বপ্নাদেশ পেয়ে পরের বছর গোপীবল্লভপুরে নিম কাঠের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করে রথযাত্রা উত্সবের সূচনা করেন শ্যামানন্দ। পুরীর মতোই মেদিনীপুরের লোকসংস্কৃতি গবেষক মধুপ দে বলেন, “বয়সের ভারে শ্যামানন্দ পুরী যেতে অসমর্থ হওয়ায় তাঁর শিষ্যদের আগ্রহে গোপীবল্লভপুরে সপ্তদশ শতকের গোড়ায় রথযাত্রার সূচনা হয়েছিল। লোকশ্রুতি অনুযায়ী, ভক্তের জন্য ভগবান নিজেই গোপীবল্লভপুরে রথ উত্সবের সূচনা করার জন্য স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন শ্যামানন্দ ও
তাঁর শিষ্যদের।”

এক সময় গোপীবল্লভপুর বৈষ্ণব ক্ষেত্রের প্রচুর ভূসম্পত্তি ছিল। তা দিয়েই অত্যন্ত জাঁকজমক করে উত্সব অনুষ্ঠান হত। তখন এলাকাটি ওডিশার ময়ূরভঞ্জের রাজার অধীনে ছিল। এখন ততটা জৌলুস না থাকলেও রথযাত্রায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন