আইনজীবীকে মারধরে অভিযুক্ত পুলিশকর্তা

চন্দননগর কোর্টে কাজ বন্ধ, ভোগান্তি

 রাস্তার মধ্যে এক আইনজীবীর সঙ্গে এক পুলিশকর্তার গোলমাল হয়েছিল বুধবার রাতে। তা-ও দু’জনের গাড়ির ঘষে যাওয়া নিয়ে। তার জেরে বৃহস্পতিবার দিনভর চন্দননগর আদালতে এসে হয়রান হতে হল শ’য়ে শ’য়ে বিচারপ্রার্থীকে! কারণ, কাজ বন্ধ করে মারধরে অভিযুক্ত পুলিশকর্তাকে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখালেন আইনজীবীরা।

Advertisement

তাপস ঘোষ

চন্দননগর শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:২০
Share:

অপেক্ষা: আদালতের বাইরে বিচারপ্রার্থীরা। নিজস্ব চিত্র

রাস্তার মধ্যে এক আইনজীবীর সঙ্গে এক পুলিশকর্তার গোলমাল হয়েছিল বুধবার রাতে। তা-ও দু’জনের গাড়ির ঘষে যাওয়া নিয়ে। তার জেরে বৃহস্পতিবার দিনভর চন্দননগর আদালতে এসে হয়রান হতে হল শ’য়ে শ’য়ে বিচারপ্রার্থীকে! কারণ, কাজ বন্ধ করে মারধরে অভিযুক্ত পুলিশকর্তাকে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখালেন আইনজীবীরা।

Advertisement

রাজ্যের সব আদালতেই মামলার পাহাড় জমে রয়েছে। শুনানি শেষ হতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মাসের পর মাস পেরিয়ে যায়। তার উপরে নানা কারণে আদালতে আইনজীবীদের কর্মবিরতি থাকে। রয়েছে ছুটিছাটাও। কিছুদিন আগেই চন্দননগর আদালতে চাঙড় ভেঙে পড়ায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বিচারকাজ। তার পরে ফের এক রাস্তার গোলমালের জেরে যে ভাবে তাঁদের হয়রান হতে হল, তাতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চন্দননগর আদালতে দূরদূরান্ত থেকে আসা বিচারপ্রার্থীরা।

বর্ধমানের বাসিন্দা রিনা রায় একটি জমি সংক্রান্ত মামলার শুনানির জন্য এ দিন ট্রেনে চড়ে সকাল ১০টা নাগাদ ওই আদালতে আসেন। কিন্তু শুনানি হবে না জানতে পেরে তিনি হতাশ। তাঁর কথায়, ‘‘এর আগেও একদিন এখানে এসে ফিরে যেতে হয়েছিল। শুনানি যে কবে শেষ হবে, কে জানে! হঠাৎ করে এ ভাবে বিচারকাজ বন্ধ হওয়াটা মেনে নিতে পারছি না।’’ এ দিন অফিস থেকে ছুটি নিয়ে আদালতে এসেছিলেন হাওড়ার শান্ত হাজরা এবং অমল সাধুখাঁ। তাঁরাও বিরক্ত। শান্তবাবুর ক্ষোভ, ‘‘আদালতে কাজ হল না, ছুটি নেওয়াও বৃথা হল।’’

Advertisement

বিচারপ্রার্থীদের এই হয়রানির জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন ওই আদালতের সিভিল বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অশোক দে। তিনি বলেন, ‘‘বিচারপ্রার্থীরা এসে ফিরে গিয়েছেন, এতে খারাপ লাগছে। কিন্তু যে ভাবে এক পুলিশকর্তা আমাদের এক সহকর্মীকে মারধর করেছেন, হুমকি দিয়েছেন, তার একটা বিহিত হওয়া দরকার। এ জন্যই প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।’’

কী ঘটেছিল বুধবার রাতে?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাত ১১টা নাগাদ শুভদ্যুতি পান নামে চন্দননগর আদালতের ওই আইনজীবী মোটরবাইকে ভদ্রেশ্বর থেকে মানকুণ্ডুতে বাড়ি ফিরছিলেন। ভদ্রেশ্বরের রেলপুলের নীচে দিয়ে ফেরার সময়ে তিনি যানজটে পড়েন। ভদ্রেশ্বরের অরবিন্দ পল্লির বাসিন্দা, কলকাতা পুলিশের ইনটেলিজেন্স শাখার ডিএসপি শোভন অধিকারীও ফেরার সময়ে ওই যানজটে আটকে পড়েছিলেন। শুভদ্যুতিবাবু কোমনও মতে বেরনোর সময়ে তাঁর মোটরবাইকটির সঙ্গে শোভনবাবুর গাড়ির ঘষা লাগে। এর জেরে শোভনবাবুর গাড়ি-চালকের সঙ্গে শুভদ্যুতিবাবুর বচসা বাধে। শুভদ্যুতিবাবুকে ওই চালক মারধরও করেন বলে অভিযোগ। গোলমাল না-থামা য় গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন ওই পুলিশকর্তা। এর পরে শুভদ্যুতিবাবুর সঙ্গে তিনিও বিবাদে জড়িয়ে পড়েন।

ওই আইনজীবীর অভিযোগ, চালকের পক্ষ নিয়ে ওই পুলিশকর্তা তাঁকে জনসমক্ষে কটূক্তি ও মারধর করেন। শুনতে হয় হুমকিও। গোলমাল থামাতে ওই পুলিশকর্তাই ভদ্রেশ্বর থানায় ফোন করেন। পুলিশ আসে। স্থানীয় লোকজনও চলে আসেন। তখনকার মতো বিষয়টি মিটে গেলেও শুভদ্যুতিবাবু ঘটনার কথা তাঁর চন্দননগর আদালতের সহকর্মীদের জানান। ওই রাতেই আদালতের আইনজীবী, ল’ক্লার্ক এবং সাধারণ কর্মীরা ভদ্রেশ্বর থানায় আসেন। ওই পুলিশকর্তা এবং তাঁর চালকের বিরুদ্ধে এফআইআর করেন শুভদ্যুতিবাবু। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি ওঠে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আদালতের গেটে তালা ঝুলিয়ে শুরু হয় বিক্ষোভ। অভিযু্ক্ত পুলিশকর্তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না-নেওয়া হলে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যাবেন, এমন হুঁশিয়ারিও দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা।

আইনজীবী শুভদ্যুতিবাবু বলেন, ‘‘আগের রাতে আমি ওই পুলিশকর্তার গাড়িকে কাটিয়ে এগোচ্ছিলাম, এটাই আমার অপরাধ ছিল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওঁরা চড়াও হলেন। শোভনবাবু সমস্যার সমাধানের কোনও চেষ্টা করলেন না।’’ চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কিন্তু এই ঘটনার জন্য আদালতে কাজ বন্ধ করে কার লাভ হল, বিচারপ্রার্থীদের এটাই প্রশ্ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন