River Planning

গ্রাম বাঁচাতে ফের আমরণ অনশনে ‘অনশন দাদা’

সুশীলবাবু অভিযোগ, “গত কয়েক বছর ধরে বন্যায় প্রায় ২৫০ বিঘা জমি, বাগান, বসত বাড়ি তলিয়ে গিয়েছে। উত্তরে নদীতীরে বোল্ডার পাইলিং-এর বহু আবেদন নিবেদন করেছি। কাজ হয়নি। অগত্যা জন্মভূমিকে রক্ষার জন্য অনশনে বসছি।”

Advertisement

পীযূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৮ ০২:৪১
Share:

লড়াই: গ্রামবাসীদের একাংশকে নিয়ে শুরু অনশন। বুধবার সালেপুরে। নিজস্ব চিত্র

এ বার নদীগ্রাস থেকে গ্রাম বাঁচাতে অনশন শুরু করেছেন ‘অনশন দাদা’। সঙ্গে গ্রামেরই কয়েকজন মানুষ। গত ১০ বছরে নিজের গ্রামে উন্নয়নের নানা দাবি দাওয়া নিয়ে অনশনে বসেছেন তিনি। এই নিয়ে ৬ বার। বছর ছাপান্নর সুশীলকুমার জানা প্রশাসনের অন্দরমহলে ‘অনশন দাদা’ নামেই পরিচিত।

Advertisement

আরামবাগের সালেপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামে দ্বারকেশ্বরের বাঁধে কাছেই বিষ্ণু-শীতলা-মনসা মন্দির প্রাঙ্গণে সুশীলবাবু-সহ মোট ১৩ জন গ্রামবাসী আমরণ অনশন শুরু করেছেন বুধবার সকাল ১১টা থেকে। গ্রামটি সালেপুর ১ পঞ্চায়েতের অধীন। তাঁদের দাবি, দ্বারকেশ্বর নদের ভাঙ্গন রুখতে বোল্ডার পাইলিং করতে হবে।

সুশীলবাবু অভিযোগ, “গত কয়েক বছর ধরে বন্যায় প্রায় ২৫০ বিঘা জমি, বাগান, বসত বাড়ি তলিয়ে গিয়েছে। উত্তরে নদীতীরে বোল্ডার পাইলিং-এর বহু আবেদন নিবেদন করেছি। কাজ হয়নি। অগত্যা জন্মভূমিকে রক্ষার জন্য অনশনে বসছি।”

Advertisement

গত ৫ অক্টোবর এই অনশনের বার্তা আগাম প্রশাসনের সমস্ত স্তরে জানিয়েও দিয়েছেন তিনি। গ্রামে ১১০টি বাড়ি। লোকসংখ্যা প্রায় ৬০০। সকলেই কৃষি কাজ করেন।

পরনে ধুতি-ফতুয়া পরা রোগা ছোটখাট মানুষটিকে প্রশাসনের সকলেই চেনেন। মাথায় টিকি। কাঁধে ঝোলা ব্যাগ নিয়ে পঞ্চায়েত বা ব্লক অফিসে ঢুকলেই অনশনের আতঙ্ক গ্রাস করে কর্তাদের, বলছেন পঞ্চায়েতের কর্মীরা।

পঞ্চায়েত এবং ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এর আগে তাঁর প্রতিটি অনশনই সফল হয়েছে। ২০০৯ সালে গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য অনশন করেছিলেন তিনি। সে বারও দীর্ঘ আবেদন-নিবেদনে ফল না মেলায় অনশনে বসেন তিনি। তৎকালীন বিধায়ক সিপিএমের বিনয় দত্ত গিয়ে আশ্বাস দিয়েছিলেন। দাবি পূরণ হয়েছিল। ওই বছরেই তাঁর অনশনের জেরে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রও পেয়েছিল গ্রাম।

বছর দুই পর একই উপায়ে চাষাবাদের জন্য রিভারপাম্পও মিলেছিল। ২০১৪ সালে ৩০০ মিটার রাস্তার দাবিতে বিডিও অফিসে অনশন করেছিলেন সুশীলবাবু। সে বার কংক্রিটের রাস্তা তৈরি করে দিতে বাধ্য হয়েছিল প্রশাসন। এমনকি বেআইনি বালি এবং মাটি তোলার বন্ধের দাবিতেও অনশন করেছেন তিনি। সে সময় পদক্ষেপ করেছিল। এখন অবশ্য ফের বিক্ষিপ্তভাবে বালি পাচার হচ্ছে বলে সুশীল জানা অভিযোগ করেছেন।

এ দিন অনশনে বসেছেন বরুণ ঘোড়ুই, অভিরাম ভৌমিক, নন্দকুমার সাউ, সঞ্জিত বেরা, নবকুমার সাউ, বিকাশ চৌধুরী, জয়দেব শাসমলরা। তাঁদের কথায়, “দরখাস্ত করে, স্মারকলিপি জমা দিয়ে প্রশাসনের দরজায় হত্যে দিয়ে কোন কাজ হওয়ার নয়। দাবি মেটাতে অনশনই একমাত্র রাস্তা। ভোট বয়কটে কাজ হয়।”

সুশীলবাবুদের অনশন নিয়ে আরামবাগ বিডিও বিশাখ ভট্টাচার্য বলেন, “তাঁদের দরখাস্ত পেয়েছি। মঙ্গলবার অনশন সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের কথাও তাঁরা লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। তাঁদের দাবির বিষয়টা বিবেচনার জন্য সেচ দফতরে পাঠানো হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন