কুকুরের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে অভিযোগ তুলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পান্ডুয়ার রাস্তায়। ছবি: সুশান্ত সরকার
লালগড়ের বাঘের মতো সে-ও বেপাত্তা! কিন্তু আতঙ্ক রয়ে গিয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত একটি খয়েরি রঙের ‘পাগলা’ কুকুর তাণ্ডব চালিয়েছে আরামবাগ শহর এবং সংলগ্ন এলাকায়। তার কামড়ে জখম হয়েছেন ২৭ জন। তার পর থেকে আর কোনও হামলার খবর মেলেনি। শনিবার বিকেল পর্যন্ত দেখাও যায়নি কুকুরটিকে। কোথায় গেল সে!
মহকুমা প্রশাসন এবং পুরসভার কর্তারা মনে করছেন, কুকুরটি সম্ভবত খানাকুলের বন্দর এলাকায় চলে গিয়েছে। খানাকুল-১ এবং ২ ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েতের প্রধানদের এ নিয়ে সতর্কও করা হয়েছে। তবু ভয় যাচ্ছে না আরামবাগ শহরের বাসিন্দাদের। খয়েরি কুকুর দেখলেই পথচারীরা সিঁটিয়ে যাচ্ছেন। সন্তর্পণে পথ চলছেন।
আরামবাগের পুরনো বাজার পাড়ার বাসিন্দা শ্যামল দত্তের ক্ষোভ, “বেওয়ারিশ কুকুর নিয়ে এমনিতেই সমস্যা রয়েছে। এখন আবার পাগলা-কুকুরের উপদ্রব। পুরসভা কতটা কী করছে বোঝা যাচ্ছে না।” পুরপ্রধান স্বপন নন্দী জানিয়েছেন, সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজা হচ্ছে। রাজ্য স্তরেও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
শুধু আরামবাগেই নয়, গোটা হুগলি শহরাঞ্চলেই পথ-কুকুরের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। কী ভাবে এই বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা নিয়ে চিন্তিত পুরপ্রধানেরা। কারণ, পথ-কুকুর নিয়ন্ত্রণে পুরসভাগুলির কোনও বরাদ্দ নেই। অথচ, সাধারণ মানুষের অভিযোগ আসছে ঘন ঘন। পরিস্থিতি সামলাতে স্বপনবাবুর মতো সরকারেরই মুখাপেক্ষী হচ্ছেন অন্য পুরপ্রধানেরা। উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘সালকিয়াতে পথ-কুকুর কমাতে হাওড়া পুরসভা ব্যবস্থা নিয়েছে। আমি ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করব। উত্তরপাড়াতেও পথ-কুকুরের সংখ্যা বাড়ছে। এই খাতে সরকারি বরাদ্দ হলে ভাল হয়।’’ কোন্নগরের পুরপ্রধান বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘আমরাও সমস্যার সমাধান খুঁজছি।’’
সমস্যাটা যে জটিল, মানছেন অনেকেই। পথ-কুকুর বাড়লে এক শ্রেণির মানুষ বিরক্ত হন। অনেকে আবার অবলা জীব বলে পথ-কুকুরদের প্রতি স্নেহপ্রবণ। এ নিয়ে দু’পক্ষের অশান্তির নজিরও রয়েছে। কিছুদিন আগেই ব্যারাকপুরের পানপুরে একটি পথ-কুকুরকে পিটিয়ে মারা হয়। প্রতিবাদ করায় নিগৃহীত হন এলাকারই এক মহিলা। বিষয়টি গড়ায় দিল্লি পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার চন্দননগরের বড়ালবাগানেও পথ-কুকুরদের খাওয়ানোর ‘অপরাধে’ একটি পরিবারকে মারধর এবং তাঁদের বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে কয়েক জনের বিরুদ্ধে।
কোন্নগর স্টেশন থেকে সাইকেলে পাঁচ মিনিটের দূরত্বে বাড়ি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি কুকুর নিয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতার সাক্ষী। অভিজিৎবাবু বলেন, ‘‘হাওড়া থেকে রাত সাড়ে দশটার ট্রেন ধরতে না-পারলে বুক দুরু দুরু করে। বাড়ি ফেরার সময় কিছু কুকুর পিছু নেয়। কিন্তু কটা কুকুরকে বিস্কুট দিলেই ঝাঁকে ঝাঁকে হাজির! বিস্কুট নিয়ে ওরা মারপিট করে। ভয়ে দৌঁড়তেও পারি না। রাস্তার কুকুর বাগে আনতে সত্যিই ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।’’ উত্তরপাড়ার মালিকপাড়া এলাকার এক বাসিন্দা এ জন্য পুরসভাকেই দুষছেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘দোষটা কি ওই অবলা প্রাণীদের? সমস্যা পরিকাঠামোর। এত কিছু হচ্ছে, আর রাস্তার কুকুর নিয়ন্ত্রণে পুরসভা কিছু করতে পারছে না?’’
কোন্নগরের পুরপ্রধান অবশ্য ইতিমধ্যে পথ-কুকুরদের নির্বীজকরণের জন্য কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যদের চাঁদা তুলে ইঞ্জেকশনের খরচের ব্যবস্থা করছেন। কিন্তু তিনিও মানছেন, এ ব্যবস্থা বেশিদিন চলতে পারে না। তাই রাজ্য সরকারেরই মুখাপেক্ষী তাঁরা।