Lockdown. Coronavirus

দুই জেলায় সফল লকডাউন, কড়া নজরদারিতে ‘আটক’ উর্দিধারীও

প্রহরার নেতৃত্বে হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের ডিএসপি (ডিআইবি) দীপক সরকার। উর্দিধারী মহিলা জানালেন, তিনি হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের কর্মী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

উলুবেড়িয়া-চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২০ ০৪:৫৫
Share:

তারকেশ্বরের চাউলপট্টিতে পুলিশের তৎপরতা। ছবি: দীপঙ্কর দে

একটি স্কুটারে তিন জন। মাঝের জন মহিলা। প্রত্যেকেই হেলমেটহীন। মহিলার পরণে খাকি উর্দি। বুধবার সকাল ৭টা নাগাদ বাগনানের লাইব্রেরি মোড় পুলিশের নাকা চেকিংয়ের সামনে স্কুটারটিকে থামতে হল।

Advertisement

প্রহরার নেতৃত্বে হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের ডিএসপি (ডিআইবি) দীপক সরকার। উর্দিধারী মহিলা জানালেন, তিনি হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের কর্মী। পানিয়াড়ায় সদর দফতরে কাজে যোগ দিতে যাচ্ছেন। পরিচয় দিয়েও ছাড় মিলল না। বরং ফল হল উল্টো। দীপকবাবু বললেন, এক জন পুলিশকর্মী হয়েও কেন তিনি আইন ভাঙছেন। কেন হেলমেট নেই। বলতে বলতেই তাঁর চোখ স্কুটারের সামনে সামনে ইংরেজিতে লেখা ‘পুলিশ’ শব্দটির দিকে। তাঁর পরবর্তী প্রশ্ন, ‘‘কেন লিখেছেন? ব্যক্তিগত স্কুটারে পুলিশ কথাটি লেখা যায়?’’

প্রশ্নবাণে জর্জরিত ওই উর্দিধারী-সহ বাকিদের তখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। আরোহীদের একজন স্কুটারের ‘পুলিশ’ কথাটি মুছে দিলেন। মহিলা পুলিশকর্মীটিকে অফিসার বললেন, তিনি যেন হেঁটে অফিস যান। ওই জায়গা থেকে পানিয়াড়ার দূরত্ব অন্তত ২৫ কিলোমিটার। হেঁটে এতদূর? শেষ পর্যন্ত কাকুতিমিনতিতে রেহাই মিলল।

Advertisement

বুধবার লকডাউনে হাওড়ার গ্রামীণ এলাকায় রাস্তাঘাট কার্যত ফাঁকাই ছিল। বাজার-দোকান খোলেনি। তাতেও যাঁরা পথে বেরিয়েছিলেন, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ থেকে যে রেহাই মেলেনি, এই ঘটনাই তাঁর প্রমাণ। লকডাউনে বেরনোর পাশাপাশি নিয়ম ভেঙে গাড়ি চালানো নিয়ে হাজারো প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। পুলিশের কড়া নজর এড়িয়ে লাইব্রেরি মোড় দিয়ে মাছি গলতে পারেনি! যাঁরা গাড়িতে বা মোটরবাইকে হাসপাতাল-নার্সিংহোমে বা জরুরি প্রয়োজনে গিয়েছেন, শুধু তাঁরাই ছাড় পেয়েছেন। বাকিদের পত্রপাঠ ফেরত পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালের ক্ষেত্রেও মাস্ক, হেলমেট না থাকলে ফিরে যেতে হয়েছে। যাঁদের কাছাকাছি বাড়ি, তাঁরা হেলমেট, মাস্ক পড়ে এসে তবে ‘বৈতরণী’ পার হয়েছেন।

মোটরবাইকে হাওড়ায় অফিসে যাওয়ার পথে এক বিএসএফ কর্মীও আটকা পড়েন দীপকবাবুর হাতে। সঙ্গত প্রশ্নের মুখে তিনিও বাইকের ‘বিএসএফ’ লেখা স্টিকার তুলে ফেলেন। শুধু বাগনান নয়, জেলার অন্যত্রও পুলিশের এমন কড়াকড়ি দেখা গিয়েছে। গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘লকডাউনের পাশাপাশি রামের পুজোর ব্যাপারও ছিল। তাই, বাড়তি নজরদারি চালানো হয়।’’ অযোধ্যায় রামমন্দিরের শিলান্যাস উপলক্ষ্যে বিভিন্ন মন্দিরে পুজো হয়। তবে কোথাও লকডাউন ভেঙে জমায়েত হয়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে।

একে লকডাউন। তায় মাঝেমধ্যে ঝেঁপে বৃষ্টি। জোড়া বাধায় এ দিন হুগলিতেও রাস্তাঘাট ছিল শুনশান। অকারণে রাস্তামুখো হলে পুলিশের ধরপাকড় অব্যাহত ছিল। চন্দননগরের সিপি হুমায়ুন কবীর জানান, লকডাউন ভাঙায় বিকেল ৪টে পর্যন্ত ১৩১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রামীণ পুলিশ জেলার পান্ডুয়া, বলাগড়, মগরায় সকালে কয়েকটি অটো-টোটো চললেও পুলিশ বন্ধ করে দেয়। আরামবাগ মহকুমা জুড়ে রাস্তাঘাট ছিল ফাঁকা। লকডাউনের নিয়ম লঙ্ঘন করায় বিকেল পর্যন্ত ২৮ জনকে আটক করা হয় বলে এসপি তথাগত বসু জানিয়েছেন।

জেলা জুড়ে বিজেপির উদ্যোগে রামের পুজো হয়। সর্বত্র দূরত্ববিধি মানা হয়নি এবং সকলের মুখে মাস্ক ছিল না বলে অভিযোগ। বলাগড়ের শ্রীপুর গ্রামের খালপাড়ে রামপুজোর পরে খিচুড়ি বিলি করা হয়। প্রায় এক হাজার মানুষ খিচুড়ি নিতে জড়ো হন। অভিযোগ, সেখানে দূরত্ববিধির বালাই ছিল না। অনেকেই ছিলেন মাস্কবিহীন অবস্থায়। অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা বিজেপির বলাগড় মণ্ডল সভাপতি বেচু নায়েক অবশ্য এতে আপত্তির কিছু দেখছেন না। তার সাফ কথা, ‘‘পুজোর পরে প্রসাদ খাওয়ানোটাই তো রীতি। সেই জন্য খিচুড়ি করা হয়েছিল। লকডাউন মেনেই সব হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন