চিত্তরঞ্জন মল্লিক, আরামবাগের নির্দল প্রার্থী।
তিনি গ্রাম স্তরের তৃণমূল নেতা।
আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী অপরূপা পোদ্দারের ‘প্রিয় পাত্র’ হিসেবেই তাঁকে চেনেন ওই এলাকার তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
গোঘাটের খাটুল গ্রামের সেই চিত্তররঞ্জন মল্লিকই এ বার আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের একমাত্র নির্দল প্রার্থী! মনোনয়ন জমা-পর্ব শেষে চিত্তরঞ্জনের ভোটে দাঁড়ানোয় মহকুমার তৃণমূল নেতাকর্মীদের একাংশ ক্ষোভে ফুঁসছেন। কেউ এতে দলের নাম খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করছেন, কেউ ভোট ভাগ হওয়ার। তাঁদের অনেকেরই দাবি, ভোটকেন্দ্রে বেশি ‘পোলিং এজেন্ট’ পাওয়া যাবে বলে অপরূপাই তাঁর প্রিয় পাত্রকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। আর বিরোধীরা সরাসরি তৃণমূলের বিরুদ্ধে ঘুরপথে ভোট লুটের পরিকল্পনার অভিযোগ তুলছে।
অপরূপা অবশ্য চিত্তরঞ্জনকে চেনেনই না বলে দাবি করেছেন। নির্দল প্রার্থীর বিষয়ে তাঁর কাছে কোনও খবর নেই বলে দাবি করেছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত। আর নির্দল প্রার্থী বলছেন, ‘‘আমি একটাও ভোট পেতে চাই না।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তা হলে কেন প্রার্থী হলেন চিত্তরঞ্জন?
চিত্তরঞ্জনের জবাব, ‘‘এখন কিছু বলতে পারব না। আমাকে প্রার্থী করা নিয়ে শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়ায় দেখি। অনেক শত্রুতা হচ্ছে। আমি চাইছি না এখন কোনও বিতর্ক হোক। আমাকে যাঁরা দাঁড় করিয়েছেন, তাঁদের রাগ হবে। আমার নাম নির্দল প্রার্থী হিসেবে বাছাটাই একটা গর্বের বিষয়।”
দলের প্রতি বা প্রার্থীর প্রতি কোনও ক্ষোভ?
এ প্রশ্নেও উত্তর এল, ‘‘না।’’ চিত্তরঞ্জন বলেন, ‘‘তৃণমূলের যেমন ভক্ত ছিলাম, তেমনই আছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা সবাই ভাল। গত বারে সাংসদ হিসাবে অপরূপা পোদ্দার তো অনেক উন্নয়ন করেছেন। আমার প্রিয় নেত্রী তিনি।”
গোঘাটের তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের দাবি, সেখানকার দলীয় বিধানসভা কমিটির নেতৃত্বের সঙ্গে কোনও আলোচনা না-করেই চিত্তরঞ্জনকে নিজে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করান অপরূপা। এমনকি, তফসিলি প্রার্থী হিসেবে তাঁর ‘নমিনেশন ফি’-র ১২ হাজার ৫০০ টাকাও অপরূপাই দিয়েছেন। চিত্তরঞ্জনকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করানোর জন্য জেলা নেতৃত্বের কাছে তাঁরা দরবার করেছেন বলেও জানিয়েছেন।
এক তৃণমূল নেতার আশঙ্কা, ‘‘দলেরই নেতাকে নির্দল প্রার্থী দেখে ভুল বুঝে বিক্ষুব্ধদের অনেক ভোটই চলে যেতে পারে।” আরামবাগের প্রথম সারির এক নেতা বলেছেন, “এ বারে অন্য প্রার্থী চাওয়া হয়েছিল। তা হয়নি। অন্তর্ঘাত হওয়ার কথা মাথায় রেখে বিকল্প পোলিং এজেন্টের জন্যই এই কাণ্ড করেছেন অপরূপা। কিন্তু এমন একজনকে নির্দল হিসাবে দাঁড় করানো হয়েছে, যাতে হিতে-বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।”
কী বলছেন বিরোধীরা?
চিত্তরঞ্জন গত ১২ এপ্রিল দুপুরে জেলাশাসকের অফিসে মনোনয়ন পত্র জমা দেন। একই সময়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন অপরূপাও। সে দিন অপরূপা বেরিয়ে আসার পরে সিপিএম প্রার্থী শক্তিমোহন মালিক মনোনয়নপত্র জমা দেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দলের আরামবাগ এরিয়া সম্পাদক পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ‘‘নির্দল প্রার্থীর কাগজপত্র তৃণমূল প্রার্থীর সঙ্গে আসা লোকজনই তৈরি করে দিচ্ছিলেন।’’ একই সঙ্গে পূর্ণেন্দুবাবুর অভিযোগ, “বুথে নিজেদের বেশি লোক রেখে ভোট লুটকে আইনসিদ্ধ করতেই এই পরিকল্পনা করেছে তৃণমূল। লুটপাটের পরে প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশনের কাছে নির্দল প্রার্থীর এজেন্ট দিয়ে বলানো হবে, ভোট সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়েছে।”
বিজেপির আরামবাগ জেলা সভাপতি বিমান ঘোষ বলেন, ‘‘নিজেদের বেশি লোক ঢুকিয়ে বুথ দখল করে ছাপ্পা মারার ছক করেছে তৃণমূল। কিন্তু এ বার ওদের কোনও পরিকল্পনাই সফল হবে না।”