লোকসভা নির্বাচনের আজ, সোমবার রাজ্যে পঞ্চম দফায় যে সাত কেন্দ্রে ভোট হতে চলেছে তার মধ্যে পাঁচটিই দুই জেলার (হুগলির শ্রীরামপুর, আরামবাগ এবং হুগলি। হাওড়ার উলুবেড়িয়া এবং হাওড়া সদর)। দুই জেলার সব বুথেই মোতায়েন থাকছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হলে দ্রুত তা মোকাবিলায় কুইক রেসপন্স টিম এবং রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াডকেও রাখা হচ্ছে।
হুগলির চন্দননগর কমিশনারেট এলাকায় মোট ৫২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকছে। এ ছাড়া, রাজ্য পুলিশের ১৯৮০ জন কর্মী-অফিসারও থাকছেন। ১৪টি কুইক রেসপন্স টিম এবং ১৩টি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াডও থাকছে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ভোটের লাইন বাদে কোথাও অবাঞ্ছিত লোক জড়ো হওয়া চলবে না। ভোটগ্রহণ চলাকালীন ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। একসঙ্গে পাঁচ জনের বেশি জড়ো হলে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, অন্য জেলার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়, গঙ্গার এমন খেয়াঘাট পুলিশের তরফে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাতে ভিন্ জেলা থেকে উটকো লোক এসে গোলমাল পাকাতে না-পারে। সড়কপথে অন্য জেলার সীমানা-সহ মোট ২৮টি জায়গায় ‘নাকা চেকিং’-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। চন্দননগর, চুঁচুড়া এবং শ্রীরামপুরে পুলিশের বিশেষ বাহিনী মোতায়েন রাখা হচ্ছে, যাতে কোনও বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হলে তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারে।
কমিশনারেটের ডিসি (সদর) বৈভব তিওয়ারি বলেন, ‘‘পুলিশ সকাল থেকেই নজরদারি চালাবে যাতে বাইরের গাড়ি ঢুকতে না পারে। জেলার সীমানা এবং খেয়াঘাটে বিশেষ নজর থাকবে। বাইরে থেকে জেলায় ব্যবসা বা অন্য কোনও কাজে কেউ আসতেই পারেন। তবে পুলিশ নিশ্চিত হলে তবেই তাঁকে ছাড়বে।’’
হুগলি গ্রামীণ পুলিশের ১৬টি থানা এলাকার জন্য মোট ১৫৩ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছে। তার মধ্যে এক কোম্পানিকে রাখা হচ্ছে স্ট্রং-রুমের দায়িত্বে। প্রতিটি থানা এলাকায় দু’টি করে কুইক রেসপন্স টিম থাকছে। খানাকুল, গোঘাট, আরামবাগ এবং তারকেশ্বরের জন্য বাড়তি আটটি কুইক রেসপন্স টিম থাকছে। কারণ, ওই জায়গাগুলি বিশেষ ভাবে ‘স্পর্শকাতর’। এ ছাড়াও রাজ্য পুলিশের ১৬৮৩ জন হোমগার্ড, ১১৫৭ জন লাঠি ও কাঁদানে গ্যাসধারী পুলিশ এবং ৯৫০ জন সশস্ত্র পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হচ্ছে। কোথাও বিশেষ পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য থাকছে রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড।
গ্রামীণ পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় মোট ৫৮টি জায়গায় নাকা-চেকিংয়ের ব্যবস্থা থাকছে। বিশেষ ভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে জেলার সীমানা এলাকাগুলিতে। কোনও জায়গায় অবাঞ্ছিত জমায়েত বা গোলমালের পরিস্থিতি হলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
এ দিন বিভিন্ন জায়গার ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার থেকে ভোটসামগ্রী নিয়ে ভোটকর্মীরা বুথের দিকে রওনা হন। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়ে চুঁচুড়ায় জেলা প্রশাসনের প্রধান দফতর থেকে মহকুমাশাসক বা বিডিও দফতরগুলিতে ছিল চূড়ান্ত ব্যস্ততা। ভোটকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাহারায় তাঁদের বুথে পৌঁছনোর দাবি থাকলেও প্রশাসন সর্বত্র সেই ব্যবস্থা করেনি। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ভোট যাতে নির্বিঘ্নে এবং সুষ্ঠু ভাবে হয়, সে জন্য সব ব্যবস্থাই
করা হয়েছে।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, কড়া পুলিশি নিরাপত্তার পাশাপাশি বিভিন্ন বুথে সিসি ক্যামেরার নজরদারি ছাড়াও লাইভ ওয়েবকাস্টিং এবং ভিডিওগ্রাফির ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাইক্রো অবজার্ভাররা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখবে। স্পর্শকাতর কেন্দ্রে থাকবে বাড়তি নজরদারি।
হাওড়ার উলুবেড়িয়া কেন্দ্রে মোট ভোটার ১৬ লক্ষ ১৪ হাজার ৩৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮ লক্ষ ৩১ হাজার ৫৯৩ এবং মহিলা ভোটার ৭ লক্ষ ৮২ হাজার ৪০৫। মোট বুথের সংখ্যা ১৮২৬টি। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সংখ্যা ১৩০৩টি। বহু ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে একাধিক বুথ করা হয়েছে। এই কেন্দ্রেরও কোথাও অবাঞ্ছিত জমায়েত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রতিটি বুথকেই নির্বাচন কমিশনের নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। লাইভ ওয়েবকাস্টিং, মাইক্রো অবজার্ভার, সিসিটিভি এবং ভিডিওগ্রাফির মাধ্যমে নজরদারি চালানো হবে। গোটা কেন্দ্রে মোট ৪২০ জন মাইক্রো-অবজার্ভার থাকছেন। তাঁরা ৮১৫টি বুথে কাজ করবেন। ৬৩৮টি বুথে থাকছে সিসিটিভি। ৩০১টি বুথে থাকছে লাইভ ওয়েবকাস্টিং এবং ১১৪টি বুথে ভিডিওগ্রাফির ব্যবস্থা। এ ছাড়াও থাকছেন সাধারণ পর্যবেক্ষক ও পুলিশ পর্যবেক্ষক। তাঁদের কাছেও নির্বাচন সংক্রান্ত অভিযোগ জানানো যাবে। কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম এবং বিজেপি-সহ মোট ১০ জন প্রার্থী এই কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কার ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে তা অবশ্য জানা যাবে আগামী ২৩ মে গণনার শেষে।
উলুবেড়িয়া লোকসভার সঙ্গেই উপ-নির্বাচন হচ্ছে উলুবেড়িয়া পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রেও। এই কেন্দ্রের বিধায়ক হায়দর আজিজ সফির মৃত্যুতে এই উপ-নির্বাচন। ভোট নেওয়া হবে মোট ২৪১টি বুথে। এখানেও প্রতিটি বুথে থাকছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। থাকছে নির্বাচন কমিশনের নজরদারিও। এই কেন্দ্রের ভোটাররা আজ দু’বার ভোট দেবেন। একবার লোকসভার জন্য, একবার বিধানসভার জন্য।