সোমবার শ্যামপুরে অমিতের সভায় উপচে উড়ল ভিড়। ছবি: সুব্রত জানা
একটি জনসভায় মানুষ এসেছিলেন হাতে গোনা। আর এক সভায় উপচে পড়া ভিড়!
তিন দিনের ব্যবধানে বিজেপির দুই হেভিওয়েট নেতার নির্বাচনী সভার দু’রকম ছবি দেখল হাওড়া। গত ১৮ এপ্রিল আমতায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের জনসভায় তেমন লোক হয়নি। কিন্তু সোমবার শ্যামপুরে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের সভাস্থল কানায় কানায় পূর্ণ ছিল।
কী ভাবে বদলে গেল ছবি?
বিজেপির গ্রামীণ জেলা কমিটির নেতাদের একাংশের দাবি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো এত বড় মাপের নেতার সভা হাওড়ায় এর আগে হয়নি। ফলে, তাঁর আসার প্রশাসনিক তোড়জোড় করার জন্য লোক আনার দিকে আর নজর দেওয়া যায়নি। মাত্র তিন দিনের মধ্যে হেলিপ্যাডের জন্য জমি দেখা, তা তৈরি করা, পূর্ত-সহ বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে হেলিকপ্টার নামার অনুমতির ব্যবস্থা করা— এ সব দিকে তাঁদের বেশি সময় খরচ করতে হয়।
দলের একাংশ অবশ্য মনে করছেন, ওই সভায় দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে অন্তর্ঘাত হয়েছে। অনেকে সভার খবর পাননি। ফলে, লোক আসেননি। এ কথা মানতে চাননি দলের (গ্রামীণ) জেলা সভাপতি অনুপম মল্লিক। তিনি বলেন, ‘‘ওই সভাটি হয় দুপুর ১২টায়। সে দিন যে অত চড়া রোদ থাকবে, তা আমরা কল্পনা করতে পারিনি। ফলে, মানুষ আসবেন কী ভাবে? কোনও অন্তর্ঘাত হয়নি।’’ তবে, রাজনাথের আসার কথা সাধারণ মানুষ যে সে ভাবে জানতে পারেননি তা মেনে নিয়েছেন অনুপমবাবু। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ব্যস্ত ছিলাম ওই সভার প্রশাসনিক কাজ করতে। ফলে, সমর্থকদের খবর দেওয়ার জন্য যতটা সময় দেওয়া উচিত ছিল, তা পারিনি।’’
বিজেপির গ্রামীণ জেলা কমিটি সূত্রের খবর, ওই দিন কম লোক দেখে রাজনাথ ক্ষুব্ধ হন। খবর যায় দিল্লি পর্যন্ত। তারপরেই অমিত শাহের সভার তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নেন রাজ্য নেতৃত্ব। তাঁদের নির্দেশেই জেলা কমিটির সদস্যেরা মাঠে নেমে পড়েন। প্রথমেই ঠিক হয়, শ্রোতাদের রোদ থেকে বাঁচাতে সভাস্থলে ছাউনির ব্যবস্থা করা হবে। সেই পরিকল্পনা মাফিক সোমবার সভাস্থলের প্রায় দেড় লক্ষ বর্গফুট এলাকায় প্লাস্টিকের ছাউনি দেওয়া হয়। গ্রামীণ জেলার অধীনে থাকা প্রতিটি বিধানসভা থেকে লোক আনার ব্যবস্থা করা হয়। এ দিন বাস-অটো, ছোট গাড়ি করেও কর্মী-সমর্থকেরা আসেন। শ্যামপুর-গড়চুমুক রোডেও প্রচূর মানুষ ছিলেন। সভা শেষ হওয়ার পরে বাগনান-শ্যামপুর রোড এবং শ্যামপুর-গড়চুমুক রোডে দীর্ঘক্ষণ যানজট হয়। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, এ দিনের সভায় অন্তত ৩০ হাজার মানুষ এসেছিলেন। পুলিশ তা মানেনি।
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির হেলিকপ্টার নামে বেলা সাড়ে ১১টায়। তার আগেই সভাস্থল ভর্তি হয়ে যায়। লোকসমাগম দেখে অমিত শাহের বক্তৃতাতেও ফুটে ওঠে ‘জোশ’। প্রতিটি বাক্যের মধ্যে দর্শকদের প্রশ্ন ছুড়ে দেন অমিত। দর্শকদের কাছ থেকে উত্তর নিয়ে বাক্যটি শেষ করেন। বক্তৃতার এই আঙ্গিক বেশ উপভোগ করেন দলের কর্মী-সমর্থকেরা।
সভা শেষে অমিত শাহকে নিয়ে হেলিকপ্টার আকাশে ওড়ার পরে অনুপমবাবু বলেন, ‘‘আমাদের অনভিজ্ঞতার জন্য রাজনাথ সিংহের সভায় লোক হয়নি। অমিত শাহের সভায় সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছি।’’