ফের ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে প্রচার আরামবাগে

সেই সত্তরের দশক থেকে লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচন এলে প্রায় রুটিনের মতো ও প্রকল্পটি রূপায়ণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৯ ০১:০৪
Share:

জলমগ্ন: বর্ষায় জলে ডুবে রয়েছে আরামবাগের বিস্তীর্ণ এলাকা। ফাইল ছবি

প্রতিশ্রুতিটা ফের মিলে যাচ্ছে!

Advertisement

ভোট-প্রচারে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল জুড়ে সব প্রার্থীর মুখে ফিরছে ‘ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান’ রূপায়ণের কথা। হুগলির আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রেও প্রচার পর্বে শোনা যাচ্ছে সেই একই আশ্বাস!

সেই সত্তরের দশক থেকে লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচন এলে প্রায় রুটিনের মতো ও প্রকল্পটি রূপায়ণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ২০১১ সালে প্রকল্পটি থেকে আরামবাগ মহকুমাকে বাদ দেওয়া হয়। আর এখন সেটাই তুরুপের তাস হয়েছে বিভিন্ন দলের কাছে। কেন প্রকল্প থেকে আরামবাগকে বাদ দেওয়া হল, আর ক্ষমতায় এলে প্রকল্পে আরামবাগের নাম ঢোকানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েই চলেছে ভোট টানার লড়াই।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

রাজ্য সেচ দফতর সূত্রে জানা যায়, আরামবাগ মহকুমা এবং দুই মেদিনীপুরে বন্যা নিয়ন্ত্রণে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের পরিকল্পনা বহু পুরনো। রাজ্য সরকার সত্তরের দশকে এ নিয়ে পদক্ষেপ করে। কিন্তু তা কার্যকর কিছু হয়নি। সে সময় ওই প্রকল্পের আওতায় দুই মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকার সঙ্গে খানাকুল-গোঘাট এবং আরামবাগের বেশ কিছু এলাকা ধরা হয়েছিল। ফের ২০১১ সাল নাগাদ আর্থ-সামাজিক এবং বন্যার উৎসগুলির কিছু পরিবর্তনের নিরিখে নতুন মাস্টারপ্ল্যান করা হয়। তাতে আরামবাগ মহকুমা কোনও অংশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আরামবাগ মহকুমার ছ’টি ব্লকের ৬৩টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৫৩টিই বন্যাপ্রবণ। এমনকি, আরামবাগ পুরসভার ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬টিও বন্যার সময় জলমগ্ন হয়। বহু নদীবাঁধের অবস্থা শোচনীয়। প্রায় প্রতি বছর বন্যার পর কিছু সংস্কার হয় ঠিকই, কিন্তু পরের বন্যায় ফের ভাঙে সেই বাঁধ। এলাকার বাসিন্দারা বাঁধের স্থায়ী সমাধানের দাবি করে আসছেন দীর্ঘদিন। প্রার্থীরাও বরাবর দেদার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি বলে অভিযোগ।

এ বারও যথারীতি ভোট-প্রচারে সেই ‘ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান’কে হাতিয়ার করা হয়েছে। বিজেপি প্রার্থী তপন রায়ের দাবি, “আরামবাগকে বাদ দিয়ে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান রূপায়িত হলে এলাকার সমস্ত নিকাশি জল রূপনারায়ণে পড়ার আগেই গোঘাট, খানাকুল এবং আরামবাগের বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবিয়ে দেবে। ত্রুটিপূর্ণ মাস্টারপ্ল্যানটির উপর আমরা ভরসা রাখব না। নিশ্চিত ভাবেই কেন্দ্রে আমাদের সরকার আসবে। ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান সংশোধন-সহ বন্যা নিয়ন্ত্রনে স্থায়ী সমাধান একমাত্র আমাদের দ্বারাই সম্ভব।”

তৃণমূল প্রার্থী অপরূপা পোদ্দারের বক্তব্য, “জিতলে উন্নয়ন কর্মসূচিগুলির মধ্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান রূপায়ণে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। বাদ পড়া আরামবাগ মহকুমার বেশ কিছু এলাকা এবং চন্দ্রকোণাকে যাতে ওই মাস্টারপ্ল্যানে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, সেই মতো চেষ্টা করব।”

সিপিএম প্রার্থী শক্তিমোহন মালিক বলেন, “ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে যেটুকু অগ্রগতি হয়েছিল তা আমাদের প্রচেষ্টায়। বর্তমান রাজ্য সরকার বিশাল অঙ্কের মাস্টারপ্ল্যানের নামে একটি অ্যাকশন প্ল্যান করেছে মাত্র। কয়েকটি নতুন বাঁধ নির্মাণ এবং সংস্কারের কথা বলা হয়েছিল, তারও কোনও কাজ হয়নি।” আর কংগ্রেস প্রার্থী জ্যোতি দাস বলছেন, ‘‘হুগলি জেলার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশগুলোকে বাদ দিলে মাস্টারপ্ল্যানটি অর্থহীন হয়ে যাবে। আমরা সরকারে এলে তা হতে দেব না।”

ভোটাররা বলছেন, এমন আশ্বাস নতুন নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন