প্রচার: পাঁচলায় পদযাত্রা প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের। নিজস্ব চিত্র
সপ্তাহখানেকের মধ্যে পাল্টে গেল ছবিটা!
পাঁচলায় তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছিলেন দলের নেতাকর্মীরা। এক সপ্তাহ আগেও তাঁর নামে এই এলাকায় কোনও দেওয়াল-লিখন চোখে পড়েনি। হয়নি কোনও কর্মী-বৈঠক। কিন্তু শনিবার, নিজের ৬৩ তম জন্মদিনে ওই বিধানসভা কেন্দ্রে পদযাত্রায় যেতেই কুশোডাঙা ইদগাতলায় প্রসূনকে ফুল-মালায় বরণ করলেন দলের মহিলা কর্মী-সমর্থকেরা। পুষ্পবৃষ্টি হল। দেওয়ালে-দেওয়ালে এই ক’দিনে তাঁর নামও ফুটে উঠেছে!
পাঁচলার কথা ভেবে এতদিন হাসি উবে গিয়েছিল হাওড়া সদর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী প্রসূনের। কারণ, উন্নয়নের জন্য তিনি কিছুই করেননি বলে অভিযোগ তুলেছিলেন ওই এলাকায় দলের নেতাকর্মীরা। তাতে এলাকার বিধায়ক গুলশন মল্লিকও গলা মিলিয়েছেন বলে দাবি তৃণমূলের একাংশের। শনিবার অবশ্য প্রার্থী এবং বিধায়কের মুখে হাসি ফিরেছে।
কী ভাবে বদলে গেল ছবিটা?
তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, গত সোমবার হাউলিবাগানে বৈঠকে বসেন দলের জেলা নেতৃত্ব। সেখানে ছিলেন বিধায়ক গুলশন এবং প্রসূনও। পাঁচলার বিভিন্ন অঞ্চলের দলীয় সভাপতি এবং নেতাকর্মীরা জানিয়ে দেন, প্রসূনের জন্য তাঁরা নির্বাচনের কাজ করবেন না। তাঁদের অভিযোগ, পাঁচ বছরে সাংসদ তহবিলের টাকায় পাঁচলায় কাজ হয়নি বললেই চলে। যেখানে ওই তহবিলের অন্তত পাঁচ কোটি টাকার কাজ হওয়ার কথা, সেখানে বরাদ্দ হয় মাত্র ৯৯ লক্ষ টাকা। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন কাজের সুপারিশ করতে গেলে বা কোনও শংসাপত্র আনতে গেলে সাংসদ এই এলাকার নেতাকর্মীদের আমল দেন না বলেও অভিযোগ ওঠে। বিধায়কও একই সুরে গলা মেলান বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত প্রসূন ভবিষ্যতে এমন ভুল আর হবে না-বলে কথা দেওয়ায় অভিযোগকারীরা শান্ত হন। শুরু হয় দেওয়াল লিখন ও প্রচারের কাজ। ওই বৈঠকেই গুলশন কথা দেন, তিনি এবং দলের সব স্তরের নেতাকর্মীরা প্রার্থীকে জেতাতে সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন। ওই দিনই ঠিক হয়, শনিবার পদযাত্রা এবং রোড শো-এর মাধ্যমে পাঁচলায় আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রচারের কাজ শুরু করবেন প্রসূন।
এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ দেউলপুর পঞ্চায়েতের কুশোডাঙা, সাঁকোতলা এবং জয়নগরে পদযাত্রা করেন প্রসূন। তাঁর পাশেই হাঁটছিলেন গুলশন, পাঁচলা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুল জলিল-সহ কয়েকজন নেতাও। একটি সুসজ্জিত ট্যাবলোও ছিল। পদযাত্রার ফাঁকে উন্নয়নের প্রশ্নে অবশ্য গুলশনকেই জায়গা ছাড়তে হল প্রসূনকে। তিনি বলেন, ‘‘গুলশন উন্নয়নমূলক অনেক কাজ করেছেন। তিনি অনেক পরিশ্রম করেন।’’ অভিযোগ নিয়ে প্রার্থীর দাবি, ‘‘আমিও অনেক কাজ করেছি। চাইলে তার হিসাব দিতে পারি।’’ তবে, পদযাত্রায় থাকা এক নেতা মানছেন, ‘‘কিছু করার নেই। সাংসদ তহবিলের টাকায় কাজ না-হলেও বিধায়কের জন্য উন্নয়ন তো হয়েছে। সেটা দিয়েই সাংসদের ত্রুটি ঢাকতে হবে।’’
বিধায়ক গুলশন এ নিয়ে কথা বলতে অনাগ্রহ দেখান। তিনি বলেন, ‘‘যদি কিছু তিক্ততা হয়ে থাকে তা দলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার এবং অতীত। এখন আমাদের একমাত্র কাজ প্রার্থীকে বিপুল ব্যবধানে জেতানো।’’
গুলশনের এই ‘ঝাঁপানো’ যে কথার কথা নয়, তা অবশ্য বোঝা গিয়েছে পদযাত্রা যত এগিয়েছে, তার বহর বৃদ্ধি দেখে। প্রায় তিন কিলোমিটার পদযাত্রা শেষে গুলশনকে সঙ্গে নিয়ে ট্যাবলোতে চড়ে বসেন প্রসূন। তখনও জুজারশাহ এবং গঙ্গাধরপুরে রোড শো বাকি।