এক মাসে পরপর তিন বার।
কখনও হাতুড়ির ঘায়ে মাথা ফাটছে, কখনও বা ভরা রাস্তায় জুটছে কষিয়ে থাপ্পড়। এ সবের পাশাপাশি কার্যত হজম করতে হচ্ছে ‘মেরে মাটিতে পুঁতে’ দেওয়ার মতো হুমকিও!
নিগ্রহের কেন্দ্রে বালির ট্রাফিক পুলিশ। অভিযোগ, গাড়ির চালক কিংবা যাত্রীদের হাতে লাগাতার এ ভাবেই হতে হচ্ছে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকর্মীদের। যে তালিকায় সাম্প্রতিকতম সংযোজন শুক্রবারের ঘটনা।
পুলিশের দাবি, এই সমস্ত ঘটনার মূলে রয়েছে বালি ব্রিজের দক্ষিণেশ্বর-মুখী রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়া। তার পর থেকেই বিভিন্ন গণ্ডগোল শুরু হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত এক মাসে পুলিশি হেনস্থার সবক’টি ঘটনাই বালি ব্রিজের আশেপাশের— কখনও বালি হল্ট, বালি ঘাট কখনও আবার নিমতলা মোড়়ে।
কেন বারবার ওই তিনটি জায়গাতেই এমন ঘটছে? পুলিশ সূত্রের খবর, গত এক মাসে বালিতে ট্রাফিক আইন ভাঙার ১০০টি কেস হয়ে থাকলে তার মধ্যে অন্তত ২০টি ওই তিনটি জায়গাতেই। নিচুতলার পুলিশ কর্মীরা জানান, দক্ষিণেশ্বর-মুখী রাস্তা বন্ধ থাকায় দু’নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে প্রায় তিন কিমি ঘুরে টোল প্লাজা, নিবেদিতা সেতু পেরিয়ে সেখানে যেতে হচ্ছে। এতে সময় ও টাকা দুই-ই বেশি যাচ্ছে চালকদের। ক্ষোভের আরও কারণ, সমস্ত চারচাকার গাড়িকে এতটা পথ ঘুরে যেতে হলেও শুধু বাসকে বালি হল্টের কাছ থেকে ‘স্লিপ রোড’ দিয়ে নিবেদিতা সেতুতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। টোলও দিতে হচ্ছে না তাদের।
স্থানীয় সূত্রে খবর, এতে বেজায় চটছেন চালক-যাত্রীরা। তার উপরে ওই তিনটি রাস্তার মোড়ে পুলিশি চেকিংয়ে ধরা পড়লে জরিমানা দিতে হচ্ছে। তাতে আরও ক্ষেপে যাচ্ছেন তাঁরা। অনেকের মতে, তার জেরেই এই বচসা ও মারধর। তবে কি ক্ষোভ সামাল দিতে মেরামতিই বন্ধ করে দিতে হবে, উঠছে সেই প্রশ্নও।
সমস্যার কথা মেনে নিয়ে হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) সুমিত কুমার বলেন, ‘‘অনেক ঘুরে যেতে হচ্ছে বলে বেশির ভাগ মানুষ ধৈর্য রাখতে না পেরে বিভিন্ন কাণ্ড ঘটাচ্ছেন। কিন্তু ব্রিজ তো পুলিশ বন্ধ করেনি। এটাই কাউকে বোঝাতে পারা যাচ্ছে না!’’
এ দিকে, লাগাতার নিগ্রহের ঘটনায় তিতিবিরক্ত নিচুতলার পুলিশকর্মীদের একাংশ। তাঁদের কথায়, ‘‘উর্দি পরে বারবার এ ভাবে হেনস্থা হওয়া খুবই অপমানের। এর একটা বিহিত হওয়া দরকার। প্রয়োজনে ওই সব জায়গায় আপাতত চেকিং বন্ধ করতে হবে।’’
লাগাতার নিগ্রহের ঘটনায় তা হলে ‘আক্রান্ত’ হওয়ার ভয়ে চেকিং বন্ধ করে দিয়ে কি যান চালকদের দৌরাত্ম্যকেই কার্যত প্রশ্রয় দেবে পুলিশ?
হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘যানচালকদের দৌরাত্ম্যকে প্রশ্রয় দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। ওই তিনটি জায়গায় আপাতত চেকিং কিছুটা শিথিল করা হবে। তা বলে পুরো চেকিং বন্ধ করা হবে না।’’ আপাতত বালিখাল, বালি হল্ট, নিমতলা এলাকায় চেকিং চললেও খুব বেশি কড়াকড়ি
না করার পরামর্শ দিয়েছেন ডিসি (ট্রাফিক) সুমিতবাবুও।