মিলেমিশে কাজ করুন সভাধিপতিকে পরামর্শ মমতার, ধমক কর্মাধ্যক্ষকে

হুগলি জেলা পরিষদের সভাধিপতি মেহবুব রহমানের বিরুদ্ধে খড়্গ়হস্ত দলের প্রায় সব সদস্য। কিন্তু দলনেত্রী আপাতত তাঁকে ওই পদে বহাল রাখার পক্ষেই সওয়াল করে সেই বিদ্রোহে জল ঢাললেন। তবে জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মনোজ চক্রবর্তীকে সর্তক করে দিয়েছেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৫ ০২:৩০
Share:

হুগলি জেলা পরিষদের সভাধিপতি মেহবুব রহমানের বিরুদ্ধে খড়্গ়হস্ত দলের প্রায় সব সদস্য। কিন্তু দলনেত্রী আপাতত তাঁকে ওই পদে বহাল রাখার পক্ষেই সওয়াল করে সেই বিদ্রোহে জল ঢাললেন। তবে জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মনোজ চক্রবর্তীকে সর্তক করে দিয়েছেন তিনি।

Advertisement

বুধবার রাজ্যের সদ্য নির্বাচিত কাউন্সিলরদের ভিড়েও কলকাতার নজরুল মঞ্চ সরগরম ছিল হুগলি জেলা পরিষদে দলের অন্দরের কোন্দল নিয়ে। শেষ পর্যন্ত পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে দায়িত্ব দিয়ে ওই বির্তকে ইতি টেনেছেন তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়।

হুগলিতে তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদ গঠনের শুরু থেকে বির্তক লেগেই আছে। বর্তমানে সভাধিপতির বিরুদ্ধে দলের অধিকাংশ সদস্য এককাট্টা। মাস কয়েক আগে দু’পক্ষের টানাপড়েনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয় জেলা পরিষদে। অবস্থা সামাল দিতে দলীয় নেতৃত্ব মনিটরিং কমিটি গড়ে দেন। সভাধিপতিকে ওই কমিটির সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও বির্তক থেমে থাকেনি।

Advertisement

সম্প্রতি অভিযোগ ওঠে, দফতরের ফোন থেকে সিঙ্গুরে বাড়ি তৈরির নক্‌শা অনুমোদনের জন্য এক ব্যক্তির থেকে ‘মোটা টাকা’ চাওয়া হয়েছে। জেলা পরিষদের সভায় দলের এক সদস্যা বলেন, ‘‘সভাধিপতির আপ্ত সহায়ক ওই টাকা চেয়েছেন। তিনি আদতে সিপিএমের লোক।’’ সেই নিয়ে তুমুল বিতণ্ডা হয়। জেলা পরিষদের সেই কর্মী সিঙ্গুরের ওই ব্যাক্তিকে ফোন করার কথা স্বীকার করে জানান, সভাধিপতির নির্দেশেই ফোন করেছিলেন। তবে টাকা চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

মমতা এ দিন সভাধিপতির সঙ্গে মিলিতভাবে কাজ করার বার্তা দেন দলের অন্য সদস্যদের। মেহবুবকেও ‘সবাই-কে নিয়ে’ কাজ করার নির্দেশ দেন। দলনেত্রীর কথায় তখনকার মতো কোনও সদস্য ট্যাঁ-ফো না করলেও পরে পুরমন্ত্রী ফিরহাদের সঙ্গে নজরুল মঞ্চেরই অ্যানেক্স হলে বৈঠকে ক্ষোভ উগরে দেন অনেকেই। তৃণমূল সূত্রের খবর, সেখানে সভাধিপতির সঙ্গে সরাসরি ঠিকাদারদের যোগসাজশের কথা বলা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে মন্ত্রী বেচারাম মান্না, খানাকুলের শৈলেন সিংহ-সহ জেলা পরিষদের অনেক সদস্যই সরব হন। পুরমন্ত্রী নিজেও সভাপতির উপর উষ্মা প্রকাশ করেন। কেন নানা মহলের আপত্তি সত্ত্বেও সিপিএম আমলের আপ্ত সহায়ককে বহাল রাখা হয়েছে, কেন সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য তাঁর বিরুদ্ধে গেলেন সেই প্রশ্ন তোলেন মন্ত্রী। সভাধিপতির বক্তব্য, ‘‘যা বলার দিদিই তো বলেছেন। আর দলের অন্দরে কি কথাবার্তা হয়েছে, তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে কিছু বলার নেই।’’

পূর্ত-কর্মাধক্ষ্য মনোজ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগ নিয়েও দল অস্বস্তিতে। সদস্যরা অভিযোগ তোলেন, ধনেখালির মহেশ্বরপুর মোড়ে নিকটাত্মীয়ের পানশালার সামনে কর্মাধ্যক্ষের সরকারি গাড়ি নিয়মিত লাগানো থাকে। তাতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অভিযোগ শুনে এ দিন মমতা আগামী ১৫ দিন তাঁকে সময় দেন সংশোধনের জন্য।

মনোজের অবশ্য দাবি, ‘‘ওই পানশালার সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। তা ছাড়া, আমি কি এতই বোকা যে সরকারি গাড়ি পানশালার সামনে দাঁড় করিয়ে রাখব! দিদির কাছে আমার ভাবমূর্তি খারাপ করতে ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হয়েছে। যাঁরা করেছেন, ঠিক করেননি।’’

দু’পক্ষের চাপানউতোর সামাল দিতে শীঘ্রই পুরমন্ত্রী হুগলিতে গিয়ে জেলা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। তাঁর দাওয়াইয়ে জেলা পরিষদের হাল কতটা ফেরে, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন