মনোজ খুনে ক্ষমতা কাড়ার অঙ্কও নজরে

ধৃতদের চরম শাস্তির দাবিতে এ দিন আদালত চত্বরে কয়েকশো তৃণমূল সমর্থক মারমুখী হয়ে ওঠেন। পুলিশ ও কমব্যাট ফোর্স পরিস্থিতি সামাল দেয়। ভদ্রেশ্বরের গেটবাজার এলাকায় তৃণমূল সমর্থকেরা রাজু সাউয়ের একটি ক্লাবে ভাঙচুর চালান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ভদ্রেশ্বর শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:২২
Share:

আদালতে ধৃতরা। ছবি: তাপস ঘোষ

পুরপ্রধান মনোজ উপাধ্যায় খুনের পিছনে ভদ্রেশ্বর পুরসভায় ক্ষমতার সমীকরণ কোনও কাজ করেছে কিনা, তা নিয়ে আগেই জল্পনা শুরু হয়েছিল শহরে। সেই অঙ্কও খতিয়ে দেখা শুরু করলেন তদন্তকারীরা।

Advertisement

আসনসংখ্যার নিরিখে এই পুরসভায় শাসকদলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে বিরোধীরা। মূল অভিযুক্ত রাজু চৌধুরী নির্দল কাউন্সিলর। তাঁর সঙ্গে মনোজের পুরনো বিবাদকে কাজে লাগিয়ে খুনের ছক কষা হয়েছিল কি না, সেটাও দেখছেন তদন্তকারীরা। উত্তরপ্রদেশ থেকে ধৃত রাজু-সহ তিন জনকে বুধবার চন্দননগর আদালতের এসিজেএম জয়শঙ্কর রায়ের এজলাসে হাজির করানো হয়। বিচারক ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

ধৃতদের চরম শাস্তির দাবিতে এ দিন আদালত চত্বরে কয়েকশো তৃণমূল সমর্থক মারমুখী হয়ে ওঠেন। পুলিশ ও কমব্যাট ফোর্স পরিস্থিতি সামাল দেয়। ভদ্রেশ্বরের গেটবাজার এলাকায় তৃণমূল সমর্থকেরা রাজু সাউয়ের একটি ক্লাবে ভাঙচুর চালান। সিআইডি জেরা করে জেনেছে, এই খুনের নেপথ্যে আরও কিছু দুষ্কৃতী জড়িত। ভিন্ রাজ্যের মাথাও রয়েছে। তাদের গ্রেফতার করতে সিআইডির একটি দল ফের ভিন্ রাজ্যে যাবে।

Advertisement

এর আগে তদন্তের সময় চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তারা জেনেছিলেন, মনোজের সঙ্গে রাজুর বিবাদ পুরনো। রাজুর এক আত্মীয় খুনের ঘটনায় মনোজের নাম জড়িয়েছিল। শহর থেকে খাটাল উচ্ছেদ করার জন্য মনোজের কড়া অবস্থানও মেনে নিতে পারেননি রাজু। এই কারণগুলির জন্য মনোজকে খুন করা হয় কিনা, তা খতিয়ে দেখছিলেন তদন্তকারীরা। এ বার সামনে এল রাজনৈতিক হিসেব-নিকেশও।

ভদ্রেশ্বর পুরসভায় এখন শাসকদলই সংখ্যালঘু। এই পুরসভায় মোট আসন এখন ২২। তৃণমূলের হাতে ছিল ১১টি ওয়ার্ড। পুরপ্রধান খুন হওয়ায় তা কমে হল ১০। সিপিএমের আসনসংখ্যা ৫। কংগ্রেস দু’টি, বিজেপি দু’টি, সিপিআই এবং নির্দলের হাতে রয়েছে একটি করে আসেন।

শাসকদলের নেতাদেরই কেউ কেউ মনে করছেন, এখন রাজ্যের বেশিরভাগ পুরসভাতেই তারা ক্ষমতায় রয়েছে। যে কয়েকটিতে বিরোধীদের কিছুমাত্র অস্তিত্ব রয়েছে, তারই একটি হল ভদ্রেশ্বর। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে ক্ষমতার পালাবদল হলে কিছুটা অক্সিজেন পাবে বিরোধীরা। সে ক্ষেত্রে এক জন নির্দল কাউন্সিলরকে পুরপ্রধান হিসেবে নীতিগত ভাবে সমর্থনে বিরোধীদের খুব একটা সমস্যাও হতো না। সেই কারণেও মনোজকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে।

জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘ প্রথম থেকেই বলে আসছি এই খুনের নেপথ্যে বিজেপি-র বড় মাথা রয়েছে। পুলিশের সব দিক খতিয়ে দেখা উচিত।’’ বিরোধীরা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। জেলা বিজেপি নেতা স্বপন পাল পাল্টা বলেন, ‘‘ভদ্রেশ্বরে তৃণমূলের গোষ্ঠী-বিবাদের কথা এলাকার বাচ্চারাও জানে। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্ব জানেন না। শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে সব জায়গার মতো ভদ্রেশ্বরেও এখন বিজেপির দিকে তির ছুড়ছে তৃণমূল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন