পাচার: এই ডাম্পারে মাটি বিক্রি করা হচ্ছিল অভিযোগ। —নিজস্ব চিত্র।
এক ডাম্পার মাটির দাম মাত্র ৩৫০ টাকা!
হাওড়ার কামারডাঙায় কারখানা বৃদ্ধ মালিকের আত্মহত্যার ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশের হাতে এমনই তথ্য এসেছে। পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই বৃদ্ধের কারখানা ও বাড়ির সামনে মেট্রোর সুড়ঙ্গ থেকে যে মাটি ফেলা হয়েছে, তা কেনা হয়েছিল ডাম্পার পিছু ৩৫০ টাকা দরে। পুলিশের দাবি, এক যুবকের মাধ্যমে ওই মাটি কিনেছিল স্থানীয় শিয়ালডাঙা বালক সঙ্ঘ ক্লাব। মেট্রো রেলের নির্মাণকারী সংস্থা কলকাতা মেট্রোরেল কপোর্রেশন লিমিটেড (কেএমআরসিএল) অবশ্য মাটি বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কেএমআরসিএল-এর বক্তব্য, এই মাটি কেউ বিক্রি করতে পারেন না। যদি এই ধরনের ঘটনা ঘটে, তা হলে তদন্ত করে দেখা হবে।
অভিযোগ, কামারডাঙা এলাকার ওই ক্লাবের সদস্যেরা কারখানা ও বাড়ির সামনে মাটি ফেলে দেওয়ায় তিন মাস ধরে কারখানা বন্ধ হয়ে পড়ছিল তপন মণ্ডল নামে এক কারখানা মালিকের। সেপ্টেম্বরের ২৩ তারিখ ওই মাটির উপরেই গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন ৬৫ বছরের ওই বৃদ্ধ। গত ৮ তারিখ তিনি হাওড়া জেলা হাসপাতালে মারা যান। এর পরের দিন বৃদ্ধের বাড়ির লোকজন দাশনগর থানায় স্থানীয় ক্লাবের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। এর প্রেক্ষিতে পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় (আত্মহত্যায় প্ররোচনা) মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, ওই মাটি কোথা থেকে আনা হয়েছিল এবং কাদের মদতে মেট্রোর ওই মাটি ফেলা হয়েছিল, তা তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, ওই ক্লাবের সদস্যেরা এক তৃণমূল নেতার ঘনিষ্ঠ যুবকের মাধ্যমে ডাম্পার প্রতি ৩৫০ টাকা দরে মাটি কিনে ওই জায়গায় ফেলে। প্রথমত, কেউ এ ভাবে কারও যাতাযাতের পথ বন্ধ করে দিতে পারে না। পাশাপাশি, যে জমি দখল করার জন্য এই মাটি ফেলা হয়েছিল, সেই জমির মালিক হাওড়া ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট বা এইচআইটি। একটি সরকারি রাস্তাকে এ ভাবে মাটি ফেলে মাঠ বানানো যায় না। পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় যুক্ত সমস্ত অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। আসা করা যায় তারা দ্রুত ধরা পড়বে। যদিও ঘটনার পরে তিন দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এক জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদও করেনি বা মাটি সরানোর ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপও করেনি বলে অভিযোগ।
এ ব্যাপারে হাওড়া সিটি পুলিশের এসিপি (দক্ষিণ) গুলাম সরওয়ার বলেন, ‘‘মাটি কোথা থেকে এবং কী ভাবে এসেছিল, তা তদন্ত করা হচ্ছে। সঙ্গে দেখা হচ্ছে এর পিছনে কারা রয়েছে। কিন্তু মাটি কী ভাবে সরানো হবে, তা দেখবে প্রশাসন।’’
মেট্রোর মাটি বিক্রির অভিযোগ থেকে শুরু করে মাটি সরানোর ব্যাপারে দায় নিতে অস্বীকার করেছেন কেএমআরসিএল কতৃর্পক্ষ। সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার অজয়কুমার নন্দী বলেন, ‘‘মাটি বিক্রি হচ্ছে, এই অভিযোগ ঠিক না। অভিযোগ কেউ করলে তদন্ত হবে। যে ঠিকাদার সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাদের ডেকে কথাবার্তা বলব।’’ তবে যে মাটি ওই বৃদ্ধের কারখানার সামনে পড়ে রয়েছে, তা সরানোর কোনও দায় নিতে অস্বীকার করেছেন কেএমসিআরএল কতৃর্পক্ষ। সংস্থার এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘মাটি সরানোর বিষয়ে প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে হবে। সংস্থার সঙ্গে কথা বলব।’’
এ দিকে, আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও মেট্রোর মাটি যত্রতত্র ফেলায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘দিল্লি হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে মেট্রো ঠিকাদার সংস্থাকে যে নির্দিষ্ট জায়গা চিহ্নিত করে মাটি ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল, সেখানেই মাটি ফেলা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশ না মানা হলে কেএমআরসিএলকে জবাব দিতে হবে।’’