৫০০ টাকায় ‘না’, মার লরি চালককে, চাঁদার জুলুম মহানাদে, গ্রেফতার ১

শুক্রবার রাতে পরিচিত এক বাস চালক এগিয়ে আসায় এ যাত্রায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন শেখ শাজাহান নামে পান্ডুয়ার বছর সাতাশের ওই লরি চালক। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পান্ডুয়া শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৮ ১২:০৭
Share:

ভাঙচুর চালানো হয় এই লরিতে। ছবি: সুশান্ত সরকার

কালীপুজোর জন্য পোলবার মহানাদের কাছে রাস্তায় লরি থামিয়ে ৫০০ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছিল। রাজি হননি চালক। এই ‘অপরাধে’ তাঁকে মোটরবাইক নিয়ে ধাওয়া করে ধরে রাস্তায় ফেলে লাঠি-রড, বাঁশ দিয়ে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল সেখানকারই একটি ক্লাবের কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে।

Advertisement

শুক্রবার রাতে পরিচিত এক বাস চালক এগিয়ে আসায় এ যাত্রায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন শেখ শাজাহান নামে পান্ডুয়ার বছর সাতাশের ওই লরি চালক। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাঁর সারা শরীরে কালশিটে পড়ে গিয়েছে। চোট রয়েছে মাখাতেও। তাঁর মাথার সিটি স্ক্যান করা হবে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে। হুগলি জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন বলেন, ‘‘অভিযুক্ত ক্লাবের লক্ষ্মণ বাউলদাস নামে এক সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজ চলছে। কোনও ভাবে রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে চাঁদা আদায় বরদাস্ত করা হবে না।’’

শনিবার হাসপাতালে শাজাহান বলেন, ‘‘আমার কাছে বেশি টাকা ছিল না। তাই ২০ টাকা দিতে যাই। কিন্তু ওরা শুনল না। পাঁচ-ছ’জন মিলে আমাকে মারল। জায়গাটা অন্ধকার ছিল। সব কিছু ভাল দেখতেও পাচ্ছিলাম না।’’ শাজাহানের মা মারিয়া বিবি বলেন, ‘‘ছেলে অনেক দিন ধরে লরি চালাচ্ছে। চাঁদার জন্য এমন অত্যাচার কখনও হয়নি। তা-ও কিনা বাড়ির কাছেই!’’

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পান্ডুয়ার ক্ষীরকুণ্ডীর বাসিন্দা শাজাহান লরিতে আলু তুলে শুক্রবার রাতে কাকদ্বীপ যাচ্ছিলেন। ১০টা নাগাদ মহানাদের কাছে জাততলায় তাঁকে আটকানোর চেষ্টা হয়। তিনি লরি না-থামিয়ে এগিয়ে যেতেই তিনটি মোটরবাইকে চাঁদা আদায়কারীরা ধাওয়া করে বলে অভিযোগ। কিছুটা এগিয়ে লরি দাঁড় করিয়ে দেন শাজাহান। বাইক থামিয়ে পাঁচ-ছ’জন যুবক তাঁর কাছ থেকে কালীপুজোর জন্য ৫০০ টাকা চাঁদা দাবি করে বলে অভিযোগ। শাজাহান ২০ টাকা দিতে চাওয়ায় প্রথমে তাঁকে লরি থেকে নামিয়ে চড়-থাপ্পড়, তার পরে বাঁশ, রড দিয়ে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক পেটানো হয় বলে অভিযোগ।

মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েছিলেন শাজাহান। সেই সময়ে তাঁর পরিচিত এক বাস চালক ওই রাস্তা দিয়ে বাস নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি গোলমাল দেখে বাস থামিয়ে এগিয়ে আসেন। শাজাহানকে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার করে অন্য চালকদের ডাকলে হামলাকারীরা পালায়। কিছুক্ষণের মধ্যে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় পুলিশ। আসেন লরির মালিক ঘনশ্যাম সাউ এবং শাজাহানের পরিবারের লোকেরা।

সম্প্রতি রাজ্যের ট্রাক মালিকদের সংগঠনের তরফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে দিকে দিকে ট্রাক চালকদের উপরে চাঁদার জুলুম চলছে বলে অভিযোগ জানানো হয়। মহানাদের ঘটনায় সেই ‘জুলুম’ আরও একবার সামনে এল। লরি মালিক বলেন, ‘‘লরির ব্যবসা করি বলে সব জায়গাতেই কমবেশি চাঁদা দিই। কিন্তু এমন অমানবিক মারের ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। পুলিশ দোষীদের সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক।’’

যে ক্লাবের সদস্যদের বিরুদ্ধে ওই মারধরের অভিযোগ উঠেছে, তার সম্পাদক অজিত মণ্ডল। তিনি অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর দাবি, ‘‘আমাদের কেউ ওখানে দাঁড়িয়ে চাঁদা তুলছিল না। আমরা ক্লাবের কাছে ছিলাম। প্যান্ডেলের কাজ চলছিল। লরিটি দ্রুত গতিতে যাচ্ছিল। তা নিয়ে কিছু মানুষের সঙ্গে ঝামেলা হয়। আমরাই তো ছাড়িয়ে দিয়েছি। পুলিশ মিথ্যা অভিযোগে আমাদের একজনকে ধরেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন