ভরসা: ডায়াল করলেই বাড়ি পৌঁছবে এই অ্যাম্বুল্যান্স। নিজস্ব চিত্র
প্রসূতি ও সদ্যোজাতকে হাসপাতালে বা বাড়ি পৌঁছে দিতে এতদিন ভরসা ছিল শুধু মাতৃযান বা নিশ্চয়যান। কিন্তু তা নিয়েও ঝামেলা বিস্তর। অভিযোগ, ঠিক সময়ে এসে পৌঁছয় না অ্যাম্বুল্যান্স। গাড়িতেই প্রসব বা প্রসূতির অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে আকছার। সম্প্রতি আবার তাতে যোগ হয়েছিল অ্যাম্বুল্যান্স মালিকদের বিক্ষোভ। তার জেরে দীর্ঘদিন ব্যহত হয়েছে পরিষেবা।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে হাওড়া ও হুগলি জেলায় চালু হয়েছে ১০২ পরিষেবা। ওই নম্বরে ফোন করলেই দরজায় পৌঁছে যাচ্ছে আধুনিক অ্যাম্বুল্যান্স। প্রসূতি এবং শিশুর প্রাথমিক চিকিৎসার সব রকম সরঞ্জাম থাকছে সেখানে। থাকছেন একজন সর্বক্ষণের স্বাস্থ্যকর্মীও। জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুল্যান্সেই প্রসবের ব্যবস্থা করতে পারবেন তিনি। সব কিছুই বিনামূল্যে।
সেই সঙ্গে প্রতিটি অ্যাম্বুল্যান্সে রয়েছে জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) ব্যবস্থা। রোগী নিয়ে বেরিয়ে ঠিক সময়ে গন্তব্যে না পৌঁছয় তা হলে রোগীর পরিজনেরা ১০২ নম্বরে ফোন করতে পারেন। কেন্দ্রীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে রোগী সেই সময়ে কোন এলাকায় রয়েছেন।
গোটা পরিষেবাটিই ‘১০২’ নামে পরিচিত হয়ে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে তা চালু হয়েছে ২০১৬ সাল থেকে। প্রথমে বাঁকুড়া ও দুই মেদিনীপুরে তা চালু হয়েছিল। এ বছর হাওড়া-হুগলিও তার আওতায় এসেছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হায়দরাবাদের একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে স্বাস্থ্য ভবনের চুক্তি হয়েছে। তার ভিত্তিতে এই অ্যাম্বুল্যান্সগুলি কাজ করছে।
হাওড়া জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা কাজ করেছে এ রকম ২৫টি অ্যাম্বুল্যান্স। চালক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের ১২ ঘণ্টার শিফ্টে কাজ করতে হয়। উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালের সুপার সুদীপরঞ্জন কাঁড়ার বলেন, ‘‘এই অ্যাম্বুল্যান্সগুলিতে প্রসূতি ও সদ্যোজাতকে উঠিয়ে দিলে আমরাও নিশ্চিন্তে থাকি। আমাদের দু’টি অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়া হয়েছে। সম্ভবত আরও দু’টি আসবে।’’
বেশ কয়েক মাস ধরেই মাতৃযান পরিষেবা নিয়ে অশান্তি চলছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বহু অভিযোগও জমা পড়েছে মাতৃযানের বিরুদ্ধে। মাসখানেক আগে মাতৃযান এবং নিশ্চয়যান চালকেরা বকেয়া আদায়ের দাবিতে বিভিন্ন জেলায় ধর্মঘট করেন। অনেক প্রসূতি এবং শিশুকে রেফার করাতে সমস্যা হয়।
মাতৃযান বা নিশ্চয়যান প্রকল্পে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া নেয় স্বাস্থ্য দফতর। সংশ্লিষ্ট জেলা স্বাস্থ্য দফতর চালকদের ভাড়া মেটান। টাকা দিতে দেরি হওয়ায় জেলা স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন চালকেরা। তার জেরে ব্যহত হয় পরিষেবা।
স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, ১০২ পরিষেবার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যভবনের সঙ্গে সরাসরি চুক্তি হয়েছে। হায়দরাবাদের এই সংস্থাকে ভাড়ার টাকা দেওয়া হবে স্বাস্থ্যভবন থেকেই। ফলে স্থানীয়ভাবে অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের বিক্ষোভের সম্ভাবনা নেই। স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের অনেকেই বলছেন, পরবর্তীতে শুধু ১০২ পরিষেবাই চালু রাখা হবে। তবে এখনই মাতৃযান, নিশ্চয়যান পরিষেবা তুলে দেওয়া হচ্ছে না।
হাওড়া জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস বলেন, ‘‘আমার জেলায় ৬০টি মাতৃযান এবং নিশ্চয় যান আছে। ১০২-এর অ্যাম্বুল্যান্স এসেছে ২৫টি। সে ক্ষেত্রে ঘাটতি মেটাতে আরও অন্তত ২৫টি অ্যাম্বুল্যান্স দরকার। সেগুলি আসবে বলেই জেনেছি।’’