বধূকে খুনের দায়ে শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদের যাবজ্জীব‌ন

আদালতের পর্যবেক্ষণ, অতিরিক্ত পণের দাবিতেই খুন করা হয় রেশমা বিবি নামে ওই বধূকে। সাজাপ্রাপ্তেরা হল নিহতের শ্বশুর শেখ অম্বর আলি, শাশুড়ি মাজেদা বিবি এবং ননদ পারভেন সুলতানা। এক বছর চার মাসের মধ্যে এই মামলার নিষ্পত্তি হল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৯ ০২:১২
Share:

অপরাধী: রায় শোনার পর। নিজস্ব চিত্র

তার চোখের সামনেই মাকে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলেছিল ঠাকুরদা, ঠাকুমা, এবং পিসি। পাঁচ বছরের মেয়েটি সে কথা জানায় সবাইকে। সাক্ষ্য দিয়েছে আদালতেও। হুগলির হারিটের পোপাই গ্রামের বাসিন্দা ওই তিন জনের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার তাদের যাবজ্জীব‌েনর সাজা শোনালেন চুঁচুড়া আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (প্রথম ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট) শুভেন্দু সাহা।

Advertisement

আদালতের পর্যবেক্ষণ, অতিরিক্ত পণের দাবিতেই খুন করা হয় রেশমা বিবি নামে ওই বধূকে। সাজাপ্রাপ্তেরা হল নিহতের শ্বশুর শেখ অম্বর আলি, শাশুড়ি মাজেদা বিবি এবং ননদ পারভেন সুলতানা। এক বছর চার মাসের মধ্যে এই মামলার নিষ্পত্তি হল।

পুলিশ সূত্রের খবর, ধনেখালির দেধারা গ্রামের যুবতী রেশমার সঙ্গে হারিটের পোপাইয়ের বাসিন্দা শেখ মোক্তার আলির বিয়ে হয় ২০১১ সালে। রেশমার বাপের বাড়ির তরফে নগদ টাকা-সহ অন্যান্য জিনিস যৌতুক দেওয়া হয়েছিল। মোক্তার গুজরাতে গয়নার কাজ করেন। বিয়ের পরে তিনি রেশমাকে রেখে সেখানে চলে যান। মাঝেমধ্যে ফিরতেন। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা পণের দাবিতে রেশমার উপরে অত্যাচার করত। তাকে বলা হয়, বাপের বাড়ি থেকে নগদ এক লক্ষ টাকা নিয়ে আসতে, যাতে মোক্তার এখানেই ব্যবসা করতে পারেন। রেশমার বাপের বাড়ির লোকেরা সেই দাবি পূরণ করতে পারেননি। ফলে, ওই বধূর উপরে অত্যাচার বাড়ে।

Advertisement

ইতিমধ্যে রেশমার একটি মেয়ে এবং একটি ছেলে হয়। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে এক সময় তিনি বাপের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু স্বামী এবং বাপের বাড়ির লোকজনের কথায় শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যান। যদিও অত্যাচার চল‌তেই থাকে। ২০১৮ সালের ৩১ মে দুপুরে শ্বশুর, শাশুড়ি এবং ননদ মিলে রেশমাকে ঘরের মেঝেতে ফেলে গলায় ওড়নার ফাঁস লাগিয়ে এবং মুখে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করে। বাপের বাড়িতে ফোন করে জানায়, রেশমা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। যদিও চোখের সামনে মায়ের উপরে অত্যাচারের কথা জানিয়ে দেয় রেশমার মেয়ে।

রেশমার বাবা মোসালেম শেখ দাদপুর থানায় অম্বর, মাজেদা এবং পারভিনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ওই তিন জন গ্রেফতার হয়। পরে জামিন পায়। সরকার পক্ষের আইনজীবী চণ্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ময়নাতদন্তে শ্বাসরোধ করে মারার বিষয়টি প্রমাণিত হয়। তিনি বলেন, ‘‘তিন জনকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাস কারাবাসের আদেশ হয়।’’

মোসালেম বলেন, ‘‘টাকার জন্য ওরা মেয়েটাকে অত্যাচার করে মেরে ফেলল। নাতি-নাতনিটা অনাথ হয়ে গেল। ওদের উপযুক্ত সাজাই হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন