হাওড়া শহরে খোলা নর্দমা চান না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই ঢেলে সাজতে চলেছে মান্ধাতার আমলের নিকাশি ব্যবস্থা। ২০০ কোটি টাকার ওই প্রকল্পে খোলা নর্দমা বন্ধ করার পাশাপাশি এ বার নিকাশি ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ করবে হাওড়া পুরসভা। শুক্রবার হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তী জানান, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে প্রকল্পটি তৈরি করা হয়েছে। অনুমোদন মিললেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।
রাজ্যে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার কয়েক মাসের মাথায় রাজ্যের মূল প্রশাসনিক দফতর চলে যায় গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে, নবান্নে। তখন থেকেই বদলাতে থাকে হাওড়ার চেহারা। শিবপুরে প্রশাসনিক ভবন নবান্ন চত্বর থেকে শুরু করে শহরের রাস্তাঘাট, অলিতে গলিতে লাগে সৌন্দর্যায়নের ছোঁয়া। যদিও হাওড়ার মূল দু’টি সমস্যা নিকাশি ও পানীয় জলের ক্ষেত্রে উন্নয়ন অধরাই থেকে গিয়েছিল। হাওড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়া শহরে শুধু খোলা নর্দমা রয়েছে ৫০০ কিলোমিটার, আর রয়েছে ভূগর্ভস্থ নালা। এই সমস্ত নালা-নর্দমা অধিকাংশই বহু বছরের পুরনো। মাঝে মধ্যেই ধস নেমে বা যানবাহনের চাপে সেগুলি ভেঙে পড়ায় শহরের নিকাশি ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ে। বর্ষাকালে সমস্যাটা সব থেকে বেশি হয়। নিকাশির সঠিক সংস্কার না হওয়ায় জমা জলে ভাসে হাওড়ার অধিকাংশ নিচু ওয়ার্ডগুলির রাস্তাঘাট।
মেয়র জানান— হাওড়া শহরের নিকাশি যেমন একটা সমস্যা, তার চেয়েও বড় সমস্যা খোলা নর্দমা। সম্প্রতি হাওড়ার নিকাশি নিয়ে আলোচনার সময়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বিষয়টি তাঁর নজরে আনেন এবং হাওড়া শহরের নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে একটি প্রকল্প তৈরির নির্দেশ দেন। রথীনবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে নিকাশি উন্নয়নে তৈরি করা প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করা গেলে হাওড়ার নিকাশি সমস্যা অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে। বিশেষত খোলা নর্দমা ঢাকা দিতে পারলে শহরের পরিবেশ অনেকটাই বদলে যাবে।’’
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন ধাপে প্রকল্পটির কাজ হবে। যেমন, প্রথম ধাপে সবচেয়ে সমস্যাবহুল এলাকা— যেমন ১৯, ২০, ২, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মতো নিচু এলাকায় নিকাশির কাজ হবে। এ ছাড়া, যে সব ওর্য়াডে প্রতি বর্ষায় জল জমে, সেগুলির নিকাশি ব্যবস্থা খোলনলচে পাল্টে ফেলা হবে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে খোলা নর্দমা ঢাকা হবে সিমেন্টের স্ল্যাব দিয়ে। অনেক ক্ষেত্রে খোলা নর্দমা তুলে দিয়ে ভূগর্ভস্থ নালা করে দেওয়া হবে।
শুধু নিকাশি নালার উন্নয়ন নয়, নিচু জায়গা থেকে জমা জল সরাতে হাওড়া শহরে আরও সাতটি জায়গায় পাম্পহাউস
করা হবে বলেও জানিয়েছেন মেয়র। যাতে ওই এলাকায় বর্ষায় জল জমলে পাম্প চালিয়ে তা বার করে দেওয়া যায়। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, সালকিয়ার দিকে মহীনাথ পোড়েল লেন, বেলিলিয়াস লেন, রামরাজাতলা এলাকা, বেলুড় কালী মন্দির-সহ পুরসভার সংযুক্ত এলাকায় পাম্প হাউস হবে। মেয়র জানান, এই নতুন পাম্প হাউস তৈরিও নিকাশি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় রয়েছে।