ফাইল চিত্র।
দিনের ব্যস্ত সময়ে প্রতিদিন যানজটে জেরবার হচ্ছিলেন চন্দননগরের বাসিন্দারা। তাই সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা— ১২ ঘণ্টার জন্য শহরের জিটি রোডে ট্রাক ঢোকা বন্ধ করে দিল পুলিশ।
এ শহরের প্রধান রাস্তা জিটি রোডই। দীর্ঘদিন ধরেই সকাল ৯টা থেকে যানজট শুরু হয়েছিল যাচ্ছিল ওই রাস্তার নানা ‘পয়েন্ট’-এ। কখনও পাদ্রিপাড়ায়, কখনও শ্রীদুর্গা ছবিঘর মোড়ে, কখনও জ্যোতির মোড় বা বাগবাজারে। একে তো টোটোর দাপট, তার উপরে ১০-১২ চাকার পণ্যবাহী ট্রাক ঢুকে সেই যানজটকে আরও জটিল করে তুলছিল। সাধারণ মানুষ পুলিশ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানাচ্ছিলেন। কয়েকদিন আগে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট ট্রাক ঢোকা সংক্রান্ত ওই নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অজয় কুমার বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা ভেবেই আমরা ট্রাক চলাচলে নিয়ন্ত্রণ এনেছি। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ‘টোল’ ফাঁকি দেওয়ার জন্য বহু ট্রাক জিটি রোডে চলে আসছিল। এতে চন্দননগরে যানজট হচ্ছিল।’’
বছরখানেক আগে হাওড়ার শিবপুর থেকে হুগলির পান্ডুয়া পর্যন্ত রাজ্য সরকার কয়েক কোটি টাকা খরচ করে জিটি রোডের খোলনলচে বদলায়। রাস্তা ঝাঁ-চকচকে হলেও যানবাহনের গতি সে ভাবে বাড়েনি। এর পিছনে টোটো-সহ কম গতির যান চলাচল এবং ট্রাককেই দায়ী করেন অনেকে। চন্দননগরেও ছবিটা একই রকম ছিল। তাই প্রতিদিনের সেই সমস্যার কিছুটা সুরাহার পথ খুঁজছিল পুলিশ-প্রশাসন।
পুলিশের এই সিদ্ধান্তে শহরবাসী কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। অনেকেই বলছেন, জিটি রোড খুব বেশি চওড়া নয়। সেখানে যানজট রুখতে বড় বড় ট্রাকের বিরুদ্ধে পুলিশ উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু ট্রাক-মালিকেরা ক্ষুব্ধ। তাঁরা মনে করছেন, এতে সাধারণ মানুষই বিপাকে পড়বেন। সময়মতো হাটগুলিতে মাল পৌঁছবে না। জিনিসের দাম বাড়বে। কারখানায় ট্রাক না-ঢুকতে পারলে উৎপাদনও ব্যাহত হবে।
ট্রাক-মালিকেরা জানিয়েছেন, কয়েক মাস ধরেই হুগলিতে ট্রাক নিয়ে যাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। সংস্কারের কারণে কল্যাণীর ঈশ্বরগুপ্ত সেতু দিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই ভারী যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে, কল্যাণী থেকে হুগলি হয়ে অন্য জেলা বা দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে বহু ট্রাক যেতে পারছে না। তার উপর শ্রীরামপুরের কাছে দিল্লি রোডে হাওড়া-তারকেশ্বর শাখার রেলের একটি সেতুতেও সংস্কারের কাজ চলছে। সেখানেও ট্রাক যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তা ছাড়া, বৈদ্যবাটী থেকে ডানকুনি পর্যন্ত দিল্লি রোডে সম্প্রসারণের কাজও চলছে। সেখান দিয়েও মালবাহী ট্রাক চলাচলের সমস্যা রয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই চ্রাক-চালকেরা জিটি রোড ধরেন।
জেলা ট্রাক-মালিক সংগঠনের সম্পাদক প্রবীর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চন্দননগরে জিটি রোডে ১২ ঘণ্টা মালবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ করে দিলে শেওড়াফুলি হাট এবং অন্য বাজারগুলিতে মাল ঢুকবে কী ভাবে? কল-কারখানায় কাঁচামালও যেতে পারবে না। আমরা এডিজি ট্রাফিকের কাছে আবেদন করেছি, পণ্য পরিবহণের জন্য নয়া বিধি শিথিল করা হোক।’’ কল-কারখানায় মাল আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে ওই আবেদন বিবেচনা করা হচ্ছে বলে আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার।
ট্রাক-মালিকদের জন্য আশার কথা শুনিয়েছেন জেলা প্রশাসনের এক কর্তাও। তিনি জানিয়েছেন, দিল্লি রোডে যেখানে রেলসেতু সংস্কারের কাজ হচ্ছে, তার কাছেই আর একটি সেতু হচ্ছে। সেটির কাজ শেষ পর্যায়ে। ওই সেতুতে যান চলাচল শুরু হলেই পরিস্থিতি অনেকটা বদলে যাবে।