খালনার লক্ষ্মীপুজো

ডাইনোসরের জঙ্গল তৈরিতেই কেটেছে তিন মাস

দুর্গাপুজোয় কলকাতা দেখেছিল থিমের লড়াই। থিমের সেই লড়াই এ বার দেখা যাবে খালনার লক্ষ্মীপুজোয়। হাওড়ার জয়পুরের খালনার লক্ষ্মীপুজোর খ্যাতি থাকলেও গত কয়েক বছর ধরে থিম নিয়ে পুজো কমিটিগুলির প্রতিযোগিতা সেই খ্যাতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

Advertisement

মনিরুল ইসলাম

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৬ ০২:০৪
Share:

ছবি: সুব্রত জানা।

দুর্গাপুজোয় কলকাতা দেখেছিল থিমের লড়াই। থিমের সেই লড়াই এ বার দেখা যাবে খালনার লক্ষ্মীপুজোয়।

Advertisement

হাওড়ার জয়পুরের খালনার লক্ষ্মীপুজোর খ্যাতি থাকলেও গত কয়েক বছর ধরে থিম নিয়ে পুজো কমিটিগুলির প্রতিযোগিতা সেই খ্যাতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। থিমের সেই লড়াইয়ে কে নেই! ডাইনোসরের জীবনযাত্রা থেকে মহাকরণ—থিমের মেলায় হাজির সকলেই। শুধু থিম নয়, পুজোর দিনক্ষণ নিয়েও খালনার লক্ষ্মীপুজো টক্কর দেয় দুর্গাপুজোর সঙ্গে। দুর্গাপুজো যেখানে চারদিনের, খালনার লক্ষ্মীপুজো সেখানে চলে তিনদিন ধরে।

শুধু হাওড়া জেলা নয়, খালনা লক্ষ্মীপুজোর নামডাক ছড়িয়েছে পাশের হুগলি, মেদিনীপুরেও। কয়েক দশক ধরে এখানকার বারোয়ারি লক্ষ্মীপুজো দেখতে আজও উপচে পড়ে দর্শক। এলাকার আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলেই মেতে ওঠেন লক্ষ্মীপুজোর আনন্দে। দুর্গা নয়, এখানে লক্ষ্মীপুজোই শারোদৎসবের মেজাজ আনে।

Advertisement

কিন্তু কেন?

স্থানীয় বাসিন্দা ও পুজো উদ্যোক্তাদের কাছে জানা গেল, এলাকাটি নিচু এবং খাল বিল ও নালায় ভর্তি। ফলে দুর্গাপুজোর সময় বৃষ্টি বা নদীতে বড় জোয়ার হলেই এলাকা জলমগ্ন হয়ে যেত। ফলে সেই সময় এলাকার মানুষ ইচ্ছা থাকলেও দুর্গা পুজো করতে বা তাতে সামিল হতে পারতেন না। তা ছাড়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখানকার বহু মানুষ কর্মসূত্রে জেলাসদর, কলকাতা সহ অন্যত্র চলে যান। যা এলাকায় বহু পরিবারেরই আর্থিক শ্রীবৃদ্ধি ঘটিয়েছে। সেই কথা মনে রেখেই বছরের পর বছর খালনায় লক্ষ্মীর আরাধনা বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে পুজো কমিটিরগুলির মধ্যে একে অন্যকে আড়ম্বরে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। যাতে সামিল হতে গিয়ে পুজো কমিটিগুলি নানা থিমের আশ্রয় নিয়েছেন। পুরাণ থেকে আধুনিক সব বিষয়ই যাঁই পেয়েছে থিমে। থিম নিয়ে বিভিন্ন পুজোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়িয়ে দিয়েছে উদ্যোক্তাদের বাজেটও।

স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্রের কথায়, ‘‘খালনার লক্ষ্মীপুজোর খ্যাতি বহু পুরনো। চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো যে ভাবে হয়, এখানকার লক্ষ্মীপুজোও সে ভাবেই পালিত হয়।’’

ক্ষুদিরায়তলা লক্ষ্মীপুজো কমিটির বারোয়ারির এ বার দেড়শো বছর। মণ্ডপের থিম ‘বিলুপ্ত প্রাণীর সন্ধানে’। বিলুপ্ত প্রাণী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে ডাইনো সরকে। ডাইনোসরের মডেলের পাশাপাশি প্রোজেক্টরের মাধ্যমে দর্শকদের দেখান হবে ডিম থেকে ডাইনোসরের জন্ম ও আগ্নেয়গিরির লাভায় ডায়নোসরদের চাপা পড়ে যাওয়া বা দাবানলের ফলে কী ভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছে সে সব দৃশ্য। এর জন্য গভীর অরণ্য তৈরিতে তিন মাস আগে থেকে মণ্ডপের মধ্যে ধনচে চাষ করে জঙ্গল তৈরি করেছেন উদ্যোক্তারা। পুজোর বাজেট ৬ লক্ষ টাকা। পশ্চিম খালনা রাজবংশীপাড়া বারোয়ারি প্রতিমায় বৈচিত্র্য এনেছে। ৪০ ফুটের প্রতিমা তাদের। খালনা আনন্দময়ী তরুণ সংঘ তাদের থিমে প্রাধান্য দিয়েছে সবুজায়নকে। ঘাস দিয়ে তৈরি মণ্ডপ। মিতালি সংঘের মণ্ডপ হায়দরাবাদের চারমিনারের আদলে। প্রতিমা বাঁশের। কৃষ্ণরায়তলার মণ্ডপ মেচেদার ইসকন মন্দিরের আদলে। মহাকরণের আদলে মণ্ডপ হাটতলা একতা সংঘের। আমরা সবাই ক্লাবের থিম বৃক্ষনিধন রোধ। মণ্ডপ তৈরি হয়েছে আদিবাসীদের বাড়ির আদলে। আমরা সকল ক্লাব মণ্ডপ করছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের আদলে।

সব পুজোই বিগ বাজেটের বলে। এ ছাড়া ছোট-বড় বহু বারোয়ারি পুজো রয়েছে যার জৌলুসও চোখ টানবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন