বৈদ্যবাটিতে চ্যালেঞ্জ নিতে একপায়ে খাড়া নবতিপর ‘তরুণ’ থাকোবাবু

নয় নয় করে নব্বই পেরিয়ে গিয়েছেন। চামড়ায় ভাঁজ পড়েছে কালের নিয়মে। কিন্তু মনেপ্রাণে আজও যেন তরুণ তুর্কি। নব্বই বছরের সেই ‘তরুণ’ অমিয় মুখোপাধ্যায় ওরফে থাকোদা আবারও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর হিসেবে বৈদ্যবাটি পুরসভায় যাবেন। বলা বাহুল্য হুগলি জেলায় তিনিই প্রবীণতম কাউন্সিলর। সম্ভবত রাজ্যেও।

Advertisement

প্রকাশ পাল

হুগলি শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৫ ০১:০৭
Share:

অমিয় মুখোপাধ্যায়।—নিজস্ব চিত্র।

নয় নয় করে নব্বই পেরিয়ে গিয়েছেন। চামড়ায় ভাঁজ পড়েছে কালের নিয়মে। কিন্তু মনেপ্রাণে আজও যেন তরুণ তুর্কি। নব্বই বছরের সেই ‘তরুণ’ অমিয় মুখোপাধ্যায় ওরফে থাকোদা আবারও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর হিসেবে বৈদ্যবাটি পুরসভায় যাবেন। বলা বাহুল্য হুগলি জেলায় তিনিই প্রবীণতম কাউন্সিলর। সম্ভবত রাজ্যেও।

Advertisement

বৈদ্যবাটি পুরসভা সূত্র বলছে, গত ১৯৬৪ সাল থেকে ভোটে লড়ছেন থাকোবাবু। এই পাঁচ দশকে নিয়ে মোট এগারো বার কাউন্সিলার হলেন। প্রায় সব বারেই ৭ নম্বর ওয়ার্ডে দাঁড়িয়ে জিতেছেন। ন’য়ের দশকে দু’বারে মোট সাড়ে ৬ বছর পুরপ্রধানের দায়িত্বও সামলেছেন। শেষ দিকে দু’বার ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় অন্য আসনে সরে যেতে হয় তাঁকে। ২০১০ সালে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলেন। সেখানে অবশ্য জয় আসেনি।

এ বার তিনি ফিরে আসেন পুরনো আসনে। এসেই ফের স্বমহিমায় উজ্জ্বল। প্রচারে নেমে মিটিং-মিছিলের ধার ধারেননি। বড় কোনও নেতাকেও তাঁর প্রচারে দেখা যায়নি। বরং গুটিকতক ছেলেপুলেকে নিয়ে সকাল-বিকেল তরতরিয়ে হেঁটে বেরিয়েছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে একগাল হেসে কুশল বিনিময় করেছেন। চায়ের কাপে চুমুক দিয়েছেন। তাঁর নিবিড় জনসংযোগে ছিটকে গিয়েছেন বিরোধী প্রার্থীরা।

Advertisement

ঘটনা হচ্ছে, বৈদ্যবাটির এই ওয়ার্ডটি অবহেলিত বলেই মনে করেন এলাকার মানুষ। এ জন্য দীর্ঘদিন স্থানীয় কাউন্সিলর এবং প্রাক্তন পুরপ্রধান হিসেবে থাকোবাবুর উপরেই দায় চাপাতে চান বিরোধীরা। কিন্তু থাকোবাবুর বক্তব্য, এলাকার জন্য তিনি যে যথাসাধ্য করেছেন, তা এলাকার মানুষ জানেন। তিনি বলছেন, এখানকার মানুষ তাঁকে ভালবাসেন। তাই দিনের পর দিন তাঁকে জয়ের ব্যপারে ভাবতে হয় না। এই ওয়ার্ডেই রয়েছে শেওড়াফুলির যৌনপল্লি। যৌনকর্মীদের বক্তব্য, বছরের পর বছর ধরে তাঁরা বঞ্চনার শিকার হয়ে এসেছেন। অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন। সুখ-দুঃখে থাকোবাবু কখনও তাঁদের ছেড়ে যাননি। এমনকী গত পাঁচ বছর কাউন্সিলার না থাকলেও এখানের যে কোনও অনুষ্ঠানে তিনি অনুপস্থিত, এমনটা চোখে পড়েনি। পল্লির মেয়েদের অনেকে এখনও তাঁকে ‘বাবা’ নামে সন্বোধন করেন। ভোটের ফল বলছে, পল্লির বাসিন্দারা তাঁর পাশ থেকে সরে যাননি। ফলে, বয়স তাঁর জয়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।

জেলা প্রশাসনের তরফে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ওই ওয়ার্ডের মোট ভোটার ২৬৯৩। ভোট পড়েছে ২৬৯৩টি। তার মধ্যে থাকোবাবু পেয়েছেন ১৬৮৫টি ভোট। আর তৃণমূল-সিপিএম-বিজেপির মিলিত ভোট ১০০৮টি। অর্থাৎ কংগ্রেস প্রার্থীর থেকে ৬৭৭টি কম। থাকোবাবুর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী, স্বচ্ছ্ব ভাবমূর্তির তৃণমূল নেতা কল্যাণ সরকার ওরফে কলু প্রচারে প্রচুর ঘাম ঝড়িয়েও ৫০৫টির বেশি ভোট পাননি।

স্বভাবতই বিরোধীরা মানছেন, অনুন্নয়নের যাবতীয় অভিযোগ সত্ত্বেও থাকোদার জনপ্রিয়তার কাছেই তাঁরা পর্যুদস্ত হয়েছেন। কল্যাণবাবু বলেন, ‘‘থাকোকাকা শ্রদ্ধেয় মানুষ। ব্যক্তি হিসেবে ওঁর বিরুদ্ধে কোনও বক্তব্য নেই। মানুষের রায় মাথা পেতে নিচ্ছি। তবে রাজনৈতিক ভাবে ওখানে নিশ্চয়ই লড়াই জারি রাখব আমরা।’’

থাকোবাবু নিজে কী বলছেন?

‘ট্রেডমার্ক’ হাসি মুখে ঝুলিয়ে তিনি বলছেন, ‘‘মানুষ আমাকে নির্বাচিত করেছেন। সাধারণ মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’’ এর পরেই যোগ করেন, ‘‘চল্লিশ বছরের এক জন কাউন্সিলার যতটা দৌড়তে পারেন, আমি ততটাই পারব। সে মনের জোর আমার আছে। এলাকার উন্নয়নের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাব।’’

জেলা কংগ্রেসের কো-অর্ডিনেটর প্রীতম ঘোষ বলেন, ‘‘থাকোদা এই বয়সেও শারীরিক ভাবে চূড়ান্ত সক্ষম। মানসিকতাতেও অনেকের থেকেই যোজন এগিয়ে। বৈদ্যবাটির ৭ নম্বর ওয়ার্ড কখনও কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়নি। থাকোদা যখন অন্য ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন, তখনও এই ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থীর হয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরেছেন। মানুষ ওঁকে ভালবাসেন। শ্রদ্ধা করেন। ওঁর কথা কেউ ফেলেননি।’’

প্রীতমবাবুর সংযোজন, ‘‘থাকোদা একটা সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন