চারদিক জল থই থই। বিপর্যস্ত জনজীবন। অথচ, খানাকুল-২ ব্লকের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিকের পদই শূন্য!
দ্বারকেশ্বর, মুণ্ডেশ্বরী, দামোদর এবং রূপনারায়ণ— এই চার নদীর জলে আরামবাগ মহকুমায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবারের মতো এ বারও সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা খানাকুল-২ ব্লকের। প্রাণহানিও ঘটেছে। অথচ, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিক না-থাকায় ওই ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েত এলাকায় বন্যা মোকাবিলায় আগাম কোনও পরিকল্পনাই যথাযথ ভাবে তৈরি করা হয়নি বলে মানছেন প্রশাসনের কর্তাদেরই একাংশ। একই অভিযোগ পঞ্চায়েত সমিতির জনপ্রতিনিধিদেরও।
যদিও বিডিও সুজিত রায়ের দাবি, “একজনকে দায়িত্ব দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। অসুবিধা হচ্ছে না।” পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অসিত সিংহরায় বলেন, “কাজ চলছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবাটির জন্য পুরো সময়ের আধিকারিক তথা বিশেষজ্ঞ চাওয়া হয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে।” জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত হুগলির অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি) পূর্ণেন্দু মাজি মানছেন, বিশেষজ্ঞ কর্মী থাকলে ভাল হতো। তিনি বলেন, ‘‘কাজে খুব বেশি অসুবিধা হচ্ছে না। বন্যা মোকাবিলায় পঞ্চায়েত থেকে জেলা স্তরের সংশ্লিষ্ট সমস্ত দফতরের কর্মীরা সজাগ রয়েছেন।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’মাস আগে ওই ব্লকের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের অফিসারকে আরামবাগ ব্লকে বদলি করা হয়েছে। তারপর খানাকুল-২ ব্লকে ওই পদে কোনও নিয়োগ হয়নি। অথচ, ওই দফতরের মূল কাজ— যে কোনও বিপর্যয়ের আগে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে মানুষের জীবন ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য পরিকল্পনা তৈরি করা এবং সেইমতো প্রস্তুতি নেওয়া। পরিস্থতি দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনারও ব্যবস্থা করা। এ ছাড়া, বিভিন্ন নদীবাঁধের অবস্থা চিহ্নিত করা, প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য, ওষুধপত্র, ত্রাণ সামগ্রী এবং অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ব্লক এবং পঞ্চায়েত স্তরে মজুত রাখার ব্যবস্থা। এলাকার নৌকা এবং মাঝির তথ্য রাখা, বেতার-বার্তা পাঠানোর ব্যবস্থা করা, কন্ট্রোল-রুম চালু করা ইত্যাদি। এ ছাড়াও বন্যার সময় এবং বন্যা পরবর্তী করণীয় বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া। কিন্তু আধিকারিকের অভাবে প্রশাসনের অন্য দফতরের অনভিজ্ঞ কর্মীদেরই ওই সব কাজ করতে হচ্ছে। ফলে, তা যথাযথ হচ্ছে কিনা, সে প্রশ্ন থাকছেই।