Teachers

দু’মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না রাজ্যের ৫০ হাজার শিক্ষক!

রাজ্যে প্রায় ১৯০০ এমএসকে এবং ১৪ হাজার এসএসকে আছে। স্কুলগুলি চালায় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর। সর্বশিক্ষা দফতর থেকে ওই শিক্ষকদের বেতনের টাকা প্রথমে আসে শিক্ষা দফতরে। সেখান থেকে টাকা যায় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে। ওই দফতরই বেতন মেটায়। দফতরের এক কর্তা বৃহস্পতিবারই জানিয়ে দিয়েছেন, শিক্ষা দফতর থেকে ওই টাকা আসেনি।

Advertisement

নুরুল আবসার 

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৮ ০২:০৫
Share:

শুরু হয়ে গিয়েছে দেবীপক্ষ। কিন্তু মুখে হাসি নেই এ রাজ্যের প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষকের। কারণ, দু’মাস ধরে বেতন নেই। পুজোর আগে পাওয়ার আশাও নেই। সরকারি দফতরের চাপান-উতোরে তাঁদের বেতন মিলছে না বলে অভিযোগ। শিক্ষকেরা মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র (এমএসকে) এবং শিশু শিক্ষাকেন্দ্রগুলির (এসএসকে) সঙ্গে যুক্ত।

Advertisement

রাজ্যে প্রায় ১৯০০ এমএসকে এবং ১৪ হাজার এসএসকে আছে। স্কুলগুলি চালায় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর। সর্বশিক্ষা দফতর থেকে ওই শিক্ষকদের বেতনের টাকা প্রথমে আসে শিক্ষা দফতরে। সেখান থেকে টাকা যায় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে। ওই দফতরই বেতন মেটায়। দফতরের এক কর্তা বৃহস্পতিবারই জানিয়ে দিয়েছেন, শিক্ষা দফতর থেকে ওই টাকা আসেনি। ফলে, ওই শিক্ষকদের বকেয়া বেতন পুজোর আগে আর দেওয়া সম্ভব নয়।

কিন্তু কেন?

Advertisement

এই প্রশ্নেই সামনে চলে এসেছে দুই দফতরের চাপান-উতোর। শিক্ষা দফতরের কর্তাদের দাবি, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের কাছ থেকে ওই শিক্ষকদের (সম্প্রসারক) বিষয়ে কিছু ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনও তা মেলেনি। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘কোনও রাজ্যে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর এসএসকে, এমএসকে চালায় না। যে সব প্রশ্নের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে তা ওই দফতরকে দিতে হবে। সব কাজ যদি আমরাই করে দেব তা হলে ওরা কী করবে?’’ শিক্ষকদের বেতন কবে দেওয়া হবে সেই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে পার্থবাবু বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলব।’’

পঞ্চায়েত দফতরের দাবি, ওই শিক্ষকদের বেতন দিতে মাসে ৩৫ কোটির টাকার প্রয়োজন। পাঁচ মাস শিক্ষা দফতর একটি টাকাও ঠেকায়নি। দফতরের নিজস্ব তহবিল থেকে কোনও মতে আগের তিন মাসের বেতন শিক্ষকদের দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আর দফতরের হাতে টাকা নেই। দফতরের প্রধান সচিব নিজে বেতনের টাকা চেয়ে শিক্ষা দফতরের সচিবকে ব্যক্তিগত চিঠি লিখেছেন। কিন্তু তাতেও সুরাহা হয়নি।

পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা সর্বশিক্ষা দফতরের প্রকল্প। রাজ্য সরকারের ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষা দফতর প্রকল্পটি পঞ্চায়েত দফতরের ঘাড়ে চাপিয়েছে। আমরা শুধু় দেখভাল করি। দেখারও নেই। সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রী নেবেন।’’

বছরদশেক আগে রাজ্যে ওই দু’ধরনের স্কুল চালু হ‌য়। কিন্তু বছরখানেক পর থেকেই শিক্ষকদের বেতন অনিয়মিত হয়ে পড়ে। স্কুলগুলি যাতে শিক্ষা দফতর অধিগ্রহণ করে, সে জন্য পঞ্চায়েত দফতর বারবার আবেদন করেছে। এখনও তা হয়নি।

শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই শিক্ষকদের বলা হয় ‘সম্প্রসারক’। যতদিন না ‘সম্প্রসারক’ কথাটি বাদ দেওয়া হবে, ততদিন পর্যন্ত স্কুলগুলি অধিগ্রহণ অসুবিধাজনক। এ বিষয়ে বার বার চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও পঞ্চায়েত দফতরের কাছ থেকে কোনও ব্যাখ্যা মেলেনি।’’ এক পঞ্চায়েত কর্তা পাল্টা দাবি করেছেন, ‘‘ব্যাখ্যা শিক্ষা দফতরকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপরও সমস্যা মিটছে না।’’

দুই দফতরই মুখ্যমন্ত্রীর মুখাপেক্ষী। শিক্ষকেরা দিন কাটাচ্ছেন দুশ্চিন্তায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন