নাকখত দিলে সাতখুন মাফ, বিশ্বাসেই ভিড় বাড়ে ভট্টাচার্য পরিবারের পুজোয়

পুজো মণ্ডপে দণ্ডির প্রথা নতুন নয়। ভূরি ভূরি নজিরও রয়েছে। কিন্তু নাকখত দিয়ে নিজের ‘অপরাধ’ কবুলের নয়া নজিরের দেখা মেলে আরামবাগের খামারবেড় গ্রামে ভট্টাচার্য পরিবারের পুজোয়।

Advertisement

পীষূষ নন্দী

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৬ ০১:১৩
Share:

পুজো মণ্ডপে দণ্ডির প্রথা নতুন নয়। ভূরি ভূরি নজিরও রয়েছে।

Advertisement

কিন্তু নাকখত দিয়ে নিজের ‘অপরাধ’ কবুলের নয়া নজিরের দেখা মেলে আরামবাগের খামারবেড় গ্রামে ভট্টাচার্য পরিবারের পুজোয়। নাস খুন জখমের মতো অপরাধ নয়, চরিত্রেও এ অপরাধ অন্যরকম। কেউ মিথ্যা বলেছেন, কেউ কথা রাখেননি, কেউ ভুল বুঝেছেন— এমন নানা অপরাধের শাপ যেন তাঁদের গায়ে না লাগে। দেবীর কাছে নাকখত সে জন্যই।

প্রতিপদ থেকেই শুরু হয় অপরাধে কবুলের এই প্রথা। চলে টানা ১০দিন। ভট্টাচার্য পরিবার থেকে গ্রামের মানুষ তো বটেই পাশের জয়রামপুর, বলরামপুর, বলুন্ডি, কাষ্টদহি প্রভৃতি খান দশেক গ্রামের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাও নাকখত দিতে ভিড় করেন ভট্টাচার্য পরিবারের দুর্গা চালায়। পরিবারের এক সদস্য প্রদীপ ভট্টাচার্য জানান, কয়েকশো বছর ধরেই চলে আসছে মার্জনা ভিক্ষার এই প্রথা। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, দেবীর কাছে এ ভাবে ক্ষমা চাইলে সাতখুন মাফ হয়। তাঁদের পরিবারেও সেই বিশ্বাস রয়েছে।

Advertisement

দেবী দুর্গা এখানে দশভূজা নন, চতুর্ভূজা। চার হাতে ধরে রেখেছেন ত্রিশূল, চক্র, খড়্গ এবং সাপ। ভট্টাচার্য পরিবারের এই পুজো প্রায় ৫০০ বছরের প্রাচীন বলে জানালেন গ্রামবাসীরা। গ্রামের ১৩টি ভট্টাচার্য পরিবারের সম্মিলিত এই পুজো শুধু পরিবারের পুজো হয়ে থাকেনি। বর্তমানে তা সর্বজনীনের রূপ নিয়েছে। পুজোর মন্ত্রোচ্চারণ থেকে শুরু করে যাবতীয় আচারে নিষ্ঠায় ত্রুটি হলে দেবীর রোষানলে পড়ার নানা কাহিনী এই পুজোর মাহাত্ম্যকে ছড়িয়ে দিয়েছে আশপাশের জেলাতেও। পুজোর চারদিন তাই দর্শনার্থীদের ভিড়ও বাড়ে। বিশেষ করে অষ্টমী ও নবমীতে।

মহালয়ায় দেবীপক্ষ শুরু হলেই রামায়ণ গান দিয়ে শুরু হয় পুজো। দশমী পর্যন্ত দেবীর আটচালায় চলে রামায়ণ গান। সন্ধিপুজোয় দুর্গা পূজিত হন কালীরূপে। আর সেই কারণেই কালীর অনুকরণে দুর্গা এখানে চতুর্ভূজ। মহাষ্টমীর দিন মায়ের প্রসাদ হিসাবে দেওয়া হয় ভাত। পুজোর পূজারী থেকে অন্যান্য আচার-উপচারের ক্ষেত্রে লোকজন বংশানুক্রমে একই পরিবার থেকে আসেন। রামায়ণ গায়ক প্রতিবছর একাদশী তিথিতে ‘রাম রাজা’ পালা শেষ করে মায়ের কাছে প্রতিজ্ঞা করেন, ‘এ আসর ছেড়ে মাগো যদি আমি অন্য আসরে গান গাই, মোর মাথা খাও শিবের দোঁহাই’। এরকম দোঁহাই দিতে হয় পূজারী, মূর্তিশিল্পী, ঢাকি থেকে ফুল-বেলপাতা-কলা পাতার জোগানদারকেও। যা এই পুজোকে অন্য সব পুজোর থেকে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করেছে।

দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জন হয় গ্রামের পুকুরে নির্দিষ্ট ‘দুর্গা ঘাটে’। যে ঘাটে গ্রামের আর কারও নয়, শুধু দেবীরই অধিকার। গ্রামবাসীরাও সেই প্রথা ভক্তির সঙ্গে মেনে চলেন। বিসর্জনেও বৈশিষ্ট্য রয়েছে এই পুজোয়। দেবী দুর্গা নন, প্রথমে বিসর্জিত হন কলা বৌ। দেবীর বিসর্জনে কান্নার রোল ওঠে গ্রামে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন