চাঁদার বিল
প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চাঁদার জুলুম নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন এক ব্যবসায়ী। শুক্রবারের সেই বৈঠকের পরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই হাতেনাতে প্রমাণ মিলল সেই অভিযোগের!
শনিবার সকাল থেকেই হাওড়া মল্লিক ফটকের কাছে বাস, টোটো, রিকশা-সহ সব ধরনের যানবাহনের পথ আটকে রক্ষাকালী পুজোর চাঁদার কুপন কাটছিল স্থানীয় ‘কলা গাছ স্পোর্টিং’ ক্লাবের সদস্যরা। দুপুরে জানতে পেরেই হাওড়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুই যুবককে আটক করে। আগের দিনের বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী হাওড়ার পুলিশ কমিশনারকে এ ভাবে চাঁদা আদায় বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
হাওড়ার প্রশাসনিক বৈঠকে উপস্থিত এক ব্যবসায়ী, দেবদত্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, আগে দুর্গা বা কালীপুজোয় গাড়ি থেকে চাঁদা নেওয়া হত। কিন্তু এখন প্রায় প্রতি দিনই পুজো কিংবা অন্য অজুহাতে চাঁদা আদায় হচ্ছে। এটা হাওড়ার ‘ক্রনিক’ সমস্যা। অভিযোগ শুনে বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রীও। তিনি একমত হয়ে বলেন, ‘‘দিস ইজ আ জেনুইন প্রবলেম। প্রতি শনিবার রক্ষাকালী পুজো। তা রক্ষাকালী পুজো করতেই পারো। চাঁদা না তুললেই হয়। প্রতিটি গাড়ি থেকে এ ভাবে টাকা তুললে তো জেনুইন প্রবলেম।’’ এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী হাওড়ার পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহকে নির্দেশ দেন, স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এর সমাধান করতে হবে। চাঁদার জুলুম বন্ধ করা দরকার।
বাসে উঠে চাঁদা আদায়
কিন্তু শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাওড়া ময়দান-সহ শহরের বেশ কয়েকটি মোড়ের ছবি দেখলেই বোঝাই যায়, ২৪ ঘণ্ট কেটে গেলেও মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ শরৎ সদনের বাইরে রাস্তায় এসে পৌঁছয়নি। আর তাই বোধহয় শরৎ সদন থেকে কিছুটা দূরে মল্লিক ফটকের সামনে তারস্বরে হিন্দি চটুল গান বাজিয়ে রক্ষাকালী পুজোর আয়োজনের পাশাপাশি চলছিল গাড়ি আটকে চাঁদা তোলা। জি টি রোড দিয়ে চলা যে কোনও যানবাহনের সামনেই আচমকা এসে দাঁড়িয়ে পড়ছেন মলিন গেঞ্জি, হাফ প্যান্ট পরা কয়েক জন যুবক। তাঁদের হাতে ১০ টাকার কুপন। গাড়ি বুঝে কাউকে কেটে দেওয়া হচ্ছে একটা কুপন তো কাউকে দু’টি বা তিনটি। টাকা না দেওয়া পর্যন্ত অবশ্য নিস্তার মিলছিল না চালকদের।
এ দিন দুপুরে সেই ছবি সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় বন্দি হওয়ার পরেই খবর যায় হাওড়া থানায়। খবর পেয়েই পুলিশ গিয়ে হাতেনাতে ধরে দুই যুবককে। হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘সত্যিই এটা একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সাদা পোশাকে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। পথচলতি কিংবা স্থানীয়েরাও যদি খবর দিয়ে সাহায্য করেন, তা হলে আরও ভাল হয়।’’
(নিজস্ব চিত্র)