পুলিশি-প্রহরায় প্রচার বিদায়ী পুরপ্রধানের

‘আতঙ্ক’ কাটিয়ে রবিবার পুলিশি পাহারায় পুরভোটের প্রচারে নামলেন বাঁশবেড়িয়ার বিদায়ী পুরপ্রধান তথা ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী রথীন্দ্রনাথ দাস মোদক। কীসের আতঙ্ক? নিজেরই দলের যে সব বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মী টিকিট না পেয়ে ‘নির্দল’ হয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে পড়েছেন, তাঁদের অনুগামীরা হামলা করতে পারে, এটাই আতঙ্ক বলে দাবি রথীন্দ্রনাথবাবুর। তাই পুলিশের শরণাপন্ন হয়েছেন তিনি।

Advertisement

তাপস ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৩৬
Share:

প্রচার মিছিলে বিদায়ী পুরপ্রধান রথীন্দ্রনাথ দাস মোদক।—নিজস্ব চিত্র।

‘আতঙ্ক’ কাটিয়ে রবিবার পুলিশি পাহারায় পুরভোটের প্রচারে নামলেন বাঁশবেড়িয়ার বিদায়ী পুরপ্রধান তথা ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী রথীন্দ্রনাথ দাস মোদক।

Advertisement

কীসের আতঙ্ক? নিজেরই দলের যে সব বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মী টিকিট না পেয়ে ‘নির্দল’ হয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে পড়েছেন, তাঁদের অনুগামীরা হামলা করতে পারে, এটাই আতঙ্ক বলে দাবি রথীন্দ্রনাথবাবুর। তাই পুলিশের শরণাপন্ন হয়েছেন তিনি।

পুরভোটের ঢাকে কাঠি পড়তেই বাঁশবেড়িয়া সরগরম হয়ে ওঠে শাসকদলের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা নিয়মিত সন্ত্রাসের অভিযোগে। ২৮ মার্চ মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন, শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে পুরসভার ২২টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে বিজেপি এবং সাতটিতে বামেরা প্রার্থী প্রত্যাহার করেন। বিরোধীরা কার্যত ময়দানছাড়া হতেই অভিযোগকারী বদলে যায়।

Advertisement

তৃণমূল সূত্রের খবর, ভোটের ঘোষণা হতেই দলের সদ্য অপসৃত ব্লক সভাপতি সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের (রাজাবাবু) গোষ্ঠী এলাকায় দলের নিচুতলার একাংশের মধ্যে রটিয়ে দিয়েছিল, তাঁর স্ত্রী শিল্পী চট্টোপাধ্যায় বাঁশবেড়িয়ার পরবর্তী পুরপ্রধান হবেন। রটনা কানে যেতে ক্ষুব্ধ হন বিদায়ী পুরপ্রধান রথীন্দ্রনাথ দাস মোদকের অনুগামীরা। তবে, দল শিল্পীদেবীকে টিকিট দেয়নি। রথীন্দ্রনাথ-ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ, এর পর থেকে দলেরই প্রার্থীদের হারাতে উঠেপড়ে লাগে রাজাবাবুর দলবল। নির্দল হিসেবে পাল্টা ‘প্যানেল’ দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। বাঁশবেড়িয়া জুড়ে চলতে থাকে সন্ত্রাসের বাতাবরণ। রাজাবাবুর নামে থানাতেও অভিযোগ জানান রথীন্দ্রনাথবাবু। রাজাবাবু অভিযোগ মানেননি। তাঁকে পদ থেকে অপসারণ করেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। শিল্পীদেবীকে পাঁচ বছরের জন্য সাসপেন্ড করে দল।

কিন্তু তার পরেও ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ যে থামেনি, তা মানছেন শহরের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশই। গত শুক্রবারই ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী অরিজিতা শীলের বাড়ি লক্ষ করে এক দল দুষ্কৃতী গুলি চালিয়ে পালায়। দলেরই চার কর্মীর নামে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। এই সব ‘অশান্তি’র মধ্যে অন্য তৃণমূল প্রার্থীরা বিক্ষিপ্ত ভাবে প্রচার শুরু করলেও রথীন্দ্রনাথবাবু এত দিন রাস্তায় নামেননি। তাঁর উপর হামলা হতে পারে, এই আশঙ্কায় পুলিশের কাছে প্রচারের সময় নিরাপত্তার আবেদন জানান।

পুলিশি ঘেরাটোপেই রবিবার সকালে জনা পঞ্চাশেক দলীয় কর্মী-সমর্থক এবং স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বৈকুন্ঠপুর থেকে মিছিল শুরু করেন রথীন্দ্রনাথবাবু। ঘোষপাড়া, কোঁচাটি, অসম লিঙ্ক রোড, ভট্টাচার্যপাড়া হয়ে সেনপুকুরে গিয়ে মিছিল শেষ হয়। গোটা পথে নজরদারি চালায় পুলিশ। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, হামলার আশঙ্কায় কোনও প্রার্থী যদি পুলিশি নিরাপত্তার আবেদন জানান, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কিন্তু কারা তাঁর উপরে হামলা করতে পারে?

পুলিশের কাছে এ নিয়ে কারও নামে কোনও লিখিত অভিযোগ জানাননি রথীন্দ্রনাথবাবু। তবে, সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমার ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থীর সমর্থনে একদল দুষ্কৃতী প্রচারে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। হুমকি দেওয়া হচ্ছিল, প্রচারে বেরোলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে। তাই প্রচারে বেরোতে পারছিলাম না।’’ অবশ্য শুধু নিজের কথা বলেই থামেননি রথীন্দ্রনাথবাবু। তাঁর আরও অভিযোগ, একই ভাবে দলের অন্য প্রার্থীদেরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কালো কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে ভোটারদেরও।

অভিযোগ উড়িয়ে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী পারিজাত ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘রথীনবাবু নিজেই যদি প্রচারে না বেরিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, তা হলে কিছু বলার নেই। আমরা ওঁর প্রচারে কোনও বাধা সৃষ্টি করছি না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement